ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

এখনো ভাবায় সুকুমার রায়

ইচ্ছেঘুড়ি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৪
এখনো ভাবায় সুকুমার রায়

মাত্র ৩৬ বছর বেঁচে থেকেও তার কালের সেরা শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার সুকুমার রায়। তার কাল বললেও ভুল বলা হবে, কারণ সুকুমার রায়ের লেখা এখনো শুধু শিশু নয়, সব বয়সী মানুষের কাছেই সমান প্রিয়।



উদ্ভট সব শব্দ, প্রাণীর নাম আর চিন্তা পাঠকের উপাদেয় খোরাক এ কালেও।

সুকুমার রায়ের বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায় ছিলেন তার কালের সেরা শিশুসাহিত্যিক। আবার সুকুমার রায়ের ছেলে উপমহাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। এ পরিবারের প্রতিটি প্রজন্মই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বেঁচে আছেন তাদের কর্ম দিয়ে।


জীবিতকালে সুকুমার রায় তার প্রকাশিত কোনো গ্রন্থ দেখে যেতে পারেন নি। তার লেখা কবিতার বই আবোল তাবোল, গল্প হযবরল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু, এবং নাটক চলচ্চিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা ‘ননসেন্স’ ধরনের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়য়। কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড (Alice in Wonderland) ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ক্লাসিক-ই যাদের সমকক্ষ।

১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর তার জন্ম। জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সন্দেশ’ এর সম্পাদক সুকুমার রায় অল্প বয়সেই লেখনীর ধার বুঝিয়ে দেন পাঠককে। অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তিনি পাঠককে আনন্দ দিয়েছেন।

মৃত্যুর বহু বছর পরেও তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিকদের একজন।


সুকুমার রায়ের কয়েকটি লেখা:

গোঁফচুরি

হেড আফিসের বড় বাবু লোকটি বড়ই শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনও জান্‌ত ?
দিব্যি ছিলেন খোস্‌‌মেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা ব'সে ঝিমঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে !
আঁৎকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি ক'রে গোল
হঠাৎ বলেন, "গেলুম গেলুম, আমায় ধ'রে তোল" ।
তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউ বা হাঁকে পুলিশ,
কেউবা বলে, "কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস্‌। "
ব্যস্ত সবাই এদিক ওদিক কর্‌ছে ঘোরাঘুরি-
বাবু হাঁকেন, "ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি" !
গোঁফ হারান ! আজব কথা ! তাও কি হয় সত্যি ?
গোঁফ জোড়া ত তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি ।
সবাই তারে বুঝিয়ে বলে, সাম্‌‌নে ধরে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না ।
রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,
"কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকেই চিনি ।
"নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়না,
এমন গোফ ত রাখত জানি শ্যামবাবুদের গয়লা।
"এ গোঁফ যদি আমার বলিস করব তোদের জবাই"-
এই না ব'লে জরিমানা কল্লেন তিনি সবায় ।
ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়-
"কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায় ।
"আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর
"গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর ।
"ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধ'রে খুব নাচি,
"মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধ'রে কোদাল দিয়ে চাঁচি ।
"গোঁফকে বলে তোমার আমার- গোঁফ কি কারও কেনা ?
"গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা । "

হুঁকোমুখো হ্যাংলা



হুঁকোমুখো হ্যাংলা         বাড়ী তার বাংলা
         মুখে তার হাসি নাই, দেখেছ ?
নাই তার মানে কি ?         কেউ তাহা জানে কি ?
         কেউ কভু তার কাছে থেকেছ ?

শ্যামাদাস মামা তার          আপিঙের থানাদার,
         আর তার কেউ নাই এছাড়া-
তাই বুঝি একা সে         মুখখানা ফ্যাকাশে,
         ব'সে আছে কাঁদ-কাঁদ বেচারা ?

থপ্‌ থপ্‌ পায়ে সে         নাচ্‌ত যে আয়েসে,
         গাল ভরা ছিল তার ফুর্তি,
গাইত সে সারাদিন         'সারে গামা টিম্‌টিম্‌',
         আহ্লাদে গদ-গদ মূর্তি !

