ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

ধারাবাহিক গল্প (পর্ব ৩)

প্ল্যানচেট | শোয়েব হাসান

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬
প্ল্যানচেট | শোয়েব হাসান

[পূর্ব প্রকাশের পর]

অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলো সবসময় আমাদের আশপাশেই ঘটছে। দেখা যাবে কেউ হয়তো টিভি দেখছে একান্ত মনে, বা কম্পিউটারে কাজ করছে।

সেই ঘরেই তার ঘাড়ের উপরে নিঃশ্বাস ফেলছে অশরীরী কোনো কিছু। উষ্ণ বিছানায় আরামে নাক ডাকছে কেউ। খাটের পাশেই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে কোনো পিশাচ।
রফিক কখন এলি ?
আনমনা হয়ে গিয়েছিল রফিক, গলা শুনে চমকে ওঠে।
এইতো কিছুক্ষণ আগে।
আরে বলিস না, পুরো শরীর রক্ত লেগে একাকার। তোর ভাবিরও একই অবস্থা। তাই আসর বসার আগে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
রক্ত, কীসের রক্ত? প্রশ্নটা করতে গিয়ে ও চেপে যায়। বলার মতো হলে ফয়সাল নিজেই বলতো। হয়তো মুরগি কিনে এনেছিল, সেগুলো জবাই দিতে গিয়ে গায়ে রক্ত লেগেছে। টিভি ছাড়লো ফয়সাল। রিমোট নিয়ে একটার পর একটা চ্যানেল চেঞ্জ করে যাচ্ছে। তার এই একটা রোগ। কোনো চ্যানেল দুই সেকেন্ডের বেশি দেখবে না। অস্থির প্রকৃতির।
ভার্সিটির টিচারদের অস্থিরতা মানায় না। রফিকের মনে হয়, যারা বউয়ের একান্ত বাধ্যগত, তারা রিমোট পেলে তার উপর খবরদারি শুরু করে। ভাবখানা এমন পুরো বিশ্ব আমার হাতের মুঠোয়, আমি যখন যা খুশি করবো, কে ফিরায় আমায়।
তুমি আবারো ঘন ঘন চ্যানেল চেঞ্জ করছো ? তোমার কারণে একটা রিমোটও দশ দিনের বেশি টেকে না। এদিকে দাও বলছি। বলেই বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে রিমোট ফয়সালের হাত থেকে কেড়ে নেয় রত্না। তার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি। ফয়সাল পরাজিত বাঘের মতো লেজ গুটিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কোনো মোঘল সম্রাটও বোধহয় তার রাজ্য হাতছাড়া হয়ে গেলে এমন মন খারাপ করে বসে থাকতো না।
রত্নার চোখ যায় রফিকের দিকে। সে লজ্জায় মাথা নিচু করে। রফিককে আগে দেখেনি সে। দেখলে এমন আচরণ হয়তো করতো না। বাইরের মানুষের সামনে সব আচরণ করা যায় না। প্রথা বিরুদ্ধ। রত্নাকে অনেক সুন্দর লাগছে। গোসল করলে মেয়েদের এমনিতেই সুন্দর লাগে। পবিত্র একটা ভাব চলে আসে মুখে শরীরে। রত্না ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
মরিয়ম?
মরিয়ম যেন এই ডাক শোনার জন্যই প্রস্তুত ছিল। সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়।   রফিক নিশ্চিত এতক্ষণ দরজার ওপাশে দাঁড়ানো ছিল। কেমন রহস্যময় মেয়েটির আচার আচরণ।
জ্বি খালাম্মা।
মেহমান এসেছে, খেতে দিয়েছ কিছু?
জ্বি, শরবত দিছি।
শুধু শরবত দিয়েছ কেন। মেহমানকে শরবত ও চা দিলে সঙ্গে আরও কিছু দিতে হয়। মনে থাকবে?
জ্বি, আচ্ছা।
গ্লাসটা নিয়ে যাও।
গ্লাসে অল্প কিছু পরিমাণ শরবত অবশিষ্ট ছিল, সেটা রত্নার চোখে পড়ে। সে ডাক দেয় মরিয়মকে।
মরিয়ম তুমি কি রুহ আফজা দিয়ে শরবত বানিয়েছো?
জ্বি।
ঘরে তো রুহ আফজা থাকার কথা নয়, তুমি কোথায় পেলে?
কোনো জবাব দেয় না মরিয়ম, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। রত্নাকে একটু চিন্তিত দেখায়।
সে উঠে ভিতরে যায়। কোনো কাজের কথা মনে পড়েছে হয়তো। সঙ্গে সঙ্গে মরিয়মও যাচ্ছে। চমকে ওঠে রফিক। মরিয়মের কাঁটা দাগ আগে কোথায় দেখেছিল সেটা মনে পড়েছে। ধলু মিয়া, ধলুমিয়ার কপালে ঠিক এমনই একটা দাগ ছিল। রফিকের মনে খারাপ কিছু ঘটার চিন্তাটা আবার ফিরে আসে। অশুভ কোনো কিছুর ভয়ে তার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। ভিতর থেকে অনুভব করছে পালাও রফিক, বাঁচতে চাইলে পালাও ।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
এএ

** প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান

** প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।