ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৬)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ৬)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শীপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শীপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শীপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।

বাংলানিউজের ইচ্ছেঘুড়ি বিভাগ ধারাবাহিকভাবে এ কিশোর উপন্যাসটি প্রকাশ করছে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার—সপ্তাহের এ তিনদিন উপন্যাসটির একটি করে নতুন পর্ব প্রকাশিত হবে।



পর্ব ৫ পড়তে ক্লিক করো


দেখলে, বব কাজটা করল’ ড্যান্ডি বলে। ‘ভেড়াদের দিয়ে কাজটা করাতে হয়, ওদের জিজ্ঞেস করে নয়, শ্যাডো! ওরা এমনই নির্বোধ জন্তু যে দৌড়ে কেবল পালাতেই জানে—আর তোমার কাজ হলো খুব বেশি ভরকে না দিয়ে, ওদের সঠিক দিকে তাড়িয়ে নেয়া। ’

‘বব খুব চালাক’ শ্যাডো বলে। ‘তাহলে এখন আমরা কী করব? আমরা কি ভেড়াগুলোকে অন্য পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাব?’

মেষ পালক কুকুরদের চিৎকার করে ডাকে। ‘এই যে রাফে, টিঙ্কার, ড্যান্ডি—যাও ববকে সাহায্য করো। ভেড়াগুলোকে পাহাড় থেকে নামিয়ে, নদীর ওপরকার সেতুটা পার করে, ঝোঁপের মাঝে ফাঁকা জায়গার মাঝ দিয়ে ওখানকার পাহাড়ে নিয়ে যাও। ’



‘থামো!’ বব আদেশ করে। ‘কেবল দরকারের সময়ই আমরা ঘেউঘেউ করব। তুমি যদি সত্যিই ভেড়াদের ভয় পাইয়ে দাও তাহলে ওরা সাবাই ভাগবে এবং ওদের ফিরিয়ে আনা তখন কষ্টকর হবে। জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে, খামারে ফিরে যাও। ’
শ্যাডো লজ্জা পায়। সে খামারে মুরগি, শুকর আর হাঁসের ভিড়ে ফিরে যেতে চায় না। সে বাইরের এই আলো ঝলমল রোদেলা পাহাড়ে বড় কুকুরদের সঙ্গে থাকতে চায়। তাই এরপর সে আর একটি বারের জন্যেও ঘেউঘেউ করে না, যদিও কাজটা করতে তার খুবই ইচ্ছে হয়



কথা বলবার সময় সে তার লাঠি দিয়ে দেখায়। কুকুরগুলো কাজে যাবার জন্য, তখনই ছুটতে শুরু করে। বব লাফিয়ে অন্যদের দিকে তাকায়। শ্যাডো নিশ্চিত হয় সে-ই সবার নেতা।

‘হুফ’—বব বলে, এবং সবাই জানে সে কী বোঝাতে চাইছে। রাফে ভেড়াদের পেছনে চলে যায়। ভেড়াদের পার হওয়া নিশ্চিত করতে টিঙ্কার সেতুর কাছে পাহারায় থাকে। ড্যান্ডি ববের সঙ্গে ওদের ঘিরে দৌড়াতে থাকে, এবং ওদের সঠিক দিকে নিয়ে যায়।

মেষ পালক তার কুটিরে ঢোকে এবং কুকুরদের তাদের কাজে রেখে যায়। সে জানে ওদের বিশ্বাস করা যায়।

শ্যাডো ড্যান্ডির সাথে এগোয়। ‘এখন আমার সঙ্গে তাল মেলাও এবং আমি যা করি তাই করতে থাকো’ ড্যান্ডি হাঁপাতে থাকে, ‘আমাদের কাজ হলো, ভেড়ার পালটাকে দলবদ্ধ রেখে, পাহাড় থেকে নামিয়ে নদীর দিকে যাওয়া। বব পালের ওই দিকটার দায়িত্বে রয়েছে—এদিকটা আমাদেরই দেখতে হবে। যখনই কোনো ভেড়াকে দলছুট হতে দেখবে, দৌড়ে সেটার কাছে যাবে, এবং ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। ’

একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন, কী এক উত্তেজনাকর সময় পার করছে শ্যাডো! ভেড়াগুলো বোকা, এবং দু’তিনটা ঝাঁক থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। শ্যাডো ওদের দিকে ছুটে যায়, এবং ওদের সামনে পাক খেয়ে দৌড়াতে থাকে। সে এতটাই উত্তেজিত হয় যে জোরে ঘেউঘেউ শুরু করে।

‘থামো!’ বব আদেশ করে। ‘কেবল দরকারের সময়ই আমরা ঘেউঘেউ করব। তুমি যদি সত্যিই ভেড়াদের ভয় পাইয়ে দাও তাহলে ওরা সাবাই ভাগবে এবং ওদের ফিরিয়ে আনা তখন কষ্টকর হবে। জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে, খামারে ফিরে যাও। ’

শ্যাডো লজ্জা পায়। সে খামারে মুরগি, শুকর আর হাঁসের ভিড়ে ফিরে যেতে চায় না। সে বাইরের এই আলো ঝলমল রোদেলা পাহাড়ে বড় কুকুরদের সঙ্গে থাকতে চায়। তাই এরপর সে আর একটি বারের জন্যেও ঘেউঘেউ করে না, যদিও কাজটা করতে তার খুবই ইচ্ছে হয়।

