ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

শেষ পর্ব

প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান

[শেষ পর্ব]

প্ল্যানচেটের আসর রেডি। ডাইনিং টেবিলে একটা কালো কাপড় বিছানো।

চারটা চেয়ার রেখে বাকিগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মাঝখানে একটা মোমবাতি। একটা প্যাড রাখা মরিয়মের সামনে, আত্মারা সব প্রশ্নের উত্তর প্যাডে লিখে দেবে। মরিয়ম নাকি লেখাপড়া জানে না। তাহলে সে লিখবে কীভাবে ? দেখা যাক কি হয়।
ঘরের বাতি নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালানো হলো। ফয়সাল একটা মন্ত্র পড়ছে, কোথা থেকে যেন সব নিয়ম-কানুন শিখে এসেছে। আসর পরিচালনা করছে সে। মরিয়ম তার চেয়ারে গম্ভীরভাবে বসে আছে। একসময় তার মুখের ভাব পরিবর্তন হতে শুরু করলো। কঠিন একটা ভাব। ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো কিছু যে উপস্থিত হয়েছে
রফিকের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে দিচ্ছে। অশরীরি কিছু, চোখে দেখা যায় না।

মরিয়ম সোজা হলো। তার চোখের পলক পড়ছে না। রত্না ভীত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফয়সালের মন্ত্র পড়া শেষ। সে ঘোষণা দিলো আমাদের যা যা প্রশ্ন আছে সেগুলো জেনে নিতে পারি আত্মার কাছ থেকে।
প্রথম প্রশ্ন সেই করলো।
তুমি কে?
নড়ে উঠল মরিয়ম, ঘড় ঘড় শব্দ বের হচ্ছে তার মুখ দিয়ে, নিশ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। কলম তুলে নিলো। খস্ খস্ করে লিখলো প্যাডে। ঝুঁকে দেখল তিনজনেই।
তারক রায়, পেশা ডাক্তার, জন্ম ১৯৩৯, মৃত্যু ১৯৭৮।
কীভাবে মৃত্যু হয়, জিজ্ঞেস করে ফয়সাল।
একইভাবে লিখিত উত্তর পাওয়া যায়।
সড়ক দুর্ঘটনা, স্থান কলকাতা।
রফিক মনে মনে প্রশ্ন গোছাচ্ছে, এমন প্রশ্ন করতে হবে যেটা সে ছাড়া এখানে উপস্থিত কারও জানার কথা না। সে প্রশ্ন করে আত্মাকে। এমন একটা গোপন কথা বলো আমার সম্পর্কে যা এখানে কেউ জানে না।
আপনি বিবাহিত, নলিনী নামের একটা হিন্দু মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন। চমকে ওঠে রফিক। আসলেই সে নলিনী নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। আমেরিকা থাকতে। যখন আমেরিকা মাস্টার্স করতে গিয়েছিল। তখনকার ঘটনা এটা। এটা তার জীবনের গোপনীয় ঘটনার একটি। প্রতিটি মানুষের কিছু গোপন ব্যাপার থাকে যা  অন্য কারও সামনে প্রকাশ করতে চায় না। রফিক আর কোনো প্রশ্ন করে না। সে এখন নিঃসন্দেহ
যে আত্মা বলে কিছু আছে। আর কোনো প্রশ্ন করে বন্ধু আর তার স্ত্রীর সামনে অপ্রস্তুত হতে চায় না।

ফয়সাল আর রত্না বিভিন্ন প্রশ্ন করে যাচ্ছে। আর আত্মা নোটবুকে উত্তর
লিপিবদ্ধ করছে। ফয়সাল হঠাৎ অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসে।
সে তার মৃত্যুর তারিখ জানতে চায়। আত্মা লিখে দেয় নোটবুকে।
তারিখটা দেখে ঘাবড়ে যায় রফিক। মৃত্যু ৩ নভেম্বর, রাত আটটা। তার
মানে গতকাল। কীভাবে সম্ভব। ঘড়ির দিকে তাকায়, ৫টা বেজে গেছে। ভোর হতে বাকি নেই। আজ ৪ নভেম্বর। ওঠা দরকার। বাসায় যেতে হবে। ঘুম দিতে হবে। মাথা এলোমেলো হয়ে আছে।

ঘুম ভাঙে রফিকের একটা ফোন কলে। ফয়সালের শালা কল করেছে। সে খুব উত্তেজিত কোনো ব্যাপার নিয়ে। এক্ষ‍ুনি ফয়সালদের বাসায় যেতে বলেছে। ঘড়ির দিকে তাকায় রফিক। সাড়ে এগারোটা বাজে। ফয়সালদের বাসায় এসে দেখে লোকে বাসা গিজ গিজ করছে। বাসার নিচে তিনটি মরদেহ সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। বুঝতে বাকি থাকে না কাদের মনরদেহ এগুলো।
দুর্ঘটনা কখন ঘটেছে জিজ্ঞেস করে রফিক। মরিয়ম নামের এক মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে আনতে গিয়েছিল। ফেরার পথে গতকাল রাত ৮টায় তাদের গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে। এলাকাবাসী তাদের কাছের এক হসপিটালে প্রথমে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে নাকি মারা গেছে তিনজন। বললো ফয়সালের শালা।
কিছু বলে না রফিক। সে উপরে উঠে আসে। ডাইনিং টেবিলের মাঝে মোমবাতিটা যেমন ছিল তেমনই আছে। টেবিলে নোটখাতাটা পড়ে আছে। তুলে নেয় হাতে। শেষ লেখাটায় চোখ বুলায় রফিক। রাতে যে লেখাটা দেখেছিল। হুমহু সেটাই লেখা।
মৃত্যু ৩ নভেম্বর, রাত আটটা!

** প্ল্যানচেট | শোয়েব হাসান
** প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান
** প্ল্যানচেট ‍| শোয়েব হাসান

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।