এসব অভিযোগে মঙ্গলবার (৩০ জুন) রাতে উপজেলা পরিষদের হলরুমে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনও করেন। এর আগে একই দিন সন্ধ্যায় উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এমপির বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল ও পথসভা করেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন উপজেলা পরিষদের সব কাজে স্থানীয় এমপি ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করেন।
এ সময় অভিযোগ করা হয়, এডিপির টেন্ডার এমপির হস্তক্ষেপে বাতিল করা হয়। এমপির হুমকির কারণে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এডিপি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারেননি। বর্তমান ইউএনও ঊর্মী ভৌমিক দায়িত্ব গ্রহণের পর এমপির হুমকি ও পরামর্শে এডিপি বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটান।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) ওই উপজেলায় এডিপির আওতায় ১২ প্যাকেজের প্রায় ৬১ লাখ টাকার একটি টেন্ডার হয়। ওই টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ এনে ও ওই টেন্ডার বাতিলের দাবিতে স্থানীয় ঠিকাদাররা পরের দিন শুক্রবার (২৬ জুন) বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ জসীমের অপসারণ দাবি করেন তারা। ওই টেন্ডার কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে স্থানীয় ঠিকাদার মো. লোকমান হোসেন খানের পক্ষে গত ২৯ জুন পিরোজপুর জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট নারায়ণ চন্দ্র বেপারী ওই টেন্ডারের প্রজেক্ট সিলেকশন কমিটির সভাপতি, সদস্য ও সদস্য সচিবকে লিগ্যাল নোটিশ দেন। গত ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে টাকা তোলার বিধান থাকলেও এসব সমস্যার কারণে ওই কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় কাজের টাকা ৩০ জুন ফেরত যায়।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর-৩ আসনের এমপি ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন,
ওই ঠিকাদারি কাজে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। আমি স্থানীয় এমপি সত্য, কিন্তু ওই কাজের একটি কমিটি আছে। তাতে উপজেলা চেয়ারম্যান সিলেকশন কমিটির সভাপতি, ইউএনও সদস্য ও উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সদস্য সচিব। আর ওই কাজের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ এনে স্থানীয় এক ঠিকাদারের পক্ষে তার আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশে ওই কাজের টেন্ডার নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমার কোনো হাত নেই। তাছাড়া আমি এখন ঢাকায় আছি। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতরা আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে করোনা রোধে জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে মিছিল করেছেন।
স্থানীয় ঠিকাদার লোকমান হোসেনসহ দরপত্রে অংশ নেওয়া অন্য ঠিকাদারদের অভিযোগ, আরএফকিউ পদ্ধতিতে সিডিউল বিক্রি বা দরপত্র জামানত বাবদ কোনো টাকা নেওয়া যায় না। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী ৯৪ সেট ফরমের প্রতিসেটের মূল্য বাবদ সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকার রশিদ দেন। এছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে শুধু ওই কাজে মঠবাড়িয়ায় নিবন্ধনকৃত ঠিকাদাররা অংশ নিতে পারবেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। যা পিপিআর বহির্ভূত। এছাড়া ওই টেন্ডারের নোটিশে গত ১৮ জুন (বৃহস্পতিবার) উপজেলা প্রকৌশলী স্বাক্ষর করেন। ওই নোটিশে স্বাক্ষরের পর দু’দিন সরকারি ছুটি থাকার পর ২১ ও ২২ জুন রবি ও সোমবার প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে সিডিউল বিক্রি করে। কিন্তু বিধি মোতাবেক কোনো দরপত্র আহ্বান করা হলে কমপক্ষে ১০ দিন সিডিউল বিক্রির সময় দিতে হয়।
উল্লেখ্য, পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন উপজেলার বর্তমান
চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিনের ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো.
আশ্রাফুর রহমান। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট থাকায়
ওই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীকে। পরে ওই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা চেয়ারম্যান হন
রিয়াজ উদ্দিন। আর এরপর থেকে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপির
মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জের ধরে এমপির বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তি, তার গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
এর আগে ওই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দু’টি গ্রুপের একটির নেতৃত্ব দেন ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ফেরদাউস ও অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আশ্রাফুর রহমান। এ বিরোধের জেরে সেখানে যুবলীগ নেতা লিটন পন্ডিত ও স্বেচ্ছা সেবক লীগ জনি তালুকদার খুন হন। ওই দুই হত্যা মামলায় পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন আহম্মেদ ফেরদাউসকে আসামি করা
হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এ গ্রুপিংয়ের অবসান ঘটিয়ে সবাই এমপির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন।