ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলা ভাষার গল্পকথা

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫
বাংলা ভাষার গল্পকথা

ঢাকা: বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। প্রাণের ভাষা বাংলায় আমরা কথা বলি, হাসি, খেলি আর গান গাই।

আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে রয়েছে বাংলার জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা।
 
শুধু মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য নিজের প্রাণ বলি দিতেও দ্বিধা করেনি বীর বাঙালি। বাঙালি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র জাতি, যারা নিজ ভাষা রক্ষায় লড়াই করেছে। রক্তের দামে কেনা এ ভাষাটির জন্য আমাদের এত ভালোবাসা ।

তবে কিভাবে জন্ম হয়েছিল বাংলা ভাষার, তোমরা কি সেটা জানো বন্ধুরা? জানলে তো ভালোই, না জানলেও কোনো ব্যাপার নয়, বলছি এক্ষুনি।


বাংলা ভাষার জন্মকথার শুরুটা ছিল অন্য সব ভাষার মতোই। ভাষা কখনো থেমে থাকে না। তাই একে তুলনা করা হয় নদীর স্রোতের সঙ্গে। নদী যেমন নিজের গতিতে চলতে চলতে দিক পরিবর্তন করে, ভাষাও ঠিক তাই। এভাবেই একটি ভাষা দীর্ঘদিন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মুখের কিছু কিছু ধ্বনিও পরিবর্তিত হতে থাকে, আর এভাবে এক পর্যায়ে প্রায় সবগুলো ধ্বনি ও শব্দ পাল্টে গিয়ে ভাষাটি হয়ে ওঠে পুরোপুরি নতুন। এভাবেই নতুন নতুন ভাষার সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাষাও এভাবে অন্য ভাষার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে।


সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। প্রাচীন বাংলায় সংস্কৃত ছিল বহুল প্রচলিত একটি ভাষা। আগে অনেকেই ধারণা করতেন সংস্কৃত থেকেই বাংলার উৎপত্তি। কিন্তু পরে এ ধারণাটি বদলে যায়।

সংস্কৃত ছিল মূলত লেখার ভাষা। এ ভাষায় সাধারণ মানুষেরা কথা বলত না। সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বিভিন্ন রকম। মূলত প্রাকৃত ভাষাতেই তারা কথা বলতো। ভারতীয় উপমহাদেশে নানা রকমের প্রাকৃত ভাষা প্রচলিত ছিল। এ প্রাকৃত ভাষা থেকেই বাংলার জন্ম হয়।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলোর একটি শাখা হচ্ছে ভারতীয় আর্যভাষা। এ আর্যভাষার কয়েকটি স্তরের মধ্যে প্রাকৃত অন্যতম একটি। প্রাকৃত ভাষারও কয়েকটি স্তর রয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ স্তরটি হচ্ছে প্রাকৃত অপভ্রংশ। বিভিন্ন রকম প্রাকৃত অপভ্রংশই ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন ভাষা।


ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলার জন্ম হয়েছে পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে। মাগধী অপভ্রংশের তিনটি শাখা। এগুলো হচ্ছে পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ, পশ্চিম মাগধী অপভ্রংশ ও মধ্য মাগধী অপভ্রংশ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি। একইসঙ্গে এ অপভ্রংশ থেকেই জন্ম আসামি ও উড়িয়া ভাষারও।
 
জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন মনে করেন, মাগধী প্রাকৃতের কোনো পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়।


আবার ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. কাজী দীন মুহাম্মদ ও বেশ কয়েকজন ভাষাবিজ্ঞানী মনে করেন প্রাকৃত অপভ্রংশের পূর্বরূপ গৌড়ী অপভ্রংশ থেকে জন্ম নেয় বাংলা ভাষা।

বাংলার ইতিহাসকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। প্রথম স্তরটি হলো প্রাচীন বাংলা। এর সময়কাল ছিল ৯০০ বা ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এ সময়ে বাংলা, উড়িয়া ও আসামের ভাষা থেকে আলাদা হয়। আমি, তুমি- এ ধরনের সর্বনামের প্রচলও ঘটে এ সময়ে। প্রাচীন বাংলায় লেখা হয় চর্যাপদ।

বাংলার দ্বিতীয় স্তর মধ্য বাংলা। এর সময়কাল ছিল ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ। এ স্তরে বাংলা ভাষায় যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন ঘটে। চন্ডীদাশের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন লেখা হয়েছিল এ মধ্য বাংলায়।


আধুনিক বাংলা হচ্ছে বাংলা ভাষার সর্বশেষ স্তর। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আজ পর্যন্ত এ নিয়মেই মানুষ কথা বলছে। ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষা ধীরে ধীরে বর্তমান রূপ লাভ করে।

এভাবেই অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার সৃষ্টি। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে উঠেছে আজকের বাংলা অর্থাৎ আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।