ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

‘এমআইএম ’ মানে কি?

মহিউদ্দীন আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪
‘এমআইএম ’ মানে কি?

ব্ল্যাকবোর্ডে একটি অদ্ভুত ছবি আঁকা। ছবির মানুষটির এক হাতে বেত আর অন্য হাতে ডাস্টার।

মোটা ফ্রেমের চশমাটি কপালে উঠানো। কান দুটো লম্বা হয়ে নেমে এসেছে ঘাড় পর্যন্ত। চেহারায় রাগী ও বিরক্ত ভাব। মাথার চুলগুলো এলোমেলো। খাঁড়া খাঁড়া। সেখানে একটি পাখির বাসা। বাসায় দুটি ছানা। একটি মা পাখি তার ছানা দুটিকে আধার খাওয়াচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা: এমআইএম।
 
এটি মধু স্যারের ছবি। এঁকেছে ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে বিল্টু।
বিল্টু শুধু মধু স্যারের ছবি এঁকেই ক্ষান্ত দেয়নি। ঠিক মধু স্যারের মতো চেয়ারে বসে, তার মতোই বেত নাড়িয়ে নাড়িয়ে পড়াচ্ছে। ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।   
টেবিলে সজোরে বেতের বাড়ি দিয়ে ধমকের সুরে বিল্টু বলল, ‘বাচ্চারা, হাসাহাসি বন্ধ, কথা বলা বন্ধ! মন দিয়ে পড়। ’
ছেলে-মেয়েরা একযোগে বলে উঠল, ‘কি পড়ব স্যার!’
বিল্টু বলল, ‘পড়- কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং চুলের এ কি দশা। ’
ছেলে-মেয়েরা বলল, ‘কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং চুলের এ কি দশা। ’
বিল্টু বলল, ‘মাথা ভর্তি গোবর শুধু তাই তো এমন দশা!’
ঠিক তখনই দরজায় হাজির হলেন মধু স্যার। স্যারকে দেখে কেউ আর মুখ খুলল না। বিল্টুও চড়–ই পাখির মতো ফুড়–ৎ করে নিজের সিটে গিয়ে বসল।  
মধু স্যার ক্লাসে ঢুকে মাথা দুলিয়ে বললেন, ‘উঁহু, পালালে তো চলবে না। পড়াতে হবে!’
বিল্টু ভয়ে ভয়ে দাঁড়াল।
মধু স্যার বললেন, ‘বাংলা তো ভালোই পড়ালি। এবার অংক পড়া। না পারলে বেতিয়ে একেবারে লম্বা করে দেব। ’

বিল্টু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
মধু স্যার ধমক দিয়ে বললেন, ‘চুপ করে আছিস কেন? জলদি পড়া বলছি। ’
বিল্টু বলল, ‘বাসায় দুটি পাখি ছিল। মা পাখিটা এল। মোট তিনটি পাখি হলো। ’
মধু স্যার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘আচ্ছা বেশ। এবার ইংরেজি। ’
বিল্টু বলল, There is a nest. Two baby birds are threre.
মধু স্যার এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললেন, ‘তা পাখির বাসাটি কোথায়?’
বিল্টু ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্যার মাথায়। ’
মধু স্যার অবাক হয়ে বললেন, ‘মাথায়!’-বলে তিনি তার নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘কার মাথায়?’
বিল্টু হাতের ইশারায় ব্ল্যাকবোর্ড দেখাল।
ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে মধু স্যারের চোখ তো ছানাবড়া। একি! এ যে তাঁরই ছবি!

নিজের ছবি দেখে মধু স্যার প্রচণ্ড রেগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘স্যারের সাথে দুষ্টুমী! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। আজ তোর একদিন কী আমার একদিন। ’

বিল্টু লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র। মধু স্যার বেত দোলাতে দোলাতে দ্রুত বিল্টুর কাছে গেলেন। ছেলে-মেয়েরা ভয়ে কাঠ হয়ে আশু ঘটনা দেখার জন্য তাকিয়ে রইল। কারো চোখে পলক পড়ল না।  
বিল্টুও নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে স্যারের সামনে হাত পেতে দিল।

কিন্তু ঘটনা যা ঘটার কথা তা না ঘটে উল্টো ঘটল।
মধু স্যার বিল্টুর হাতে বেত না মেরে কী মনে করে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকালেন। দূর থেকে নিজের ছবিটি দেখে অবাক হয়ে গেলেন। বিল্টুকে বললেন, এক্ষুণি ছবিটা খাতায় এঁকে দেখাতে হবে।
 
বিল্টু তৎক্ষণাৎ ছবিটি খাতায় আঁকল। স্যার সেটি নিয়ে নিলেন এবং সবার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘বিল্টু খুব সুন্দর ছবি এঁকেছে। এটি আমি আমার রুমে বাঁধাই করে রাখব। ’
বিল্টু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরাও অবাক হয়ে গেল।

ঠিক তখন মধু স্যার লক্ষ্য করলেন, ব্ল্যাকবোর্ডের ছবিতে ক্যাপশন আছে কিন্তু খাতার ছবিতে ক্যাপশন নেই। তাই তিনি বিল্টুকে ক্যাপশন দিয়ে দিতে বললেন।
বিল্টু একই ক্যাপশন দিলো,- এমআইএম।
মধু স্যার বললেন, ‘এমআইএম মানে কি?’
বিল্টু একদমে বলল, ‘এম ফর মোমিনুল, আই ফর ইসলাম অ্যান্ড এম ফর মধু!


ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।