ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২০)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২০)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



পর্ব ১৯ পড়তে ক্লিক করো

দুই সেকেন্ডের মধ্যেই প্রকাণ্ড শিপ-ডগটা ছেলেটার পাশে চলে এসে, তার হাত, মুখ, পাসহ চাটা যায় শরীরের এমন সব জায়গা চাটতে শুরু করে। জনিকে চাটার পাশাপাশি সে বিলাপ করতে থাকে, এবং ছেলেটা তার হাত দুটা দিয়ে বিশাল কুকুরটার গলা জড়িয়ে ধরে।

‘ওহ্, শ্যাডো! আমি প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি এবং খুব ভয় পেয়েছি আর এখানে একা একা পড়ে আছি। ওহ্, শ্যাডো তোমাকে খুব কাছে চাইছিলাম! আমাকে কী করে খুঁজে পেলে? শ্যাডো, আমাকে ছেড়ে যেও না। ’



খুব ধীরে ধীরে সে জনির কাছ থেকে সরে আসে। জনি খুবই ক্লান্ত এবং তখনও অঘোরে ঘুমাচ্ছে। শ্যাডো পাহাড়ের ওপর দিয়ে দৌড়ে খামারে আসে। খামারের কুকুরেরা ভয়ানক চেঁচামেচি শুরু করে। কিসের শব্দ হচ্ছে দেখবার জন্য কৃষক উঠানে আসে। শ্যাডো তার কাছে এসে কোট ধরে টানতে শুরু করে



শ্যাডো জনির পাশে বসে থাকে। প্রভুকে আবারও খুঁজে পেয়ে এখন সে সুখি। তবে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। তাকে ছেড়ে না গিয়ে সে কেমন করে জনির জন্য সাহায্য পেতে পারে? জনিকে ছেড়ে সাহায্য চাইতে না গেলে সে এখানে কাউকে খুঁজে পাবে না। ছেলেটা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে এবং একা পড়ে রয়েছে। শ্যাডো তাকে ছেড়ে যেতে পারছে না। ওর মাথা থেকেও রক্ত ঝরছে। শ্যাডো আলতো করে ক্ষতের জায়গাটা চেটে পরিষ্কার করে। ওম পাবার আশায় ছেলেটা কুঁকড়ে শ্যাডোর খুব কাছাকাছি হয়, কারণ ওর শরীর ভীষণ ঠান্ডা হয়ে পড়েছিল।

শ্যাডো যতটা পারা যায় ওর কাছাকাছি হয়ে বসে থাকে। খুব বুঝতে পারে সে ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। খুব ভালো। এখন চারপাশ অন্ধকার হতে শুরু করেছে। শ্যাডো জনির নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পায় এবং বুঝতে পারে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। সম্ভবত কিছুক্ষণের জন্য সে ছেলেটাকে ছেড়ে যেতে পারে এবং সাহায্যের জন্য ল্যাংডনের খামারে যেতে পারে?

খুব ধীরে ধীরে সে জনির কাছ থেকে সরে আসে। জনি খুবই ক্লান্ত এবং তখনও অঘোরে ঘুমাচ্ছে। শ্যাডো পাহাড়ের ওপর দিয়ে দৌড়ে খামারে আসে। খামারের কুকুরেরা ভয়ানক চেঁচামেচি শুরু করে। কিসের শব্দ হচ্ছে দেখবার জন্য কৃষক উঠানে আসে। শ্যাডো তার কাছে এসে কোট ধরে টানতে শুরু করে।

কৃষকের হাতের লণ্ঠনটা নামিয়ে রাখে এবং বিশাল শিপ-ডগটাকে দেখতে পায়। ‘আরে! এটা কি জনির শ্যাডো না!’ সে বিস্ময়ে চেঁচিয়ে ওঠে। ‘তুমি এখানে কী চাও, শ্যাডো?’

শ্যাডো ঘেউ ঘেউ করে ওঠে এবং খামারের দরজার দিকে দৌড়াতে শুরু করে। কৃষক তখনই বুঝতে পারে, শ্যাডো চাইছে সে তাকে অনুসরণ করুক। সে খামার ঘরে ফিরে গিয়ে একটা কোট নিয়ে আসে। এরপর শ্যাডোর পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে।

‘খুব দ্রুত যেও না!’ সে বলে।   ‘তোমার মতো আমি পথ দেখে চলতে পারি না!’

কিন্তু শ্যাডো জনির কাছে ফিরে যাবার জন্য ধৈর্যহারা হয়ে পড়ে। সম্ভবত ছেলেটা জেগে উঠেছে এবং ওকে খুঁজছে। ও এখন খুবই বিপর্যস্ত!

