ঢাকা: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২ মে প্রতিষ্ঠিত হয় খেলাঘর। ৬৪ বছর পার করে আগামী সোমবার (২ মে) ৬৫-তে পা রাখছে দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন শিশু-কিশোর সংগঠনটি।
গৌরবের ৬৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার দিনভর নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর।
সকাল দশটায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (৭৯ কাকরাইল, ঢাকা) জাতীয় ও খেলাঘরের পতাকা উত্তোলন শেষে বেলা বারটায় খেলাঘরের সূতিকাগার দৈনিক সংবাদ কার্যালয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন সংগঠনের কর্মী-সংগঠক, অভিভাবক ও ভাইবোনেরা। সেখানে সংবাদ পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো ছাড়াও কেক কেটে উদযাপন করা হবে খেলাঘরের জন্মদিন।
বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, পুনর্মিলনী, সাংস্কৃতিক ও খেলাঘর প্রবর্তিত সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতিপদক প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
এ অনুষ্ঠানে সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতিপদকে ভূষিত হবেন সংস্কৃতিজন আলী যাকের, সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, গীতিকার-সুরকার সেলিম রেজা এবং খেলাঘর সংগঠক মাখন লাল দাশ। পদকপ্রাপ্ত গুণিজনদের হাতে পদক ও সম্মাননাপত্র তুলে দিয়ে এবং উত্তরীয় পরিয়ে তাদেরকে সম্মানিত করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান। সভাপতিত্ব করবেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ আয়োজনে বাঙালির ঐতিহ্যমণ্ডিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে খেলাঘরের ছোট্ট সোনামনি বন্ধুরা।
কবি হাবিবুর রহমান ভাইয়া, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, পটুয়া কামরুল হাসানসহ তৎকালীন সময়ের সূর্য সন্তানেরা খেলাঘর প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠন গড়বার লক্ষ্য ছিল, সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়াশীলতা ও বাঙালির মূল চেতনাবিরোধী অপপ্রয়াসকে প্রতিরোধ করে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক শিশু-কিশোরদের প্রগতিমনস্ক ও বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদের চেতনায় গড়ে তোলা।
কালক্রমে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রমে যোগ হয়েছে আরও অনেক কিছু। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে অংশ নেওয়া খেলাঘর বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখন দেশ-জাতির প্রতি দায়বোধ ও ঋণশোধের আকাঙ্ক্ষা থেকেই চায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিশু-কিশোর ভাই-বোনদের গড়ে তুলতে। ক্রমশ: সংগঠন থেকে আন্দোলনে পরিণত হওয়া খেলাঘরের স্লোগান তাই ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল’।
শিশু-কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক মানবতাবাদী আদর্শে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, লেখাপড়ার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা, খেলাধুলা, নাট্য, বিতর্ক ও বিজ্ঞান চর্চা, নাচ-গান, আবৃত্তি-অভিনয়, ছবি আঁকাসহ সৃজনশীল কার্যক্রম এবং শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে খেলাঘর।
বর্তমানে দেশজুড়ে ছয় শতাধিক শাখা আসরের সমন্বয়ে শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করছে খেলাঘর। পাশাপাশি মৈত্রীর বন্ধনে শান্তিময় বিশ্ব গড়বার কার্যক্রমে খেলাঘর এখন আন্তর্জাতিক পরিসরেও বিস্তৃত।
খেলাঘরের এগিয়ে চলার ৬৪ বছর উপলক্ষে দেশের সকল কর্মী-সংগঠক, অভিভাবক, ভাই-বোন, শুভাকাঙ্খীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
এএসআর