ঢাকা, শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

যা হয়, ভালোর জন্যই হয়

মূল: ব্রাজিলের লোককাহিনী, ভাষান্তর: সানজিদা সামরিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫
যা হয়, ভালোর জন্যই হয়

অনেক অনেক বছর আগের কথা। তখন খরগোশের লেজ ছিল ‍অনেক লম্বা।

কিন্তু তার নরম তুলতুলে লেজ দেখে হিংসে হলো বিড়ালের। কী করে খরগোশকে লেজছাড়া করা যায়, দিনরাত সেই ফন্দি করতে লাগলো বিড়াল। এদিকে, খরগোশ স্বভাবে ভীষণ ছটফটে হলেও সে খুবই সহজ-সরল।  

একদিন খরগোশ তার লম্বা লেজ ছড়িয়ে গাছের নিচে ঘুমিয়ে ছিল। এই সুযোগে দুষ্টু বিড়াল ধারালো ছুরি দিয়ে খরগোশের অমন সুন্দর লেজ কেটে ফেললো। কাটা লেজ নিজের লেজের সঙ্গে জুড়ে নিয়ে গর্বের সঙ্গে খরগোশকে ডাকতে লাগলো বিড়াল।

লেজ নাচিয়ে বললো, এই সুন্দর লম্বা লেজ তোমার চাইতে আমার সঙ্গেই বেশি মানিয়েছে, কী বলো!

খরগোশ তাকিয়ে দেখলো, তার লেজটি বিড়াল কেটে নিয়েছে। কষ্টে তার বুক ফেটে গেলো। তবুও নিজেকে সামলে সে বিড়ালকে বললো, লেজ তো তুমি কেটেই নিয়েছ, ছুরি দিয়ে আর কী করবে। আমার লেজের বদলে না হয় তোমার ছুরিটি আমায় দাও।

বিড়াল ছুরি খরগোশকে দিয়ে দিলো। খরগোশ ছুরি হাতে বনের পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলো, যা হয়েছে, নিশ্চয় ভালোর জন্যই হয়েছে। লেজ হারিয়েছি তো কী হয়েছে, তার বদলে তো ছুরি পেয়েছি।

চলতে চলতে খরগোশ দেখলো, এক লোক বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঝুড়ি বানাচ্ছেন। ঝুড়ি বানানোর জন্য বাঁশের কঞ্চিগুলোকে দাঁত দিয়ে ছিলছেন তিনি।

খরগোশ তার ছুরিটি লোকটির কাছে এগিয়ে দিয়ে বললো, তোমার তো খুব কষ্ট হচ্ছে ভাই। আমার ছুরিটি দিয়ে তুমি কাজ করতে পারো।

লোকটি খুশি হয়ে তাকে ধন্যবাদ দিলেন। কিন্তু ছুরি দিয়ে বাঁশের কঞ্চি কাটতে কাটতে এক পর্যায়ে ছুরি গেল ভেঙে। খরগোশ তড়িঘড়ি করে উঠে বললো, এ কী করলে ভাই, আমার ছুরি ভেঙে ফেললে!
 
লোকটি বিনয়ের সঙ্গে বললো, আমি খুবই দুঃখিত বন্ধু।

খরগোশ বললো, ঠিক আছে, তাহলে ছুরির বদলে তুমি তোমার তৈরি একটি ঝুড়ি আমায় দাও।  

লোকটি খুশিমনে খরগোশকে একটি ঝুড়ি দিয়ে দিলেন| ঝুড়ি নিয়ে খরগোশ যেতে যেতে ভাবলো, যা হয়েছে, নিশ্চয় ভালোর জন্যই হয়েছে। সামনে হয়তো এর চেয়েও ভালো কিছু পাবো।

হাঁটতে হাঁটতে খরগোশ পৌঁছালো বনের শেষ প্রান্তে। সেখানে একটি মেয়ে আনমনে বাগান থেকে লেটুসপাতা তুলছিল। পাতা তুলে তুলে সে রাখছিল নিজের পকেটে।

ঝুড়ি হাতে খরগোশকে যেতে দেখে মেয়েটি বললো, আমাকে তোমার ঝুড়িটি একটু ধার দাওনা গো। আমার পকেট লেটুসপাতায় ভরে গেছে।   

খরগোশ সঙ্গে সঙ্গে ঝুড়ি এগিয়ে দিল মেয়েটির দিকে। মেয়েটি লেটুসপাতা তুলে তুলে ঝুড়ি ভরতে লাগলো। এভাবে পুরো ঝুড়ি ভরে গেল পাতায়। এরপর সে আরও লেটুসপাতা রাখার জন্য চাপ দিতেই ঝুড়ির মাঝখানটা গেল ভেঙে|

খরগোশ চেঁচিয়ে উঠলো, এ কী করলে, আমার ঝুড়িটি ভেঙে ফেললে!

মেয়েটি বললো, আমি খুবই দুঃখিত বন্ধু|

খরগোশ বললো, ঠিক আছে ঝুড়িটি বরং তোমার কাছেই রেখে দাও, এর বদলে আমায় কিছু লেটুসপাতা দাও| আমি খুবই ক্ষুধার্ত।

মেয়েটি মুঠোভরে খরগোশকে লেটুসপাতা দিলো। খরগোশ মনে মনে ভাবলো, যা হয়েছে, ভালোর জন্যই হয়েছে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাজা লেটুসপাতা পেয়েছি!

খরগোশ লেটুসপাতায় কামড় বসালো। আহ্ কী স্বাদ! মনে হলো জীবনের শ্রেষ্ঠ খাবার যেন সে আজ খাচ্ছে। এটিই যেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।

মুহূর্তের মধ্যেই খরগোশের মনে হলো, আজ বিড়াল লেজ না কেটে নিলে আমি ছুরি পেতাম না, ছুরি না ভাঙলে ঝুড়িটি আমার হতো না। আর ঝুড়িটি মেয়েটিকে না দিলে এই সুস্বাদু লেটুসপাতা আমার খাওয়া হতো না। তাই যা হয়, তা অবশ্যই ভালোর জন্যই হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫
এসএস

** রাত এলো যেমন করে
** বিড়াল কেন ইঁদুর মারে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।