ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

তুরির ভাগ্য

মীম নোশিন নাওয়াল খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৪
তুরির ভাগ্য

অনেক অনেকদিন আগের কথা। একটা গ্রামে একটা ছোট্ট মেয়ে থাকত।

ওর নাম ছিল তুরি। খুব ছোটবেলায় তুরির মা মারা গিয়েছিল, আর ওর বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে অন্য দেশে চলে যায়। চাচার বাড়িতে থাকত তুরি। তার চাচা-চাচি তাকে একদম পছন্দ করত না। কিন্তু গ্রামের লোকজন মন্দ কথা বলবে বলে তাকে বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিল তারা।

তুরিকে তার চাচার বাসায় কাজের মেয়ের মতো থাকতে হতো। তার চাচার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েটার নাম হানা। হানা আর তুরি সমবয়সী। হানার পুরনো ছেঁড়া জামাগুলো তুরিকে পরতে হতো। হানা স্কুলে যেত, কিন্তু তুরিকে স্কুলে পাঠাত না তার চাচা-চাচি। আসলে তুরিকে তারা বাড়ির বাইরেই পাঠাত না। তাদের ধারণা ছিল বাড়ির বাইরে গেলে তুরি তার সত্যিকারের অবস্থার কথা সবাইকে বলে দেবে, আর তখন তার চাচা-চাচীকে খারাপ বলবে লোকে।

তুরির সঙ্গে গল্প করার কেউ ছিল না। সে গল্প করার সময়ও পেত না। সারাদিন চাচা-চাচি আর হানার ফরমায়েশ খাটতে হতো তাকে। সকালে হানা জেলি আর পাউরুটি খেয়ে স্কুলে যেত, আর তুরির জন্য জুটত আগের দিনের একটা বাসি রুটি শুধু। দুপুরে সবার খাবার রান্না করত সে, কিন্তু তাকে দুপুরবেলায় কখনোই খেতে দেওয়া হতো না। রাতের বেলায় সবার খাওয়া শেষে যে উচ্ছিষ্ট থাকত, সেটাই খেতে হতো তুরিকে। অনেক রাতে সব কাজ গুছিয়ে তুরি অন্ধকার চিলেকোঠায় চলে যেত। ওখানেই ইঁদুর, ছুঁচো আর মশার সঙ্গে তার থাকার ব্যবস্থা ছিল। এভাবেই তুরির দিন কেটে যাচ্ছিল।

একদিন সে দেশের রাজা ছদ্মবেশে বের হলেন রাজ্য পরিদর্শনে। ঘুরতে ঘুরতে রাত হয়ে এলো। রাজা ভাবলেন, কোনো বাড়িতে পথিকের বেশে আশ্রয় নেবেন। তাহলে সে বাড়ি থেকে গল্পের ছলে দেশের মানুষের অবস্থার কথাও জানা হয়ে যাবে। তুরির চাচার বাড়িটা দেখে সেখানেই এগিয়ে গেলেন রাজা। দরজায় টোকা দিয়ে বললেন, বাড়িতে কেউ আছেন? আমি এক ক্লান্ত পথিক, একটা রাত এখানে কাটাতে দেবেন আমায়?

সে সময়ে ভাবা হতো পথিকদের তাড়িয়ে দিলে গৃহস্থের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়, আর তাদের আপ্যায়ন করলে আর্থিকভাবে উন্নতি হয়। তাই তুরির চাচা-চাচী খুব যত্ন-আত্তি করল ছদ্মবেশী রাজার। রাতে তার থাকার ব্যবস্থাও করে দিল। পথিকবেশী রাজার সামনে তুরির সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করল ওরা। তুরিকে পরাল হানার নতুন জামা। খেতে দিল ভালো খাবার আর থাকতে দিল হানার সাথে। কারণ তুরিকে যদি কাজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় দেয় তাহলে গ্রামের লোক সত্যি কথা বলে দিতে পারে এবং তুরির সত্যি অবস্থাও জেনে যেতে পারে।  

রাতে রাজা যখন ঘুমোতে যাবেন, তখন পাশের ঘর থেকে তুরি আর হানার কথোপকথন শুনতে পেলেন। হানা তুরিকে বলছে, তুমি তোমার নোংরা হাতে আমার কোনো জিনিস ছোঁবে না। আর আমার সাথে শোবে না। নিচে শোও তুমি।

রাজা বুঝতে পারলেন তুরির চাচা-চাচির চালাকি এবং তাদের আসল রূপ। কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না। পরদিন সকালে তিনি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

রাজপ্রাসাদে ফিরে নিজের লোকজনদের দিয়ে তুরিকে প্রাসাদে নিয়ে এলেন রাজা। তার একটি ছেলে ছিল, কোনো মেয়ে ছিল না। রাজা ঘোষণা করলেন, তুরি এখন থেকে তার মেয়ে। আরো বললেন, বড় হলে রাজকুমারের সঙ্গে তুরির বিয়ে হবে। আর তুরির চাচা-চাচি ও হানাকে দেশ থেকে বের করে দিলেন। এরপর থেকে সুখে-শান্তিতে কাটতে লাগল তুরির দিনগুলো।   

ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।