ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয় পার্টি

গতবারের মতো এই সংসদেও ‘কার্যকর ভূমিকা’ রাখতে চান রওশন

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
গতবারের মতো এই সংসদেও ‘কার্যকর ভূমিকা’ রাখতে চান রওশন

ময়মনসিংহ: দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিরল অনেক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদে পালন করেছিলেন বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব। দেশের একমাত্র বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তিনিই প্রথম সংসদ বর্জন না করার নজির রেখেছেন। স্থাপন করেছেন সরকারকে সহযোগিতার দৃষ্টান্তও। 

নিজে যেমন সরকারকে ভালো কাজে সাধুবাদ জানিয়েছেন, তেমনি ‘গঠনমূলক ভূমিকার’ জন্য পেয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসাও। গত সংসদে উপস্থিতির দিক থেকেও প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পরেই ছিলো তার অবস্থান।

এই তিনি রওশন এরশাদ। বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ২৪২ কার্যদিবস সংসদে উপস্থিত থেকে ইতিবাচক রাজনীতির অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় রওশনকে।

সংসদের প্রধান বিরোধীদল দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেকে একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন। উপনেতার দায়িত্ব তুলে দেন ছোট ভাই ও দলীয় কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের কাঁধে।  

রওশন মাথা পেতে নেন এমন সিদ্ধান্ত। কেবল ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য পদ ছাড়া সব রকমের স্ট্যাটাস হারান তিনি।  

তবে বেশি দিন না যেতেই এরশাদ তার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন। নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা, কো-চেয়ারম্যান ও উপনেতা হিসেবে জি এম কাদেরের ‘ব্যর্থতা’, উপজেলা নির্বাচনে দলকে টেনে তুলতে না পারা, দলটির সিনিয়র নেতাদের ঐক্যবদ্ধ না করে বরং তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরিসহ নানা কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত বদল করেন।

শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেন জিএম কাদেরকে। ১৮ ঘণ্টার মাথায় শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও সরিয়ে দেন এরশাদ।

অপরদিকে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা মনোনীত করে তিনি স্পিকারকে চিঠি দেন। এরশাদের এই সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড বুঝিয়ে দেয়, তার অবর্তমানে পার্টির নেতৃত্ব দিতে পারেন রওশনই।

পার্টি চেয়ারম্যানের আস্থার এই প্রকাশে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রওশনও। তার অনুসারী নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা ও সিনিয়র নেতাদের মধ্যকার বন্ধন মজবুত এবং বিভেদ-কোন্দল দূর করতে চেয়ারম্যান এরশাদের সময়োপযোগী এমন সিদ্ধান্ত প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।

দশম জাতীয় সংসদে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার সঙ্কটময় মুহূর্তে ‘দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার স্বার্থে’ জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদলের কাতারে নিয়ে আসেন রওশন এরশাদ। সেজন্য তার সঙ্গে বরাবরই গভীর হৃদ্যতা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও রওশন এরশাদের ধীর-স্থির মনোভাব এবং নীতিতে অটল থাকায় তাকে পছন্দ ও বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী।  

গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক ভরাডুবি হলেও রওশনের ভূমিকার কারণে ২২টি আসনে জিতে আসতে পারে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। যদিও প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল, রওশনই দ্বিতীয়বারের মতো বিরোধীদলীয় নেতার আসন অলংকৃত করবেন। কিন্তু এরশাদই এই দায়িত্ব নিতে চাওয়ায় নিজেকে গুটিয়ে নেন রওশন।  

শেষ পর্যন্ত আবারও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত হলেও দায়বোধ মাথায় রাখছেন রওশন। তিনি বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দশম জাতীয় সংসদে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারার সূত্রপাত করেছিল জাতীয় পার্টি। আমরা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করেছি আবার ইতিবাচক কাজের বা সাফল্যেরও প্রশংসা করেছি। আমরা এই সংসদকেও গতিশীল ও প্রাণবন্ত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চাই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
এমএএএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।