ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

কচুয়ায় নির্মিত হল নান্দনিক ডিজাইনের আধুনিক মসজিদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
কচুয়ায় নির্মিত হল নান্দনিক ডিজাইনের আধুনিক মসজিদ

বাগেরহাট: বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম পদ্মনগরে নির্মিত হয়েছে নান্দনিক ডিজাইনের আধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্স। আধুনিক স্থাপত্য বিদ্যার সঙ্গে মুসলিম ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে তৈরি এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ সবাই।

 

পদ্মনগর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরদার জাহিদুল ইসলামের নিজস্ব অর্থায়নে ইজারা পদ্মনগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নামে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে।

শুক্রবার (০১ এপ্রিল) জুমআর নামাজের মধ্য দিয়ে এই মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের নায়েবে আমির শাইখুল হাদীস পীরে কামেল আল্লামা মুফতি মনসুরুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মসজিদের উদ্বোধন করেন।  

এসময় বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নকিব নজিবুল হক নজু, বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন, কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজ শিকদার, ইজারা পদ্মনগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি সরদার বজলুর রহমান, সভাপতির ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরদার জাহিদুল ইসলাম, খাদেমুল ইসলাম পদ্মনগর মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মুফতি মাওলানা ইমরান হোসাইন, ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খোকনসহ স্থানীয় দুই সহস্রাধিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। জুমআরা নামাজ শেষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা মুসল্লিদের মধ্যে দুপুরের খাবার বিতরণ করা হয়।

মসজিদের জমিদাতা ও বর্তমান সভাপতি সরদার বজলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইজারা ও পদ্মনগর দুই গ্রামের প্রধান মসজিদ এটি। দীর্ঘদিন এলাকার মানুষ এখানে নামাজ পড়তেন। মূল মসজিদটি অনেক পুরানো হয়ে যাওয়ায়, ২০১৮ সালে এই মসজিদের জমিদাতা সরদার বজলুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী সরদার জাহিদুল ইসলাম সবার সম্মতিতে এখানে আধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেন। অর্ধশতাধিক শ্রমিকের তিন বছরের চেষ্টায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। দুই তলাবিশিষ্ট এই মসজিদের অভ্যন্তরে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।  

এছাড়া বাইরে খোলা জায়গায়ও নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। আধুনিক এই মসজিদটির নকশা করেছেন বিল্ডিং ডিজাইনকারী প্রতিষ্ঠান রাশেদুল হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটেস-এর স্বত্বাধিকারী স্থপতি রাশেদুল হাসান। মসজিদের মূল ভবনের সামনে রয়েছে প্রশস্ত জায়গা, প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। মেঝে করা হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। মূলভবনের তিন পাশে লোহার গ্রিল দেওয়া হয়েছে। মসজিদের মেহরাব করা হয়েছে কাবার আদলে। মসজিদের পূর্ব এবং উত্তর পাশে রাস্তা এবং পশ্চিম পাশে পদ্মনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে কবরস্থান। পূর্বপাশে রাস্তার ওপারে ইসলামি পাঠাগার ও অজু খানা। মসজিদের অদূরে করা হয়েছে খাদেমুল ইসলাম পদ্মনগর মাদরাসা ও এতিমখানা। যেখানে হিফজ, কিরাআত ও কওমি শিক্ষা চালু রয়েছে। বর্তমানে মাদরাসাটিতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

মসজিদ নির্মাণের প্রধান মিস্ত্রি মো. বেলাল হোসেন বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কিন্তু এ ধরনের আধুনিক ডিজাইনের কাজ এই প্রথম করলাম। আমার আগে অনেক মিস্ত্রি এই ডিজাইন দেখে কাজ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। আর্কিটেক এবং জাহিদ স্যারের পরামর্শে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ভালোভাবে এই কাজ করার। আল্লাহর রহমতে কাজটি ভালো হয়েছে। কাজ দেখে সবাই খুশি হয়েছেন।

স্থানীয় শহিদুল ইসলাম, টুটুল, গনি শেখসহ কয়েকজন বলেন, এত সুন্দর মসজিদ আমরা কখনও দেখিনি। ইতোমধ্যে আমাদের এই মসজিদ দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসা শুরু করেছে। আমরা খুবই খুশি হয়েছি, এখানে এত সুন্দর মসজিদ নির্মাণ হওয়ায়।

খাদেমুল ইসলাম পদ্মনগর মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামিম মুফতি মাওলানা ইমরান হোসাইন বলেন, এই মসজিদটি অনেক পুরোনো। পুরোনো এই মসজিদকে ভেঙে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের জমিদাতা বজলুর রহমান সরদারের ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সরদার জাহিদুল ইসলাম নিজস্ব অর্থায়নের এই মসজিদ ও মাদরাসা তৈরি করেছেন। এখানে গরিব ও এতিম শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া এই মসজিদকে কেন্দ্র করে এখানে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ব্যবসায়ী সরদার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাবা এখানে মসজিদ ও কোরআন শিক্ষালয়ের জন্য জমি দান করেছেন। আমি শুধুমাত্র পুরাতন মসজিদটিকে একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছি। এখন এলাকার সবাই মিলে মসজিদ ও মাদরাসা চালাবে।

মসজিদ নির্মাণে ব্যয়িত টাকার পরিমাণ ও শ্রমিক সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত আল্লাহর রাজি খুশির জন্য এলাকার মানুষের উপকারে এই মসজিদ নির্মাণ করেছি। কত টাকা কি ব্যয় হয়েছে, সে বিষয়ে আমার হিসেব নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।