ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

বাতিঘরের চিত্রাংকন উৎসব

মুক্তিযুদ্ধকে জানছে শিশুরা, আঁকছেন অভিভাবকরাও

ইচ্ছেঘুড়ি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
মুক্তিযুদ্ধকে জানছে শিশুরা, আঁকছেন অভিভাবকরাও ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রায় দু’মাস ধরে চলছে ছবি আঁকা নিয়ে একটি উৎসব, যে উৎসবটি আসলেই ব্যতিক্রম। কারণ, এখানে প্রচলিত ফরমেটকে ছাপিয়ে শিশুদের সঙ্গে অাঁকতে বসে যাচ্ছেন তাদের অভিভাবকরাও।

ছোট-বড় সবাই মিলে রং-তুলির আঁচড়ে কাগজে ফুটিয়ে তুলছেন সোনার বাংলাদেশ, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি, আমাদের জাতীয় পতাকা আর অতি অবশ্যই বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ গৌরব-অহঙ্কার মুক্তিযুদ্ধকে।

আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অস্ত্র হাতে লড়াই করা বীর মুক্তিযোদ্ধা-বীরাঙ্গনা আর ত্রিশ লাখ শহীদও। এক কথায় প্রিয় বাংলাদেশের সবকিছুই ফুটে উঠছে ছবির মধ্য দিয়ে। হবেই বা না কেন?, ছবি আঁকা তথা পুরো উৎসবের বিষয়ই যে প্রিয় বাংলাদেশ।

শিশুদের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্তারে ‘ক্রিসেন্ট-বাতিঘর চিত্রাংকন উৎসব’২০১৫’ শীর্ষক এ উৎসব চলছে দেশজুড়ে। আয়োজক বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়, টাইটেল স্পন্সর ক্রিসেন্ট এবং গণমাধ্যম সহযোগী এটিএন বাংলা ও সমকাল।
 
পর্যায়ক্রমে ৮টি বিভাগীয় অঞ্চল ও ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ মোট ৯টি অঞ্চলে চলছে এ জাতীয় চিত্রাংকন উৎসব, ইতোমধ্যেই যার ৭টি আঞ্চলিক উৎসব সম্পন্ন হয়ে গেছে।

৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের সঙ্গে এ উৎসবে ছবি আঁকছেন তাদের অভিভাবকরা। আর উৎসবের অংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা শিশুদের শোনাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প। গুণি চিত্রশিল্পীরা শিশুদের সঙ্গে ছবি আঁকছেন। পাশাপাশি ছবি আঁকা বিষয়ে শিশুদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। অংশগ্রহণকারী শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সনদের সঙ্গে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বই উপহার দেওয়া হচ্ছে।
 
আবার যে সকল শিশু সরাসরি উৎসবে অংশ নিতে পারবে না, তাদেরকেও ডাকযোগে আঁকা ছবি পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছে বাতিঘর। সেক্ষেত্রে ছবির সঙ্গে শিশুর নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, বয়স, ঠিকানা, ফোন নম্বর অবশ্যই দিতে হবে। ডাকযোগে ছবি পাঠানোর শেষ সময় ৩০ জানুয়ারি।

ডাকযোগে ছবি পাঠানোর ঠিকানা: বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়, ১/৪, ব্লক-বি, লালমাটিয়া (উদ্দীপন বিদ্যালয়), ঢাকা।

আঞ্চলিক উৎসবে অংশ নেওয়া শিশুদের আঁকা ছবি থেকে বাছাই করা সেরা দুইশ’ ছবি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায় দু’দিনের প্রদর্শনী করা হবে আগামী ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্যালারি চিত্রকে। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রকাশ করা হবে উৎসব স্মরণিকা।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর জামালপুরের দেউড়পার চন্দ্রা ডিটিআরসি উন্নয়ন সংঘ প্রাঙ্গনে ময়মনসিংহ বিভাগীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শুরু হয়। এরপর গত ৭ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি শিশু একাডেমিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় উৎসব, ১০ জানুয়ারি রাজশাহী বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গনে রাজশাহী বিভাগীয় উৎসব, ১৩ জানুয়ারি রংপুর সরকারি গণগ্রন্থাগার সংলগ্ন মাঠে রংপুর বিভাগীয় উৎসব, ১৬ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিলেট বিভাগীয় উৎসব, ১৮ জানুয়ারি বরিশাল নগরীর হিরণ স্কয়ারে বরিশাল বিভাগীয় উৎসব, ২০ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে ঢাকা বিভাগীয় উৎসব এবং ২৩ জানুয়ারি ঢাকার লালমাটিয়ার নিউ কলোনি ক্রীড়াচক্র মাঠে ঢাকা মেট্রপলিটন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আয়োজক বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের পরিচালক তামান্না সেতু জানান, এ পর্যন্ত ৭টি আঞ্চলিক উৎসবে প্রায় আড়াই হাজার শিশু ও তাদের অভিভাবকরা অংশ নিয়েছেন। বাকি দুই অঞ্চল এবং জাতীয় পর্যায়সহ সব মিলিয়ে হাজার পাঁচেক আঁকা ছবি আশা করছি আমরা। ছবিগুলোর ভেতর থেকে বাছাই করা সেরা ছবিগুলো নিয়ে আগামী ১২-১৩ ফেব্রæয়ারি ২০১৬ রাজধানীর গ্যালারি চিত্রকে দু’দিনের যে প্রদর্শনী হবে, সেখানেও আসবেন আরও অনেকে।   
   
বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ চিত্রাংকন উৎসবের সবগুলো আয়োজনে শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

সেতু বলেন, যেমন, গত শনিবার (২৩ জানুয়ারি) লালমাটিয়ার নিউ কলোনি ক্রীড়াচক্র মাঠে ঢাকা মেট্রোপলিটন আঞ্চলিক উৎসবে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশাঘেরা সকালেও শতাধিক শিশু স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রিয় বাংলাদেশের ছবি আঁকায় অংশগ্রহণ করে। শিশুদের সঙ্গে অনেকের অভিভাবকেরাও অংশ নেন ছবি আঁকায়। এটিও আমাদেরকে উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত করছে এটা ভেবে যে, শত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে নতুন প্রজন্ম, দেশকে গড়ে তুলবে আপন আপন স্বপ্নের মহিমায়।  

পাশাপাশি উৎসবের অতিথি ক্রিসেন্ট গ্রæপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা তারেক আলী, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী মোহাম্মদ লিয়াকত। মুক্তিযোদ্ধা আলী মোহাম্মদ লিয়াকত শিশুদের উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন।  

তাইতো বলতে পারি, হাজার হাজার শিশু-অভিভাবকদের মধ্যে ছবি-মুক্তিযুদ্ধের গল্পের মাধ্যমে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধকে আর একবার পৌঁছে দিতে পারছি আমরা। এ অর্জন কিন্তু কম নয়!

বাতিঘরের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান শোয়েব বাংলানিউজকে বলেন, বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকেই আমরা শিশুদের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্তারে কাজ করে চলেছি নিয়মিত। এ লক্ষ্যে আমরা শিশুদের নিয়ে বছরের বিভিন্ন সময় নানারকম অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকি। তার অংশ হিসেবে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আমরা গত বছর আয়োজন করেছিলাম বাতিঘর চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী’২০১৪। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আরও বড় পরিসরে আমাদের আয়োজন ক্রিসেন্ট-বাতিঘর জাতীয় চিত্রাংকন উৎসব’২০১৫।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম শিশুদের চিত্রাংকন নিয়ে এমন উৎসবের আয়োজন, যেখানে প্রতিযোগিতা ভাবনার বাইরে এসে শিশুরা মনের আনন্দে ছবি আঁকছে, অভিভাবকরাও অংশ নিচ্ছেন ছবি আঁকায়। জাতীয় পর্যায়ের একটি উৎসব আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে আমরা শুধুমাত্র ঢাকায় (রাজধানীতে) একটি অনুষ্ঠান করার ভেতরে আটকে থাকতে চাইনি। আমরা চেয়েছি, যতোটা পারা যায়, আমাদের সামর্থ্যের ভেতরে থেকে সত্যিকার অর্থেই একটি জাতীয় উৎসবের আয়োজন করতে। সে লক্ষ্যে আমরা সারাদেশকে ৯টি অঞ্চলে ভাগ করে এবারের উৎসব চালিয়ে নিচ্ছি।

শোয়েব-সেতুর দৃঢ় উচ্চারণ, আমরা জানি, এতেও দেশের সব অঞ্চলের শিশুরা এখানে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়তো পাবে না। তবে কেন্দ্র থেকে প্রান্তের দিকে যাওয়ার শুরুটা করে দিয়েছি আমরা। ভবিষ্যতে আরও বেশি অঞ্চলে পৌঁছানোর প্রত্যয়ও রাখি আমরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।