সেই তিনটে কুকুর শিগগিরই ভেড়াগুলোকে মাঠের বাইরে নিয়ে যায় এবং তীরের কাছাকাছি নামে। এবার প্রতিটা ভেড়াকে সরু কাঠের গুঁড়ি পার হতে হবে। টিঙ্কার সেখানে পাহারায় আছে। ভেড়ারা সেতু পার হতে চায় না, তীরের কাছে গিয়ে ওরা সবাই হুড়াহুড়ি শুরু করে। কিন্তু টিঙ্কার ওদের জন্য তৈরি ছিল। সে একটা ভেড়াকে সরু সেতুটা পেরিয়ে যেতে তাড়া দেয়—এবং বাকিরাও পার হতে শুরু করে।

‘ভেড়ারা একে অন্যের অনুসরণ পছন্দ করে,’ দাঁত বের করে হেসে ড্যান্ডি বলে, তাতে ওর সবগুলো সাদাদাঁত দেখতে পাওয়া যায়। শ্যাডো প্রথমে ভাবে ড্যান্ডি বুঝি তাকে দেখে দাঁত খিঁচাচ্ছে, কিন্তু ওর লেজ নাড়া দেখে বুঝতে পারে, তার ধারণা ভুল। শ্যাডোও ড্যান্ডিকে দেখিয়ে লেজ নাড়ে।

‘দেখবে, একবার একটা কি দুটা ভেড়াকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারলে তুমি একেবারে নিশ্চিত থাকতে পারো বাকিগুলোও তাদের অনুসরণ করবে। ’

‘বুঝেছি’, শ্যাডো বলল ‘দেখো—ওদিকে একটা ভেড়া তীর ছেড়ে উল্টা দিকে যাচ্ছে!’—কথাটা বলেই সে দুষ্ট ভেড়াটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে, এবং সেটাও অন্যদের সঙ্গে সেতু পার হয়।

‘ভালো ছেলে!’ ড্যান্ডি বলে, এবং খুশিতে আটখানা হয়ে শ্যাডোর প্রায় পানিতে পড়ে যাবার মতো অবস্থা হয়। ভেড়ারা পাশের ঝোঁপের দিকে ছোটে, তাদের পেছনে তখন রাফে এবং বব। টিঙ্কার এবং ড্যান্ডি পাশাপাশি থেকে ওদের ছড়িয়ে পড়তে দেয়, যাতে ওরা সবাই ঝোঁপের ফাঁক গলে একে একে এগিয়ে যেতে পারে। শ্যাডো যতটা সম্ভব ড্যান্ডিকে সাহায্য করে, এবং ভেড়াগুলো খুব যত্ন সহকারে লাফিয়ে ফাঁকা জায়গাটা পেরিয়ে যায়।

‘ওদের সঙ্গে যাও, ছোট্ট ছানা, এবং দেখো ওদেরকে একত্রে রাখতে পারা যায় কিনা,’ ড্যান্ডি বলে। তাই শ্যাডোও ফাঁকটার ভেতর দিয়ে লাফ দেয় এবং ভেড়াদের ঘিরে দৌড়ে ড্যান্ডির কথামতো তাদের দলবদ্ধ রাখতে চেষ্ট করে।

কাজটা আসলেই খুব শক্ত কারণ পালে অসংখ্য ভেড়া, এবং শ্যাডো একটাকে জায়গামতো ফিরিয়ে আনার পর অন্যটা দৌড় দেয়, এবং তাকে সেটাকেও ফিরিয়ে আনতে হয়।

এধরনের কাজে অভ্যস্ত নয় বলে সে খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে এবং হাঁপিয়ে ওঠে! ড্যান্ডি ফাঁকগলে লাফ দেয় এবং দেখে ছানাটি প্রাণপণ চেষ্টা করছে। সবগুলো ভেড়া এখন মাঠে, কিন্তু তারপরও শ্যাডো তাদের দলবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওর কাণ্ড দেখে বব এগিয়ে আসে এবং ওকে খাবলে ধরে। ‘থামো!’ সে বলে। ‘তুমি এসব কী করছো? এখন আর ভেড়াগুলোর দল বেঁধে থাকার দরকার নেই। ঘাস খাবার জন্য ওদের একা ছেড়ে দাও। ’

‘ঠিক আছে, বব। কাজটা পারে কিনা তা দেখতে আমিই ওদের একত্র করতে বলেছিলাম। ’ ড্যান্ডি খেকিয়ে ওঠে ‘ওদের যেতে দাও, শ্যাডো। তুমি ভালোই পেরেছো। ’

‘আমি কী ভালো করেছি, দয়া করে বলো বব?’ শ্যাডো জানতে চায়। খেপাটে মঙগ্রেলটা এতটাই চিন্তিত ছিল যে ওর মুখ থেকে ভালো কোনো কথা বের হয় না।

‘কাজেকর্মে তুমি খুব একটা খারাপ না,’ রাখালের দিকে দৌড়ে যাবার সময় বব বলে, মেষ পালক এখন পাহাড়ের দিকে উঠে আসছে, তার হয়ে কুকুরেরা ভেড়াদের এখানে নিয়ে আসতে পারায় সে খুব খুশি।

‘আমি খুব একটা খারাপ না!’ দ্রুত লেজ নাড়তে নাড়তে শ্যাডো চেঁচিয়ে ওঠে। ‘বব বলেছে, আমি খুব একটা খারাপ না! কথাটা জনিকে বলতে হবে। সে খুব খুশি হবে!’

এবং এরপরই পুঁচকে কুকুর ছানাটা পাহাড় থেকে দৌড়ে নামে, ওর গোলাপী জিহ্বাটা তখন মুখের বাইরে ঝুলছে, আর আনন্দে ওর খুদে হৃদপিণ্ডটা দ্রুত ওঠানামা করছে। ‘জনি, জনি!’ সে চিৎকার করে বলে। ‘আমি খুব একটা খারাপ না! বব একথা বলেছে—আর একদিন আমি ওর মতোই দক্ষ হয়ে উঠব!’

পর্ব ৭ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad