ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয় পার্টি

রওশনই হচ্ছেন বিরোধী দলীয় নেতা, সরকারেও থাকছে জাপা! 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৯
রওশনই হচ্ছেন বিরোধী দলীয় নেতা, সরকারেও থাকছে জাপা! 

ময়মনসিংহ: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার ১২টি আসন কম পেয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তবে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি তথা তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চেয়ে জাপার প্রাপ্ত আসন সংখ্যা তিনগুণ বেশি। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত বিরোধী জোটের মতো করুণ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি বিগত সংসদের বিরোধী দলটিকে। 

এমন অবস্থায় সবার মনেই প্রশ্ন, একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে? তারা কি গতবারের মতো বিরোধী দলের আসন নেওয়ার পাশাপাশি সরকারেরও অংশ হবে, নাকি কেবল বিরোধী দলের হয়েই সরব থেকে সচল রাখবে সংসদ? 

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বাংলানিউজ কথা বলে জাপার বেশ ক’জন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে। তারা জানান, দশম জাতীয় সংসদের মতো এবারো দ্বৈত ভূমিকায় অর্থাৎ ‘ঐকমত্যের সরকারের’ পাশাপাশি বিরোধী দলেও অবস্থান থাকতে পারে জাপার।

এক্ষেত্রে বিরোধী দলীয় নেতা হতে যাচ্ছেন দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদই। দলটির প্রভাবশালী নেতারাও তার পক্ষে অনড় অবস্থান নিয়েছেন।

এর পাশাপাশি সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদের আন্তরিক সম্পর্ক, দশম জাতীয় সংসদে তার রেকর্ড ২৪১ দিনের উপস্থিতির পাশাপাশি গতিশীল ও প্রাণবন্ত সংসদ উপহার দিতে কার্যকর ভূমিকার জন্যই বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তাকেই অধিকতর যোগ্য মনে করা হচ্ছে।  

সংসদে বিরোধী দল হতে হলে কতো আসনে জয়ী হতে হবে, দেশের আইনে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একই রকম বাধ্যবাধকতা নেই সংবিধানেও। ফলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের পরের অবস্থান বিবেচনায় জাতীয় পার্টিই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হতে যাচ্ছে, তা এক প্রকার নিশ্চিতই।  

বিরোধী দল কে হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বুধবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় পার্টির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘অপজিশনতো আছেই। অপজিশন গতবারও তো ছিল, তারাতো (জাতীয় পার্টি) আছেন। ’ 

অবশ্য একই দিনে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠক শেষে জাপার কো-চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের অবর্তমানে তার ভূমিকা পালনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জিএম কাদের বলেছেন, ‘মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির অবস্থান বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে নতুন এমপিদের শপথ অনুষ্ঠানের পর পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠক হবে। সেখানেই জাপার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। ’

সূত্র মতে, সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত আসন না পেয়ে এখনো তীব্র মনোকষ্টে রয়েছেন জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে নিজে রংপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় না গেলেও ওই সময় নির্বাচনের জন্য ময়মনসিংহে অবস্থানরত স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল তার।  

নিজের পাশাপাশি স্বামী এরশাদের আসনের দিকেও ওই সময় বিশেষ দৃষ্টি রেখেছেন রওশন নিজের উদ্যোগেই। নির্বাচনে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টকে ছাড়িয়ে ২২টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জিতে আসেন। যদিও নির্বাচনের পর এরশাদ তার অবর্তমানে ভাই জিএম কাদেরকে দলটির ভবিষ্যত নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন।

অনেকেই মনে করছেন, এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে দলের প্রধান এরশাদ ছোট ভাই কাদেরকেই একাদশ সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দেখার মনোবাসনা প্রকাশ করেছেন। তবে জাপার বেশিরভাগ সিনিয়র নেতার সঙ্গে জিএম কাদেরের দূরত্ব এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সরকারকে বিপাকে ফেলে দেওয়ায় তার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

জাতীয় পার্টির অনেক নেতা-কর্মীই মনে করেন, দলের চেয়ারম্যান ও দলটির কয়েকজন সংসদ সদস্য চাইলেই বিরোধী দলীয় নেতা নির্ধারণ করতে পারবেন না। এটা সংসদের প্রধান দল আওয়ামী লীগের পছন্দের ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করে।  

দশম জাতীয় সংসদে সংকটময় মুহূর্তে রওশন এরশাদের ‘ত্রাতা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আন্তরিকতা-ঘনিষ্ঠতাই বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দৌড়ে যোজন যোজন এগিয়ে রাখছে জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানকে।

সূত্র মতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরের দিন সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় চলে যান রওশন এরশাদ। মূলত ওই সময়ই বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার সবুজ সংকেত পান তিনি।  

প্রথম দিকে তিনি এই পদে ফের দায়িত্ব পালনে খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও দলের প্রয়োজনেই ‘ছায়া সরকার’ প্রধানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে নব-নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।

রওশনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্যারের (এরশাদ) শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আমার মনে হয় নেত্রীই (রওশন) বিরোধী দলীয় নেতা হবেন। তবে পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে সব চূড়ান্ত হবে। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৯ 
এমএএএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।