ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

দুর্গাপূজায় শিশুরা

আনোয়ারুল করিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১০
দুর্গাপূজায় শিশুরা

দুর্গাপূজা শেষ। তোমরা কেউ কেউ হয়তো বাবা-মা’র হাত ধরে পুজোর মণ্ডপে গিয়েছিলে।

তোমরা কি দেখেছো, অষ্টমীর দিন সকালে তোমাদেরই মতো একটি ফুটফুটে মেয়ে রামৃকষ্ণ মঠে ‘দেবী’ হয়ে বসেছিল? আজকে তোমাদের ওই শিশুটির দেবী হয়ে ওঠার গল্পই শোনাবো।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে এবার কুমারী দেবী দুর্গার প্রতীক করা হয় ছয় বছর চার মাসের অনুশ্রী চক্রবর্তীকে। অনুশ্রীর শাস্ত্রীয় নাম ঊমা। সে থাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে। গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে অনুশ্রী। গত শুক্রবার অনুশ্রীকে কুমারী দেবী করা হলেও ওই কাজের জন্য রামকৃষ্ণ মিশন থেকে ছয় মাস আগেই তাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।

ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে শুক্রবার সকাল ১১টা ১ মিনিটে কুমারী অনুশ্রীকে কুমারী দেবী হিসেবে মণ্ডপে আনা হয়, দশভূজা দেবী দুর্গার প্রতিমার সামনেই বসানো হয় তাকে । এ সময় ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, কাঁসরঘণ্টায় মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গণ। শত শত ভক্ত ‘দেবী মাঈ কি জয়! দেবী মাঈ কি জয়!’ বলে কুমারী দেবীর আগমনবার্তা সবাইকে জানিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে দীর্ঘ প্রণামের মাধ্যমে  প্রতীক্ষার অবসান ঘটান মণ্ডপে আসা লাখো পুণ্যার্থী। তারা যে সকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন। ১১টা ৩৮ টা মিনিট পর্যন্ত হয় কুমারী পূজা।

পূজা শেষে পুষ্পাঞ্জলি ও প্রার্থনায় অংশ নেন পুণ্যার্থীরা। কুমারী পূজায় দেবীর মঞ্চে অধিষ্ঠানের আগে মন্ত্রোচ্চারণ ও ফুল-বেলপাতার আশীর্বাদ পৌঁছে দেওয়া হয় সবার কাছে। কুমারী পূজার ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় এবং অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস-এ ৫টি উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পূজা করা হয়।

কুমারী পূজার দিনটিতে রামকৃষ্ণ মিশন মাঠে তোমাদের বয়সী অনেক শিশুই বাবা-মার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মাইকে ঘোষণা এবং কান্নাকাটির পর তারা আবারো হাসতে হাসতে মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেছে।

পুজোয় এসে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে কলকাতার কয়েকটি মণ্ডপে অবশ্য চমৎকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবার। সেখানে শিশুদের দেওয়া হয় পরিচয়পত্র । মণ্ডপে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মার কাছ থেকে ওই পরিচয়পত্র লিখে নিয়ে শিশুদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারটি এখানেও চালু করা গেলে মন্দ কি?

কুমারী পূজায় শিশুরা কেন? এ প্রশ্ন কি কখনো তোমাদের মনে এসেছে?

তাহলে এই পূজার ইতিহাসটা একটু জেনে নেয়া যাক, কি বল?
১৩০৮ বঙ্গাব্দে কুমারী পূজা প্রথম শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেইসময় কলকাতার বেলুড় মঠে তিনি ৯ জন কন্যা শিশুকে নিয়ে এ পূজা চালু করেছিলেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকেই দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিনে কলকাতার বিভিন্ন বনেদী বাড়িতে এই পুজোর আয়োজন করা শুরু হলো। এরপর ধীরে ধীরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে এ পূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরই ধারবাহিকতা চলছে এখনো ।

সুতরাং এবার যদি কুমারী পূজা দেখার সুযোগটা কোনো কারণে হারিয়েও থাকো, আগামী পূজার জন্য তৈরী থেকো কিন্তু।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।