ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক গল্প

প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান

আজ প্ল্যানচেটের আসর বসার কথা ফয়সালের বাসায়। আত্মা হাজির করা হবে।

মৃত মানুষের আত্মা! তার থেকে বিভিন্ন কথা শোনা হবে। অতীতের কথা, ভবিষ্যতের কথা। রাত বারোটার পর বসবে আসর।

রফিক একটু আগেভাগেই চলে এসেছে। এখন এগারোটা বাজে। আসলে রফিক একটু এক্সাইটেড ছিল, আগে কখনো সে আত্মা হাজির করা দেখেনি। লোকমুখে শুনেছে। বিখ্যাত ব্যক্তিদেরও নাকি প্ল্যানচেটের
প্রতি অনেক আগ্রহ ছিলো। রবি ঠাকুর কয়েকবার এ আসরের আয়োজন করেছিলেন।

রফিকের  বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝি অবস্থান। মাঝে-মধ্যে মনে হয় এগুলো আসলে ফাঁকি। আবার মাঝে-মধ্যে মনে হয় জগতে তো কত কিছু আছে রহস্যময়। সবকিছুর ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারেনি। বিজ্ঞান ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলো পাশ কেটে গেছে অত্যন্ত কৌশলে। তবে আজ একটা ডিসিশনে আসবে রফিক। নিজ চোখে দেখা জিনিস আর পরের কাছে শোনা কথা এক না। এতোদিন লোক মুখে শুনেছে সব। আজ
নিজচোখে দেখার সুযোগ এসেছে।

ফয়সালের প্যারানরমাল ব্যাপারগুলোর প্রতি অনেক আগ্রহ। কিছুদিন পরপরই কিছু লোক নিয়ে আসে যাদের নাকি প্যারানরমাল ক্ষমতা আছে।
বেশিরভাগই ভুয়া ছিলো। তবে গতমাসের একটা ঘটনা। যেটার ব্যাখ্যা রফিক আজও বের করতে পারেনি। এক সন্ধ্যায় ফয়সালের কল পেয়ে তার বাসায় আসে। এসে দেখে কোথা থেকে লিকলিকে ফরসা একটা লোক ধরে নিয়ে এসেছে সে। তার নাকি অদ্ভুত সব ক্ষমতা আছে। লোকটাকে দেখে একদমই পছন্দ হয়নি রফিকের। ফ্রড টাইপ
লোক। সে তাকে জিজ্ঞেস করে

- তোমার নাম কি ?
- ধলু মিয়া
- এটাই কি আসল নাম ?
- জ্বে না, বাপ-মা শখ করে রাইখছে।
- তোমার নাকি কি সব অদ্ভুত ক্ষমতা আছে?
- জ্বে , আমি ভবিষ্যত কইতে পারি।

ফয়সাল  জাভেদকে নিয়ে এসেছে। জাভেদ ওর বন্ধু। পেশায় ডাক্তার। তার এসব প্যারানরমাল বিষয়গুলোতে বিশ্বাস নেই। কিন্তু শখ করে এসেছে দেখতে হয়তো।
স্যার একটা কথা বলবো?
-বল কি কথা।
কাচুমাচু করে কিছুক্ষণ পড়ে বলে, ওই স্যারের সামনে বিপদ, অনেক বিপদ।
- কোন স্যার?
জাভেদের দিকে আঙুল নির্দেশ করে সে।
- কীসের বিপদ ?
- খারাপ আত্মার নজর আছে, লাশকাটা ঘর থেকে লাগছে নজর।
কি সব পাগল-ছাগল ধরে নিয়ে এসেছিস ফয়সাল তুই, আমি গেলাম। এসব নাটক-ফাটক দেখার কোনো টাইম নেই। রফিক তাকে বুঝিয়ে থামায়। থামে কিন্তু বিরক্তি ঠিকই প্রকাশ পাচ্ছে তার মুখ দিয়ে।

- স্যার সেই খারাপ আত্মা স্যারকে মেরে ফেলবে। এমনভাবে মারবে কেউ সন্দেহ করবে না। তবে আমি একটা মাদুলি দেবোব। সেটা হাতে দিলে আগামী পূর্ণিমা রাতে সেটা তাকে ছেড়ে চলে যাবে।

ওই তোর ফালতু কথা রাখ। আর একটা কথা বলবা না। চিৎকার করে ওঠে জাভেদ।

মাদুলি দিয়ে টাকা খাওয়ার কিছু ধান্দা। আমার মাদুলি লাগবে না। টাকা
লাগলে বল এমনিতেই দিচ্ছি। জাভেদ মানিব্যাগ থেকে দু’টো পাঁচশো টাকার নোট বের করে ধলু মিয়ার দিকে ছুড়ে মারে। ধলু মিয়া যাওয়ার আগে ফয়সালের কাছে একটা মাদুলি দিয়ে যায়। টাকাগুলো সে নেয়নি। ফয়সালের থেকেও না। ফয়সাল জাভেদকে অনেক বুঝিয়ে ও মাদুলি পরাতে পারেনি। এর এক সপ্তাহ পরই জাভেদ এক সড়ক  দ‍ুর্ঘটনায় মারা যায়।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।