ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বিশ্ব শ্রমিক দিবস: অধিকার আদায়ের গল্প

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৫
বিশ্ব শ্রমিক দিবস: অধিকার আদায়ের গল্প

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিকদের সম্মান জানিয়ে ও তাদের অধিকার আদায়ের প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছরের মে মাসের প্রথম দিন এ দিবস পালিত হয়।

যারা শ্রম দিয়ে, কষ্ট করে সমাজকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির শিখরে নিয়ে যায়, তাদের সম্মান জানাতেই পালিত হয় দিবসটি।

একটা গল্প বলি। অনেক অনেক দিন আগের সত্যিকারের গল্প, যাকে বলে ইতিহাস। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রম নির্ধারণসহ নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতে জমায়েত হন সেখানকার শ্রমিকেরা। আগে থেকে সেখানে উপস্থিত ছিল পুলিশও।

হঠাৎ পুলিশের দিকে কেউ একজন বোমা নিক্ষেপ করে। তারপর পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ও গুলিতে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। নিহত হন কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।

হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার আগে শ্রমিকদের দিন রাত অমানবিক পরিশ্রম করতে হতো। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন। বিপরীতে মজুরি মিলত নগণ্য, শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করত। ক্ষেত্রবিশেষে তা দাসবৃত্তির পর্যায়েও পড়ত।

১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এ দাবি কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেধে দেয় দেয় ১৮৮৬ সালের ১ মে।

কিন্তু কারখানা মালিকরা এ দাবি মেনে নেয়নি। ৪ মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকরা মিছিলের উদ্দেশে একত্রে জড়ো হয়। ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়েই এটি করা হয়েছিল। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশ বাহিনী তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের ওপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা সংঘাতে রূপ নেয়। এতে ১১ শ্রমিক শহীদ হয়। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন। অন্য একজনের পনের বছরের কারাদণ্ড হয়।

ফাঁসির মঞ্চে আরোহণের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে। ২৬ জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্নর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন। এ আন্দোলনের ফলেই শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি স্বীকৃতি পায়। এর পর থেকেই মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিন হিসেবে।

মে দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দিবস। এই দিবস পালনের মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ জাগ্রত করতে হবে, সচেতন হতে হবে তাদের অধিকার সম্পর্কে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৫
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।