জামাল ও কামাল দুই বন্ধু। তারা গ্রামে বসবাস করতো।
একদিন তারা দু’জনে একটি মাঠে জমিতে লাঙল দিচ্ছিল। লাঙলের ফলাতে বেঁধে একটি পুরাতন লোহার বোতল মাটির উপরে উঠে এলো। বোতলটি দেখতে ছিল অদ্ভুত। কামাল বোতলটি খুলতে চাইলে জামাল তাকে বাধা দিলো। জামাল বললো, বোতলটি খুবই পুরাতন। এটা খোলা ঠিক হবে না। এর মধ্যে এমন কিছু আছে যা আমাদের ক্ষতিও করতে পারে। কিন্তু কামাল জামালের কথা মোটেও শুনলো না। সে বললো, এতে যাই থাক না কেন, আমি এটি খুলে দেখবো এর মধ্যে কি আছে। তারপর কামাল বোতলের মুখটি খোলার জন্য চেষ্টা করতে থাকলো।
কামাল বোতলটি যেই খুললো, আর অমনি বোতলের ভিতর থেকে একটি ভয়ঙ্কর দৈত্য বের হয়ে এলো। দৈত্যকে দেখে তারা খুব ভয় পেয়ে গেলো। দৈত্য বললো, তোমরা কোনো ভয় পেও না। আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করবো না। সে আরও বললো, আজ থেকে একশো বছর আগে একজন দুষ্টু যাদুকর আমাকে এই বোতলের মধ্যে বন্দি করে মাটির মধ্যে পুঁতে রেখেছিল। আমি খুব খুশি হয়েছি তোমরা আমাকে মুক্ত করেছো। আমি তোমাদের এর জন্য পুরস্কার দিতে চাই। তোমরা এখানে দাঁড়াও আমি এক্ষুণি আসছি। এ কথা বলে দৈত্যটি চলে গেলো।
জামাল ও কামালের মধ্যে যেসব কথোপকথন হয়েছে দৈত্যটি বোতল থেকে সব কথাই শুনেছিল। দৈত্যটি জানতো কামালই তাকে এই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছে। বোতলের মুখ খোলার বিষয়ে জামালের আপত্তি ছিল।
যাইহোক, কিছুক্ষণ পরেই দৈত্যটি আবার তাদের কাছে ফিরে এলো। হাতে ছিল দু’টি হাঁড়ি। একটি হাঁড়ি খুব চকচকে স্বর্ণের মতো দেখতে আর অন্যটি খুব পুরাতন জং পড়া লোহার হাঁড়ি।
হাঁড়ি দু’টির মধ্যে কি ছিল তা দৈত্য ছাড়া কেউ কিছু জানতো না। দৈত্য হাঁড়ি দু’টি তাদের দেখিয়ে বললো, এর মধ্যে রয়েছে মূল্যবান জিনিস। এগুলো তোমাদের জন্য এনেছি। দৈত্য পুরস্কার হিসেবে জামালকে দিলো চকচকে হাঁড়িটি আর কামালকে দিল জং পড়া পুরাতন লোহার হাঁড়ি।
দৈত্য তাদের বললো, তোমরা হাঁড়ি দু’টি এখানে খুলবে না। এগুলো বাড়িতে নিয়ে যাও। বাড়িতে গিয়ে খুলবে। এরপর দৈত্যটি তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। সে আর ফিরে আসেনি।
জামাল ও কামাল হাঁড়ি দু’টি নিয়ে বাড়িরে উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলো। চকচকে হাঁড়িটি না পেয়ে কামালের ভীষণ মন খারাপ হলো। কামালের বিশ্বাস ছিল, ওই চকচকে হাঁড়ির ভিতরে আছে মূল্যবান সম্পদ। সে জামালকে বললো, আমি নিজের ইচ্ছায় বোতলটি খুলেছি। তোমার কথা মতো বোতলটি না খুললে দৈত্যটি বের হতে পারতো না। চকচকে হাঁড়িটি আসলে আমারই প্রাপ্য। দৈত্যটি ভুল করে হাঁড়িটি তোমাকে দিয়েছে। তোমার উচিত হাঁড়িটি পাল্টে নেওয়া।
বাড়িতে ফেরার পথে নানান যুক্তি দেখিয়ে কামাল জামালের সঙ্গে ঝগড়া করতে থাকলো। আর বারবার সে জামালকে হাঁড়িটি পাল্টে ফেলার জন্য অনুরোধ করতে থাকলো। জামালের সম্পদের প্রতি কোনো লোভ ছিল না। তাই অবশেষে জামাল কামালকে বললো, তুমি যখন বারবার বলছো তাহলে নাও হাঁড়ি দু’টি আমরা পাল্টে ফেলি। এ কথা শুনে কামাল খুব খুশি হলো, আর সঙ্গে সঙ্গে হাঁড়িটি পাল্টে ফেললো।
কামাল মনে মনে ভাবলো, আজ আমার খুব আনন্দের দিন। হাঁড়ির ভিতর যে সম্পদ আছে তা আমার খুব কাজে লাগবে। আমার কোনো অভাব থাকবে না। সে হাঁড়িটি নিয়ে দ্রুত বাড়িতে চলে গেলো। হাঁড়ির মধ্যে কী আছে তা দেখার জন্যে ঘরের মেঝেতে তাড়াতাড়ি বসে পড়লো। সে আগ্রহসহকারে হাঁড়ির ঢাকনাটি খুলে ফেললো। আর অমনি হাঁড়ির ভিতর থেকে ভয়ঙ্কর একটি সাপ বের হয়েই কামালের কপালে ছোবল দিলো। সাপের দংশনের সঙ্গে সঙ্গে কামাল মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা গেলো।
এদিকে জামাল হাঁড়িটি নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়িতে পৌঁছালো। তারপর জামাল ঘরের মধ্যে গিয়ে হাঁড়িটির ঢাকনাটি আস্তে আস্তে খুলে দেখলো যে, হাঁড়িটি মণি মুক্তায় ভরা। এই মনি মুক্তা দেখে জামাল ভীষণ খুশি হলো। কয়েকটি মণিমুক্তা বাজারে বিক্রি করে জামাল প্রচুর টাকা পেলো। তার আর কোনো অভাব থাকলো না। সে পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে লাগলো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
এএ