ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

লাল পরীর ডানা | নাজিয়া ফেরদৌস

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
লাল পরীর ডানা | নাজিয়া ফেরদৌস

পরীর গল্প শুনতে কে না ভালোবাসে বলো? আমিও খুব ভালোবাসতাম। আমার বড়মা, মানে দাদীর মা আমাদের কত যে পরীর গল্প শোনাতেন!

পরীদের থাকে চুমকি বসানো বিশাল বড় ঝিলিমিলি ডানা আর তারা খুব সুন্দর দেখতে হয়।

তারা অন্যের উপকার করে, যা ইচ্ছে করতে পারে আর যেখানে খুশি ডানায় ভর করে উড়ে বেড়াতেও পারে।

একদিন কী হয়েছে, আমি ঘুমিয়েছি। হঠাৎ স্বপ্নে দেখি খুব সুন্দর এক লাল ডানার পরী আমায় বলছে-

নাবি ওঠ। আমার ডানা ভেঙে গেছে, আমাকে সাহায্য কর।

যেই না আমি উঠতে যাবো অমনি ঘুমটা গেল ভেঙে। উঠে দেখি বাবা বাসার কী এক কাজের জন্য মোটা সাদা কাগজ নিয়ে এসেছেন। কাগজগুলো দেখে চট করে আমার মাথায় এক বুদ্ধি এলো। আরে! আমিই তো পরীর ডানা বানাতে পারি।

যেই ভাবা সেই কাজ। নাস্তা খেয়ে একটু পড়াশুনা করে আমি কাগজ নিয়ে বসলাম। খুব ভেবে বড় বড় দু’টো ডানা আঁকলাম। কাঁচি দিয়ে ঠিক প্রজাপ্রতির ডানার মতো কাটলাম। বাহ! সুন্দর সাদা ডানা হয়েছে তো! কিন্তু আমি তো রঙিন ডানা চাই। বসে পড়লাম রঙ আর তুলি নিয়ে।

আমার পুষি বেড়ালটা আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিলো। যেই না আমি রঙ গোলাতে যাবো, অমনি সে লাফ দিতে গিয়ে ডানার উপর লাল রঙের কৌটোটা দিল উল্টে। রঙ ছড়িয়ে কী যে বাজে অবস্থা হলো কী বলবো। খুব মন খারাপ হলো আমার। কান্না চলে এলো। কিন্তু পুষিকে কিছু বলতে পারলাম না। শেষে মার কাছে গিয়ে কথাটা বললাম।

মা বললেন- সোনা তুমি মন খারাপ করো না। তুমি লাল ডানাই বানাও। উপরে চিকমিক ছিটিয়ে দেবে, বেশ সুন্দর হবে তাহলে।

আমি তো শুনে মহাখুশি। মায়ের কথামতো পুরো ডানাটাই লাল রঙ করে ফেললাম। উপরে দিলাম চিকমিক ছিটিয়ে। কী যে সুন্দর হলো ডানা দু’টো! ঠিক যেন পরীর ডানা। মনে মনে ঠিক করলাম লাল পরীকে আমি ডানা দু’টো দিয়ে দেবো। সে খুব খুশি হবে।

কিন্তু কয়েক দিন চলে গেলো। স্বপ্নে আর লালপরী এলো না। আমি বার বার ঘুমাতে যাই তাও সে আসে না। আমার মন খারাপ হয়ে যায়। আমি জানালা দিয়ে ফুল বাগানের দিকে চেয়ে থাকি। বাইরে বৃষ্টি হয়। শুনেছি বৃষ্টির রাতে ফুলের বাগানে নাকি পরীরা খেলতে আসে। কিন্তু লাল পরীর যে ডানা ভেঙে গেছে, তাই বুঝি সে আসতে পারছে না। আমার কিছুই ভালো লাগছিল না। সারাদিন শুধু মন খারাপ করে লাল ডানা দু’টো নিয়ে বসে থাকতাম।

একদিন মা আমাকে জোর করে স্কুলের ‘যেমন খুশি সাজ’ প্রতিযোগিতা দেখতে নিয়ে গেলেন। ছেলে-মেয়েরা সেখানে কত কী যে সেজেছে। কেউ বাঘের মুখোশ পরে বাঘ, কেউ পাখি, কেউ ডাক্তার, কেউ শিক্ষক। আমার ভালো লাগছিল দেখতে। ওদের মধ্যে একজনকে দেখে আমি খুব অবাক হলাম। সে ঠিক আমার স্বপ্নে দেখা লাল পরীর মতো। সে পরী সেজেছে কিন্তু তার ডানা নেই। লাল পোশাকও পরে মন খারাপ করে বসে রয়েছে।

আমি তার কাছে গেলাম। শুনলাম কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজে তার পাখা দু’টো ভেঙে গেছে। আমি তখনই বাসায় চলে এলাম। আমার বানানো লাল ডানা দু’টো ওই সুন্দর মেয়েটাকে দিলাম। ডানা লাগিয়ে তাকে ঠিক লাল পরীর মতোই দেখাচ্ছিল। তাকে দেখে আমার কী যে খুশি লাগলো।

মনে হলো, লালপরী এভাবেই তার ডানা নিতে এসেছে। আমি অন্যের উপকার করেছি দেখে মাও খুব খুশি হলেন। সেদিন প্রতিযোগিতায় লালপরী প্রথম হয়েছিল। আমার ডানার জন্য সে আমাকে অনেক ধন্যবাদও দিয়েছিল। এখনও সে আমার খুব ভালো বন্ধু।

অন্যের উপকার করলে ভালো বন্ধু পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
এসএমএন/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।