এইত সে দুপ'রে         ব'সে ওই উপরে,
         খাচ্ছিল কাঁচকলা চট্‌‌কে-
ওর মাঝে হল কি ?         মামা তার মোলো কি ?
         অথবা কি ঠ্যাং গেল মট্‌‌কে ?
হুঁকোমুখো হেঁকে কয়,         আরে দূর, তা তো নয়,
                 দেখ্‌ছ না কি রকম চিন্তা ?
        মাছি মারা ফন্দি এ         যত ভাবি মন দিয়ে-
                 ভেবে ভেবে কেটে যায় দিনটা ।

        বসে যদি ডাইনে,         লেখে মোর আইনে-
                 এই ল্যাজে মাছি মারি ত্রস্ত ;
        বামে যদি বসে তাও,         নহি আমি পিছপাও,
                 এই ল্যাজে আছে তার অস্ত্র !

        যদি দেখি কোন পাজি         বসে ঠিক মাঝামাঝি,
                 কি যে করি ভেবে নাহি পাইরে-
        ভেবে দেখ একি দায়,         কোন্‌ ল্যাজে মারি তায়
                 দুটি বই ল্যাজ মোর নাইরে !"


মানুষ মুখো

বাঁদরের মুখের চেহারা যে অনেকটা মানুষের মতো তা দেখলেই বোঝা যায়; বিশেষত ওরাং ওটান শিম্পাঞ্জী প্রভৃতি বুদ্ধিমান বাঁদরদের চালচলন আর মুখের ভাব দেখলে মানুষের মতো আশ্চর্য সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। কোন কোন বাঁদর আছে তাদের মাথার লোমগুলি দেখলে ঠিক টেরিকাটা মানুষের মাথার মতো মনে হয়, যেন কেউ চিরুনি দিয়ে চুল ফিরিয়ে সিঁথি কেটে দিয়েছে। এক ধরনের বাঁদরের যেরকম গোঁফের বাহার খুব কম মানুষেরই সেরকম আছে। এর বাড়ি আমেরিকায়। ছোট্ট আধ হাত উঁচু বাঁদরটি, কিন্তু ওই গোঁফের জন্যে তার মুখে একটা গাম্ভীর্যের ভাব দেখা যায়। এদের রং কাল, হাতে লম্বা লম্বা নখ থাকে, তাই দিয়ে কাঠবেড়ালীর মতো গাছে খাম্‌চিয়ে ওঠে। এই জাতীয় বাঁদরের নাম টামারিন্‌। এদের সকলের এরকম গোঁফ থাকে না; গুঁফো বাঁদরদের এম্পায়ার টামারিন্‌ অর্থাৎ সম্রাট টামারিন্‌ বলে। তা সম্রাটের মতো চেহারাই বটে। সম্রাটের প্রিয় খাদ্য হচ্ছে কলা। গুঁফো বাঁদরের পর দাড়িওয়ালা বাঁদর, তার নাম হচ্ছে কাল সাকী। এরও বাড়ি আমেরিকায়। সে দেশের লোকেরা এই বাঁদরকে শয়তান বাঁদর বলে। এরকম অন্যায় নাম দেবার কোনই কারণ পাওয়া যায় না, কারণ এদের মেজাজ যেমন ঠাণ্ডা, স্বভাবও তেমনি নিরীহ। দাড়ির বহর যতই হোক না কেন, আসলে এরা ভীতুর একশেষ। মানুষের কোন অনিষ্ট করা দূরে থাক, কাছে কোথাও মানুষ আছে জানতে পারলে এরা তার ত্রিসীমানা ছেড়ে পালায়। এদের কোনরকমে পোষ মানান যায় না; ধরে আনলে অতি অল্প দিনের মধ্যেই মরে যায়। আর এক জাতের সাকী বাঁদর রয়েছে। এর গায়ের রং খুব হাল্‌কা তাই একে সাদা সাকী বলা হয়। এর চেহারা যে আরো উদ্ভট গোছের। দাড়িও অন্য রকমের। এইরকম গালপাট্টা দেওয়া চেহারা আর বিকট ধেব্‌ড়ান মুখ দেখে বুঝবার যো নেই যে, বেচারার স্বভাবটি মোটেও তার চেহারার মতো নয়।

বুড়ো-ধাড়ী সিন্ধুঘোটকদের চেহারাও অনেক সময় খুব মাতব্বর গোছের মানুষের মতো মনে হয়। গোঁফ দাড়ি, মাথায় টাক, সবই বেশ মানিয়ে যায়, কেবল হাতির মতো ওই প্রকাণ্ড দাঁত দুটতেই সব মাটি করে দেয়। ...

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।