ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো উৎসব

এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার অভিযান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১০
এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার অভিযান

২০০৫ সালের ২৮ জুলাই ‘মুক্তিযুদ্ধ উৎসব বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে জামালপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো উৎসব। ’ উৎসবে গল্প শোনান দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

এতে এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার অভিযান নিয়ে গল্প বলেছিলেন মেজর (অব:) হামিদুল হোসেন তারেক বীরপ্রতীক। শিশুদের জন্য তার গল্পটি লিখিত আকার ইচ্ছেঘুড়ির পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা-

আমি যখন মুক্তিযুদ্ধে যাই, তখন আমার বয়স ছিল ১৯। আর এই বয়সেই আমি একটি ক্যাম্পের কমান্ডার হয়েছিলাম। আমি ওই অল্প বয়সে হয়তো ভাল যুদ্ধ করেছিলাম, সেজন্য হয়তো কমান্ডার হতে পেরেছিলাম। আমার সাথে আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় এবং অনেক কিশোরও যুদ্ধ করেছে। ঠিক এরকমই ১২ বছরের এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার গল্পই আজ তোমাদের শোনাবো। আমি তখন ছিলাম পশ্চিম দিনাজপুরের ৭নং সেক্টরের একটি ক্যাম্পে। একদিন ক্যাম্পে বসে আছি, হঠাৎ দেখি কান্নার শব্দ। আমি তাবু থেকে বাইরে এসে দেখি আমার সহযোদ্ধারা এক কিশোরকে মারছে। আমি বললাম, ওকে মারো কেন? একজন বলল, স্যার এ চোর। আমাকে দেখে ছেলেটা দৌঁড়ে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো এবং বলল, ‘আমি আসলেই চোর স্যার। আমার বাবাও চোর ছিল। মিলিটারীরা তাকে মেরে ফেলেছে। তাই আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। ’ আমি তাকে বললাম, তুই কিভাবে যুদ্ধ করবি। তোর চেয়ে তো রাইফেলের ওজনই বেশি। সে তখন বলল, না স্যার, আমি পারবো। তারপর আমি আমার সহযোদ্ধাদের বললাম, ওকে ট্রেনিং দাও। ট্রেনিংয়ের পর ও কিশোরটি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কয়েকটি অপারেশনে গেল। মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন থেকে ফিরে এসে বলল, ও ভাল যুদ্ধ করে। খুব সাহসী। নভেম্বরের মাঝামাঝি আমরা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী মিলিত ভাবে আক্রমন করতে যাবো পশ্চিম দিনাজপুরের মোহনপুরে। আমার সাথে তখন ওই কিশোরটাও ছিল। ওর নাম ছিল সোলায়মান। আমরা ‘সলো’ বলে ডাকতাম। আমরা যখন আক্রমনের স্থান থেকে ১০০ গজ দূরে, তখন ভারতীয় মেজর বললেন, আর যাওয়া যাবে না। তিনি বললেন, আমরা এখান থেকে বাইনোকুলার দিয়ে দেখবো। তখন সলো আমাকে বলল, মেজর সাহেবের কথা রাখেন তো। আমি গিয়ে দেখে আসি ওরা কি করছে? মেজর সাহেব বললেন, না না এখনই মারা যাবে। সলো কথা না শুনে রাইফেলটা আমার কাছে দিয়ে চলে গেলো। যাবার সাথে সাথে পাকিস্তানী আর্মির গুলির শব্দ শোনা গেলে। আমরা তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট পর সলো ফিরে আসলো। সে আমাকে বলল, আমি তো চোর মানুষ স্যার। ব্যাংকারে ঢুকে ট্রানজিস্টর ও রাইফেল দুটি চুরি করে এনেছি। আর ব্যাংকারে একটি গ্রেনেড রেখে এসেছি। যে ব্যাংকারে ঢুকবে সাথে সাথে মারা যাবে। মেজর সাহেব তো অবাক। আমি বললাম, সলো কেমনে পারলি? সলো বলল, আমার ১০ বছরের চুরি করার অভিজ্ঞতা আছে না স্যার।

শ্রুতিলিখন: আরিফুল ইসলাম আরমান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।