ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

চিৎকার | চান্দ্রেয়ী পাল মম

গল্প / ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪
চিৎকার | চান্দ্রেয়ী পাল মম

অন্ধকার রাত। মারুফ হোসেন তার মোটর সাইকেল চড়ে বাড়ি ফিরছেন।

তিনি একজন পুলিশ অফিসার। আজ ডিউটির কারণে ফিরতে ফিরতে তার প্রায় রাত সাড়ে বারোটা বেজেছে। তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা দিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ কী যেন হলো, মোটর সাইকেল কেমন একটা শব্দ করে চলা বন্ধ করে দিলো। তিনি বিরক্ত হয়ে নেমে দেখতে লাগলেন কী সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন ধরেই এমন জ্বালাতন করছে সাইকেলটা। মারুফ চিন্তা করলেন কালই একবার ঠিক করতে দেবেন। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর মোটরসাইকেলটা স্টার্ট হলো। হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন একটি চিৎকার। তার কাছে মনে হলো যেন কোনো মেয়ে আতঙ্কে চিৎকার করছে। চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন অনেকগুলো বাড়ি আছে এই গলিতে। আরেকবার চিৎকার হতেই তিনি বুঝতে পারলেন সামনের একটি বাসা থেকে চিৎকারটা ভেসে আসছে। তার পুলিশি মন বিপদের আভাস পেলো। তাড়াতাড়ি সাইকেলটা নিয়ে বাড়িটার সামনে গেলেন তিনি। মারুফ একটা বিষয় খেয়াল করলেন যে, শব্দটা নির্দিষ্ট সময় পরপর হচ্ছে। এবং এই বাসার দ্বিতীয় তলা থেকেই মনে হচ্ছে আওয়াজটা আসছে। তখন তিনি বাসার গেটে নক করলেন। কিছুক্ষণ পর দারোয়ান গেট খুললো।


- জ্বি আপনি কে? এত রাতে...
- আমি থানা থেকে এসেছি। দ্বিতীয় তলায় মনে হচ্ছে কোন বিপদ হয়েছে। তাই সেটা দেখতে চাচ্ছি।
দারোয়ান ঘুমের ঘোরে কিছু না বুঝেই মারুফকে যেতে দিলো।
দ্বিতীয় তলায় উঠে দরজায় নক করলেন মারুফ। অনেকক্ষণ নক করার পর একটি মেয়ের কণ্ঠস্বও শোনা গেলো। মনে হচ্ছে বাসার কাজের মেয়ে।
- কে?
- আমি থানা থেকে এসেছি।
- কী চান?
- তোমাদের বাসা থেকে মনে হচ্ছে কেউ চিৎকার করছে। কেউ কি বিপদে পড়েছে?
- না তো, কেউ তো বিপদে পড়ে নাই!
মেয়েটি দরজা খুলে দিলো।
- খাড়ান, ভাই আর আপারে ডাইকা আনি। এই বলে মেয়েটি ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর এক দম্পতি বের হয়ে এলো। লোকটি বলে উঠলো—
- আসসালামওয়ালাইকুম। কাকে চাইছেন?
- ওয়ালাইকুমআসসালাম। আমি একজন পুলিশ অফিসার। আপনাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো একটি নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনলাম। তাই আমি জানতে এসেছি যে কোনো সমস্যা কিনা।
- ও আচ্ছা, অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমাদের বাসায় তো কোনো সমস্যা হয়নি!
ঠিক তখনই চিৎকারটা আবার হলো। তখনই মারুফ বলে উঠলেন—
- এই যে চিৎকার। আপনাদের বাসায়ই তো!
হঠাৎ লোকটি হেসে উঠলেন।
- আমি দুঃখিত। এটা আসলে আমাদের পোষা একটি পাখি!
- কী? প্রচণ্ড অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন মারুফ।
- হ্যাঁ। এই বলে লোকটি বাসার ভিতরে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর ফিরে আসলেন হাতে একটি খাঁচা নিয়ে। খাঁচায় একটি খুব সুন্দর তোতা পাখি। নীল আর কমলা রঙের মিশেল পাখিটির গায়ে। লোকটি বললো—
- এটা হচ্ছে ম্যাকাও। একজাতীয় তোতা। এটার ডাক আসলেই একটু চিৎকারের মতো শোনায়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ যে আপনি আমাদের বিপদ মনে করে আমাদেরকে সাহায্য করতে এসেছেন।
তখনই পাখিটি ডেকে উঠলো। পুরো মেয়ে কণ্ঠের চিৎকার।
মারুফ হোসেন তো এখনো বিশ্বাসই করতে পারছেন না!

চান্দ্রেয়ী পাল মম
দশম শ্রেণী
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ
বসুন্ধরা শাখা, ঢাকা।

Tota_Inner

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।