ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২১)

অনুবাদ রচনা ~ ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ | এনিড ব্লাইটন | অনুবাদ: সোহরাব সুমন (পর্ব ২১)


এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)

ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। এনিড ব্লাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর বই রচনা করেছেন।

তার চল্লিশ বছরের জীবন কালে তিনি প্রায় আটশ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা জাদু আশ্রয়ী কল্পনাকে বেছে নিয়ে ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য গল্পসমূহ হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স, এবং সেন্ট ক্লারে।

তার লেখা বইসমূহ সাংঘাতিক রকমের সফলতা অর্জন করে। এপর্যন্ত তার বই নব্বইটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার বই আজও পাঠক সমাদৃত, এপর্যন্ত তার বইয়ের ছশ’ মিলিয়েনরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

ইনডেক্স ট্রান্সলেশনামের মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক, তাদের এই তালিকায় লেনিনের পর এবং শেক্সপিয়েরের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়। ১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

শ্যাডো দ্য শিপ-ডগ

এই বইয়ের গল্প খামারে জন্মানো শিপ-ডগ প্রজাতির এক কুকুর, শ্যাডোকে নিয়ে। খামারের শিপ-ডগ জেসির তিনটি বাচ্চা হয়। যার দুটি বিক্রি করে দেয়া হয়, পরে তৃতীয়টিকেও বিক্রি করা হয়, কিন্তু সেটি বারবার ফিরে আসায়, শেষ পর্যন্ত কৃষকের ছেলে জনিকে তা রাখবার অনুমতি দেয়া হয়, এই শর্তে যে খামারের অন্যান্য কুকুরদের মতোই তাকেও জীবিকার জন্য খামারে কাজ করতে হবে।

জনি তার এই কুকুরের নাম দেয় শ্যাডো। সব সময় সে ওর সঙ্গে থাকে। বাচ্চাটিকে সে নিজেই প্রশিক্ষণ দেয়। খামারের কুকুর জেসি বাড়ি, এর আশপাশ এবং উঠান পাহারা দেয়। টিঙ্কার, রাফে, ড্যান্ডি ভেড়া রাখার কাজ করে। ওরা সবাই শিপ-ডগ প্রজাতির কুকুর। রাখাল এন্ডি’র কুকুর বব শঙ্কর প্রজাতির হলেও তাকেও ভেড়া রাখার কাজ করতে হয়। খামারের সব কুকুরের কাছ থেকেও শ্যাডো বিভিন্নভাবে আরো অনেক কিছু শেখে। তারপর একদিন এমন সময় আসে, যখন শ্যাডোর এইসব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং সাহসিকতা জনির জীবন রক্ষায় বারবার কাজে আসে।



বারো. জনি এবং ধাড়ি ছেলে

নি প্রতিদিন স্কুলে যায়। গলি দিয়ে হেঁটে, দু’ একটা খামার পেরিয়ে আসার পর, পাহাড়ের দিকে একটা গলির দিকে গেলেই ওর স্কুল।

ছেলেমেয়েদের সঠিক সময় স্কুলে আসার জন্য প্রতিদিন সকালে স্কুলের ঘণ্টা বাজে। দেরি করে স্কুলে যাওয়া জনির মোটেই পছন্দ না, এবং যতটা সম্ভব কখনো সে দেরি করে স্কুলে যায়ও না। কিন্তু এরপর অবাক করা এক ঘটনা ঘটে। সপ্তাহের প্রতিটা দিন সে দেরি করে স্কুলে আসতে থাকে!

‘তোমার কী হয়েছে, জনি?’ অবাক হয়ে শিক্ষক তাকে জিজ্ঞেস করেন। ‘এভাবে চলতে পারে না। কেন, তুমি তো সব সময় আগে আগেই আসতে—আর এখন প্রত্যেক দিন দেরি করে আসছো!’

