ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

শুভ জন্মদিন সুফিয়া কামাল

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
শুভ জন্মদিন সুফিয়া কামাল

`আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা/তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা/ আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি/ তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি’

কবিতার ছন্দে কথাগুলো বেগম সুফিয়া কামাল তার আজিকার শিশু কবিতায় লিখেছেন।

সুফিয়া কামালকে নিশ্চই তোমরা সবাই চেন।

চিনতে তো হবেই, কারণ শিশুতোষ কবিতা থেকে শুরু করে সাহিত্যের প্রায় সব অধ্যায়েই এই মহিয়সী সংগ্রামী নারীর লেখনীর ছোঁয়া রয়েছে।    ‍

আজ (শনিবার) ২০ জুন। কবি সুফিয়া কামালের ১০৪তম জন্মদিন। একাধারে কবি, লেখিকা, শিক্ষিকা ও নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের এ দিনে বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবদুল বারী ও মা সৈয়দা সাবেরা খাতুন।

সুফিয়া কামালের ছেলেবেলা অনেকটা গৃহবন্দি হয়েই কাটে। তখনও নারীরা অন্দরমহলের বাইরে পা ফেলেনি। ফলে সুফিয়া কামালের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠা হয়নি।

তবে জ্ঞানের প্রতি অগাধ আগ্রহ থাকায় বাড়িতে বসেই তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হন ও মায়ের কাছে বাংলা শেখেন। পরবর্তীতে বিয়ের পর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন তাকে সাহিত্যচর্চায় আরও উৎসাহ যোগান।  

সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি পাশাপাশি সুফিয়া কামাল লিখতেও শুরু করেন। ১৯২৩ সালে ‘তরুণ’ পত্রিকার প্রথম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় তার প্রথম লেখা “সৈনিক বধূ” প্রকাশিত হয়। এসময় মিসেস এস.এন. হোসেন ছদ্মনামে তার লেখা ছাপা হয়। এরপর ১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ সেসময়ের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সওগাতে’ প্রকাশিত হয়।

সুফিয়া কামালের নারী অধিকার আদায় ও সচেতনতার চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটে  ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ সংগঠনের মাধ্যমে। এ সংগঠনেই বেগম রোকেয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নারী সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে নামেন তিনি। সঙ্গে এগিয়ে চলে তার সংগ্রামী কলম।

১৯৩৮ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ সাঁঝের মায়া লিখে রবীন্দ্রনাথসহ আরও বিশিষ্টজনের প্রশংসা অর্জন করেন সুফিয়া কামাল।  

সুফিয়া কামাল শুধ‍ু সাহিত্যই নয় সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, অসহযোগ আন্দোলন, নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে  সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি।

তার অন্যান্য কীর্তির মধ্যে রয়েছে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণ।

বাংলাদেশে নারীজাগরণ ও অসাম্প্রদায়িক নারী-পুরুষ সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমৃত্যু লড়ে গেছেন প্রগতিশীল আলোকিত এই নারী। এদেশে নারী অগ্রাসনে তার ভূমিকা অসামান্য।

১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় শ্রদ্ধেয় এই গুণী লেখিকা মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে সুফিয়া কামালই প্রথম এই সম্মান অর্জন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।