ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

শ্রদ্ধাঞ্জলি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

১৫ আগস্ট। আর পাঁচটা সহজ-স্বাভাবিক দিনের মতোই হতে পারতো এ দিনটিও।

কিন্তু হলো না। বাংলাদেশের ইতিহাসে নেমে সবচেয়ে অন্ধকার দিন। নেমে এলো শোক। ১৯৭৫ সালের এ দিনেই আমরা হারিয়েছিলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে। সেদিন রেহাই পেয়েছিলেন শুধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

কেমন ছিলো এই মহান নেতার জীবন? চলো জেনে নেওয়া যাক সংক্ষেপে।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা মোসাম্মৎ সাহারা খাতুন। ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে শেখ মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দুই বছর পর তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে এবং সেখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর চোখের জটিল রোগের কারণে চার বছর পড়াশোনা থেকে দূরে থাকেন তিনি।

১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় সক্রিয়ভাবে শুরু করেন রাজনীতি। প্রথমে তিনি যোগ দেন বেঙ্গল মুসলিম লীগে। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। অল্প সময়েই বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন একজন সফল ছাত্রনেতা।

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময়ে কারাগারে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিব। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয় দফা দাবি, গণঅভ্যুত্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোতেও ছিলো তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা।

১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা তাকে সরকার গঠন করতে দেয়নি। বিষয়টি বুঝতে পারার পর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বাঙালি। শুরু হয় মিছিল-মিটিং, নানান কর্মসূচি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা প্রতিটি বাঙালির মধ্যে স্বাধীনতার স্বপ্ন তৈরি করে দেয়। তিনি সেই ভাষণে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢাকায় নিরীহ বাঙালির উপর, চালায় গণহত্যা। এরপর সেদিন মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুকে তার নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণ দেন, যা পরদিন রেডিওতে প্রচারিত হয়।  

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ও প্রচেষ্টায় দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এরপর তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ সংস্কারের কাজে, নতুন একটা দেশ গড়ার কাজে।

কিন্তু দেশটাকে পুরোপুরি তৈরির আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সূর্য ওঠার আগে কয়েকজন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। শুধু জাতির পিতা নয়, তারা হত্যা করে বাসায় থাকা প্রত্যেক সদস্যকে। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান বন্ধবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

পরবর্তীতে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়।

আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যা করেছেন, তা তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির আসনে বসিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।