জনি কিছুই বলে না। সে গল্পটা বলতে চায় না। নিজের দোষে সে দেরি করে স্কুলে আসছে না। দোষটা আসলে ওদের খামারে তার পাশাপাশি কাজ করতে আসা ধাড়ী একটা ছেলের।

ছেলেটার বয়স পনের, এবং তার বয়স অনুপাতে সে খানিকটা বড়। খামারের আশপাশের ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার করাই ওর কাজ—আর একদিন সকালে স্কুলে যাবার পথে সে জনির পিছু নেয়।



‘এদিকে এসো আর আমার সঙ্গে কথা বলো!’ সে আদেশ করে।
‘আমি পারব না,’ জনি বলে। ‘স্কুলে যেতে দেরি হবে। ’
‘তাতে কী?’ ধাড়ী ছেলেটা বলে। ‘তুমি এদিকে এসো এবং যা বলছি করো। ’
কিন্তু জনি আসে না—তাই টম, সেই ধাড়ী ছেলেটা ঝোপে ঢাকা বেড়া থেকে লাফিয়ে নামে এবং তাকে জাপটে ধরে।
‘আমি তোমাকে দেখিয়ে ছাড়ছি, যা বলছি তা না করলে কোনো ছেলের কী অবস্থা হতে পারে। ’ সে জনিকে ঝোপের দিকে ধাক্কা মারে এবং তাকে পেছন থেকে পাজাকোলা করে ধরে রাখে। ‘এবার এখানে শুয়ে থাকো এবং আমাকে ছয়ের নামতা শোনাও,’ সে বলে



তার ধারণা ছেলেটাকে বিরক্ত করলে ভীষণ মজা হবে। ‘আমি ওকে প্রতিদিন স্কুলে দেরি করিয়ে ছাড়ব,’ দুষ্ট ছেলেটা ভাবে। ‘এরপর সে বিপদে পড়বে!’

তাই সে জনিকে ডাকে। ‘এদিকে এসো আর আমার সঙ্গে কথা বলো!’ সে আদেশ করে।
‘আমি পারব না,’ জনি বলে। ‘স্কুলে যেতে দেরি হবে। ’
‘তাতে কী?’ ধাড়ী ছেলেটা বলে। ‘তুমি এদিকে এসো এবং যা বলছি করো। ’

কিন্তু জনি আসে না—তাই টম, সেই ধাড়ী ছেলেটা ঝোপে ঢাকা বেড়া থেকে লাফিয়ে নামে এবং তাকে জাপটে ধরে।

‘আমি তোমাকে দেখিয়ে ছাড়ছি, যা বলছি তা না করলে কোনো ছেলের কী অবস্থা হতে পারে। ’ সে জনিকে ঝোপের দিকে ধাক্কা মারে এবং তাকে পেছন থেকে পাজাকোলা করে ধরে রাখে। ‘এবার এখানে শুয়ে থাকো এবং আমাকে ছয়ের নামতা শোনাও,’ সে বলে। ‘একটা ভুল হলে, আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। ’

ঠিক আছে, অবশ্যই জনি সেটা করবে না। সে পালাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, কিন্তু টম সত্যিই খুব বলবান। একহাতে জনিকে ধরে রাখা ওর জন্য খুবই সহজ একটা কাজ। টম এক চোখ কৃষকের জন্য সজাগ রাখে, যদি হঠাৎ তিনি এসে পড়েন—কিন্তু স্বভাবতই সকালের এই সময়টাতে তিনি খামারের অপর প্রান্তে থাকেন।

শেষে অসহায় জনিকে বাধ্য হয়ে ছয়ের নামতাটা বলতে হয়। তার কোনো ভুল না হলেও, টম বলে সে ভুল করেছে, এবং তাকে আবারও প্রথম থেকে বলতে হয়।

স্কুলের ঘণ্টা থেমে যায়। ‘আমার এখন দেরি হয়ে যাবে। ’ জনি কথাটা বলে, লাফিয়ে উঠে পড়ে। ‘তুমি একটা বিশ্রী জিনিস। আমার মনে হয় ভুলভাল ঝোপ কাটতে গিয়ে শেষে বিপদে পড়বে!’