শীঘ্র শ্যাডো এবং কৃষক আঘাত পাওয়া ছেলেটার কাছে চলে আসে। জনি জেগে ওঠে এবং কাঁপতে থাকে, তার পাশে লণ্ঠনটা জ্বলতে দেখে অবাক হয়। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হবার কারণে সে গোঙাতে শুরু করে।

‘ঠিক আছে, বুড়ো ছেলে, তুমি তাহলে পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েছ, তাই না?’ কৃষক ল্যাংডন বলে। ‘আমি তোমাকে আমার খামারে নিয়ে যাচ্ছি। তোমার কুকুর আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। আহ্, ও একটা বিস্ময়, তোমার এই কুকুরটা!’

‘ওই-ই আমাকে খুঁজে বের করেছে, জনি বলে। ‘আহ্, ওর ঘেউ ঘেউ শোনার পর খুব খুশি হয়েছিলাম। ওটা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে মধুর শব্দ!’

কৃষক আলতো করে বয়ে ছেলেটিকে তার খামারে নিয়ে যায়। মিসেস ল্যাংডন তার আঘাত পাওয়া মাথা এবং মচকানো হাঁটুটা ধুয়ে দেন। এরপর তিনি কী ঘটেছে তা জানাতে ওর মাকে ফোন করেন।

‘ওকে আমরা আজকের রাতটা এখানেই রাখছি,’ তিনি বলেন। ‘এখন ও পুরোপুরি ঠিক আছে, কেবল মাথায় একটু আঘাত পেয়েছে আর একটা হাঁটু সামান্য ফুলে গেছে। শ্যাডোও আমাদের সঙ্গে আছে। ’

‘শ্যাডো!’ অবাক হয়ে জনির মা বলেন। ‘ও ওখানে কী করে গেল। সে তো আজকে জনির সঙ্গে যায়নি। ’

‘ও আসাতে ভালোই হয়েছে, ওই তো জনিকে উঁচু পাহাড়ের তলার থেকে খুঁজে বের করল,’ মিসেস ল্যাংডন বলেন। ‘ও-ই আমার স্বামীকে নিয়ে যেতে এখানে আসে, আর তাই তো আমরা জনিকে খুঁজে পেলাম! ও খুব চমৎকার একটা কুকুর। ’

‘প্রিয় বুড়ো শ্যাডো!’ জনির মা বলেন, তার দু’চোখ জলে ভিজে আসে। ‘আমার জানা নেই আজকে ও না থাকলে আমরা এখন কী করতে পারতাম। ’

জনি সেই রাতে ওই খামারেই রাত কাটায়, এবং আগের মতোই শ্যাডোর সঙ্গে পা টানটান করে, বাড়তি একটা কক্ষে ঘুমায়। এই প্রথম শ্যাডো অন্য কোনো বাড়িতে ঘুমাচ্ছে, তবে যতক্ষণ জনি তার সঙ্গে আছে ততক্ষণ কোথায় ঘুমালো সেটা তার জন্য কোনো বিষয় নয়। পরদিন ছেলেটিকে বাড়িতে আনা হয়, এবং তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে। তার বাবাও তাকে স্বাগত জানায়, এবং ছেলে তাদের কাছে খুলে বলে কেমন করে দুর্ঘটনাটা ঘটল।

‘আমি তোমার কথা অমান্য করেছি, বাবা,’ সে বলে। ‘তবে অমান্য করেছি বললে ভুল হবে। পাহাড়ের ঢালের পাশে না যাবার জন্য যা যা বলেছিলে আমি আসলে তা পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এর জন্য আমি শাস্তিও পেয়েছি। আর শ্যাডো না থাকলে আমার যে কী হতো তা আমি চিন্তাও করতে পারছি না!’

‘উপকারী কুকুর, শ্যাডো! জনির বাবা বলেন, এবং কথাটা বলে তিনি বিশাল কুকুরটিকে চাপড়ে দেন। ‘উপকারী কুকুর! আমি তোমাকে দু-তিন দিনের ছুটি দিচ্ছি যাতে তুমি সেরে ওঠা পর্যন্ত জনির সাথে থাকতে পারো। ওকে দেখে রেখো, কি পারবে না?’

অবশ্যই শ্যাডো পারবে! এই কাজটা তার কাছে পৃথিবীর যাবতীয় কাজের চেয়ে প্রিয়।

২১তম পর্ব পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।