ঢাকা: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চাইছেন আগামী ১৫ মে দলের জাতীয় কাউন্সিল করতে। কিন্তু উল্টোরথে চলা রওশনের দাবি, আলোচনা করে নতুন তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
দলীয় সূত্র বলছে, রওশন শুধু একা হলে হয়তো এতোটা ভয় পেতেন না এরশাদ। কিন্তু তার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন সিনিয়র অনেক নেতাই। মন্ত্রিসভায় থাকা জাতীয় পার্টির তিন সিনিয়র নেতা ও ৪০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩৫ জনই রওশনের পেছনে একাট্টা। এরশাদের সঙ্গে রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন এমপি। এদের কেউ কেউ আবার রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়িষ্ণু জাপার বিশাল অংশকে বাইরে রেখে কাউন্সিলে সায় দিচ্ছেন না অনেকেই। যদিও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দ্রুত কাউন্সিল করার পক্ষে তৎপর। কারণ বিলম্বে কাউন্সিল হলে তার কপাল পুড়তে পারে। এরই মধ্যে তার বিষয়ে নেগেটিভ হতে শুরু করেছেন এরশাদ।
মহাসচিব নাকি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আশ্বস্ত করেছেন, কাউন্সিলে রওশন এরশাদও উপস্থিত হবেন। কোন সমস্যা করবেন না। এরশাদও সেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। মহাসচিবের এমন আশ্বাসের ভিত্তিতেই ১৫ মে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা দেন এরশাদ।
কিন্তু হঠাৎ করে সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলের তারিখ পেছানের দাবি ওঠায় মহাচিন্তায় পড়েছেন এরশাদ। এখন এরশাদ তার জিদ বহাল রাখবেন, নাকি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখবেন সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
রওশনপন্থি বলে পরিচিত এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেছেন, এরশাদ যদি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন, তাহলে আমরাও কঠোর হতে দ্বিধা করবো না। প্রয়োজনে রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করা হবে।
অবশ্য বিষয়টি এখন অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। কারণ, সম্প্রতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ঘোষণা করলে পাল্টা বিবৃতি আসে গণমাধ্যমে। সেখানে রওশন এরশাদকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।
বিগত নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টিতে প্রকাশ্য দু’টি ধারা বিদ্যমান। এরশাদের কোন কর্মসূচিতে সাড়া দিচ্ছেন না রওশনপন্থিরা। কিন্তু রওশন এরশাদ ডাক দিলেই হাজির হচ্ছেন সদলবলে। এরশাদ এ বিষয়ে একাধিক বার হুমকি ধামকি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। এমনকি বহিষ্কারের হুমকি দিলে তাতেও পাত্তা দিচ্ছেন না সংসদ সদস্যরা।
জাতীয় পার্টি আগেও ভেঙ্গেছে। কিন্তু সেই প্রেক্ষাপট আর এই প্রেক্ষাপট এক হিসেবে দেখতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। এবার দল ভাঙলে সাধের লাঙ্গল হাত ছাড়া হতে পারে এরশাদের। কারণ সংসদ সদস্যরা রওশনের পেছনে। লাঙ্গল প্রতীক যে রওশনের ভাগে পড়তে পারে এটা নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছেন অনেকে।
তারা জানিয়েছেন, এমনিতে এমপিরা তার পক্ষে। সে দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে রওশন। আবার সরকারের পক্ষ থেকেও সমর্থনের বিষয়ে রওশনের পাল্লাই ভারী থাকবে। কারণ বিগত নির্বাচনে রওশন সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে লাঙ্গল নিয়ে টানাপড়েন ইস্যুতে যে রিট দাখিল করা হয়েছিল, তারও বাদী ছিলেন রওশন এরশাদ। রায়ে রওশনের হাতেই লাঙল প্রতীক তুলে দেওয়া হয়। রায়ে যেহেতু রওশন এরশাদের নাম উল্লেখ রয়েছে সে কারণে লাঙল রওশন পাবেন এমনটাই মনে করছেন রওশনপন্থিরা।
তারা জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের পর মহিলা এমপিদের মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এরশাদ এককভাবে মহিলা এমপি মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে রওশনের তালিকা থেকে মহিলা এমপি মনোনয়ন দেয় ইসি।
যন্ত্রণার এখানেই শেষ নয়, কোনোভাবে রওশন এরশাদকে বাগে আনলেও আওয়ামী ঘনিষ্ঠ সিনিয়র অনেক নেতাই বেঁকে বসতে পারেন। রওশন এরশাদ রাজি না হলে তারাও পৃথক জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
সব মিলিয়ে একরোখা এরশাদ খানিকটা ভয়েই আছেন। এ কারণে ঘোষিত তারিখে আদৌ কাউন্সিল হচ্ছে কি-না তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। আর সংশয় দুরাশার কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে কাউন্সিলের প্রস্তুতি।
কাউন্সিলের আর মাত্র ১৯ দিন বাকি রয়েছে। এমন সময়ে পোস্টারে পোস্টারে দেশ ছেয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও কাউন্সিলের কোন পোস্টার চোখে পড়েনি। সোমবার (২৫ এপ্রিল) জেলায় জেলায় এক হাজার করে পোস্টার ও পোস্টার লাগানোর জন্য এক হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু অনেক জেলা থেকেই খবর এসেছে তাতে না-কি ৮’শ পোস্টারই কম রয়েছে। এই সামান্য সংখ্যক পোস্টার দিয়ে জেলা কভার করার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে অনেকেই বর্তমান মহাসচিবের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
এসআই/জেডএম