টম একটা ঘুষি মারে এবং লক্ষ্য ব্যর্থ হয়। তারপর আগের মতোই ঝোপ কাটতে শুরু করে, জনির কথা মনে পড়তেই আপন মনে দেঁতো হাসি হেসে আবারও জনিকে স্কুলে যেতে দেরি করিয়ে দেবার কথা ভাবে।

পরদিন সকালে আবারও সে জনিকে খুঁজতে থাকে। অন্যদিকে জনিও টমকে খোঁজে! টম চুপচাপ ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থেকে জনির ওপর লাফিয়ে পড়বার আগপর্যন্ত জনি ওর দেখা পায় না, আর এমনটা না করলে পুঁচকে ছেলেটিকে ওর পক্ষে পাকড়াও করাও সম্ভব হবে না। তবু, প্রতিদিনই সে নিজেকে নিরাপদ ভাবে, আর ঝাঁপিয়ে পড়া টম ওকে ছোঁ মেরে ধরে বসে।

‘এবার, আজকে সকালে তোমাকে সাতের নামতা বলতে হবে!’ জনকে ঠেসে ধরে ওর ওপর দাঁড়িয়ে পাষণ্ড ছেলেটা বলে। ‘শুরু করো—বলো। ’

এবং এভাবেই সপ্তাহ জুড়ে জনির স্কুলে দেরি হতে থাকে। স্কুলে যাবার পথে টমের হাতে ধরা না পড়ার যতই চেষ্টা করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত সে পালিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। ঘুর পথে স্কুলে যাবার একটাই কেবল রাস্তা আছে, আর ওখান দিয়ে স্কুলে যেতে গিয়েও আগের মতোই ছেলেটির স্কুলে যেতে দেরি হতে থাকে।

জনি বিমর্ষ এবং চিন্তিত হয়ে পড়ে। টমের কথা কাউকে বলা পছন্দ করছে না, কারণ গল্প বলা সে ঘৃণা করে। তবে কথাটা সে শ্যাডোকে বলে।

‘আমি আর একদিনও দেরি করে স্কুলে যেতে পারি না, শ্যাডো!’ সে বলে। ‘ওই ধাড়ী ছেলে, টম প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় আমার পথ আগলায়। আমি চাইছি তুমি আমার সঙ্গে এসে ওকে থামাবে। ’

কিন্তু শ্যাডো আসতে পারবে না, কারণ সকালের এই সময়টায় প্রতিদিন সে কাজে ব্যস্ত থাকে। তবে সে বিষয়টা নিয়ে ভাবে এবং তার কুকুর মনে এ ব্যাপারে একটা বুদ্ধি খেলে যায়। সে জানে খাবার জন্য বেলা বারোটার দিকে খামার কর্মীরা সব কাজ বন্ধ রাখে। ভালো, শ্যাডোও তখন অবসর থাকে, অন্য কুকুরেরাও। তখন সে ধাড়ী ছেলে টমকে শাস্তি দেবে, এবং আর যাতে কখনো জনিকে বিরক্ত না করে সেজন্য তাকে মাফ চাইতে বলবে।

শ্যাডো তার এই পরিকল্পনার কথা অন্য চারটি কুকুরকে বলে। তারা সবাই তাদের লেজ নাড়ে এবং সাহায্য করবে বলে সম্মতি জানায়। সেদিন সকালে পাশের খামারে যাবার সময় শ্যাডো টমের ওপর নজর রাখে। বেলা বারোটার দিকে সে যে নালার পাশে কাজ করছিল সেই জায়গাটা জনিদের খামার থেকে খুব বেশি দূরে নয়। খুব ভালো!

বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শ্যাডো—রাফে, ড্যান্ডি, টিঙ্কার, এবং ববের উদ্দেশ্যে ডেকে ওঠে। ভেড়ারা তখন পাহাড়ের দিকে নিরাপদেই ছিল। খাবার খেতে রাখাল তার কুটিরে গিয়ে ঢোকে। এই অল্প সময়ের জন্য কুকুরদের কোনো কাজ ছিল না।

টম যেখানে তার কাজের যন্ত্রপাতিগুলো রেখে, খাবার খেতে খামারে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল, ওরা সবাই সেদিকে ছুটতে শুরু করে। মাঠ থেকে ঘুরে হাঁটতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরগুলো ছেলেটিকে ঘিরে ধরে।

পর্ব ২২ পড়তে ক্লিক করো

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।