ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

মামদো ভূত | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৬
মামদো ভূত | মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ

আধ ঘণ্টা আগে স্কুল ছুটি হয়েছে। বন্ধুরা সবাই যে যার মতো বাড়ি চলে গেলেও গেটের সামনে বসে আছে নীল।

 
দারোয়ান বললো, তোমার আব্বু কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন। ’
নীল বললো, ‘আব্বু কি তোমাকে ফোন করেছিলো?
দারোয়ান বললো, ‘হ্যাঁ। তোমার আব্বু বললেন, রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। তাই দেরি হচ্ছে। ’
নীল বললো, ‘থ্যাংক ইউ হারুন আঙ্কেল। ’
দারোয়ান বললো, ‘তুমি ভিতরে গিয়ে বোসো। ’
নীল বললো, ‘না। এখানেই থাকবো।
দারোয়ান বললো, ‘ঠিক আছে। আমি তাহলে যাই। ’
দারোয়ান চলে গেলো।

দারোয়ান চলে যাওয়ার পর আলখেল্লা পরা একজন অদ্ভুত লোক এলো। সে নীলকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। নীলও তাকে দেখতে লাগলো।
অদ্ভুত লোকটি বললো, ‘তোমার নাম কি?’
নীল তার নাম বললো।
অদ্ভুত লোকটি বললো, ‘এখানে বসে আছো কেন?’
নীল বললো, ‘আমার আব্বুর জন্য। ’
অদ্ভুত লোকটি বললো, ‘আমার সঙ্গে চলো। আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেবো। ’
নীল বললো, ‘আমি তোমার সঙ্গে যাবো কেন? তুমি কে?’
অদ্ভুত লোকটি বললো, ‘আমি মামদো ভূত। ’  
‘কি?’ নীল ফিক করে হেসে ফেললো এবং বললো, ‘কিন্তু তোমাকে তো ঠিক ভূতের মতো লাগছে না?’
মামদো ভূত তার বড় বড় সাদা দাঁতে হো হো করে হাসলো। ভূতের হাসিটা খুব ভালো লাগলো নীলের।
মামদো ভূত চেরির মতো লাল টকটকে একটা ফল দিলো নীলকে। নীল সেটি খেলো না। পকেটে ভরে রাখলো।
মামদো ভূত বললো, ‘পরে খাবে বুঝি?’
নীল হ্যাঁ বোধক মাথা দোলালো।
তারপর মামদো ভূত একটি ফুল দিলো নীলকে। বললো, ‘ফুলটা কী সুন্দর তাই না?’
নীল বললো, ‘হ্যাঁ, খুব সুন্দর। ’
মামদো ভূত বললো, ‘গন্ধ শুকে দেখো! ভালো লাগবে। ’
ফুলটি নাকের সামনে নিতেই নীলের কেমন যেন লাগতে লাগলো। ওর মনে হলো মাথাটা ভন ভন করছে। সে মামদো ভ‍ূতের দিকে তাকালো। দেখলো মামদো ভূত রহস্যজনকভাবে হাসছে।    
আর এভাবেই নীলকে যাদু করে ফেললো মামদো ভূত। যাদু করে পাতালপুরে নিয়ে গেলো।

পাতালপুর হচ্ছে একশো হাত মাটির নীচে। সেখানে মামদো ভূতের বাড়ি। গ্রামের নাম ভূতপল্লী।
সেখানে গিয়ে নীলের চোখ ছানাবড়া।
কারণ ভূতপল্লীটা খুবই সুন্দর। চারদিকে সবুজ গাছপালা। প্রত্যেক বাড়ির সামনে একটি করে পুকুর ও বাগান। পুকুর পাড়ের গাছের ডালে নানান প্রজাতির পাখি। একশো হাত মাটির নীচে এতো সুন্দর একটি গ্রাম দেখতে পাবে ভাবতেই পারেনি নীল।
মামদো ভূতের বাবা নীলের দিকে বড় বড় চোখে তাকালো। জানতে চাইলো, ছেলেটি কে?
মামদো নীলের পরিচয় দিয়ে জানালো নীল তার বন্ধু। তার বাবা নীলকে কিছু খেতে দিতে বললো।     
মামদো ভূত নীলকে পোড়া মাটি ও কিছু লতাপাতা খেতে দিলো।
সেসব খাবার দেখে নীল রেগেমেগে অস্থির। বললো, ‘আমি এসব বাজে খাবার খাই না?’
মামদো ভূত বললো ‘তুমি কি খাও?’
নীল বললো, ‘আমি খাই নুডুলস, ডিম, খিঁচুড়ি, দুধ আর চক্কেট!’
মামদো ভূত বললো, ‘ও আচ্ছা! তাহলে দেখি তোমার পছন্দের খাবার জোগাড় করতে পারি কি-না। ’
মামদো ভূত তার বাবার কাছে চলে গেলো। বললো, ‘বাবা, আমি তো মহাসমস্যায় পড়ে গেছি। ’
মামদো ভূতের বাবা বললো, ‘কেন, কী হয়েছে?’
মামদো ভূত বললো, ‘নীল নাকি পোড়া মাটি আর লতাপাতা খায় না। ’
বাবা বললো, ‘না খেলে তো কিছু করার নেই। ’
মামদো বললো, ‘ছেলেটি কান্নাকাটি করছে। ওর কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। ’
মামদো ভূতের বাবা বললো, ‘তাহলে ওর খাবারের ব্যবস্থা করো। ’
মামদো বললো, ‘আচ্ছা। ’
মামদো ভূত চোখের পলকে পৃথিবীতে চলে গেলো। নীলের পছন্দের খাবার নিয়ে এলো।

খাবার খেয়ে নীল বললো, ‘আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো। ’
মামদো বললো, ‘ঠিক আছে। শুয়ে পড়ো। ’
নীল বললো, ‘এখানে নয়। ’
মামদো ভূত বললো, ‘কোথায়?’
নীল বললো, ‘আমাদের বাসায়। আম্মুর সঙ্গে ঘুমাবো। ’
মামদো ভূত বললো, ‘এখানেই ঘুমাও। ’
নীল চিৎকার করে বললো, ‘না না না। আমি এখানে ঘুমাবো না। আমাকে এক্ষুণি দিয়ে এসো!’
নীলের চিৎকার শুনে মামদো ভূতের বাবা ছুটে এলো, ‘কি হয়েছে এখানে? এতো চিল্লাপাল্লা কিসের?’
মামদো ভূত বললো, ‘সে আমাদের এখানে খেতে চাইছে না। বাড়ি যেতে চাইছে। ’
মামদো ভূতের বাবা নীলকে দেখলো। তার মায়া হলো নীলের জন্য। তারপর বললো, ‘যাও, ওকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে এসো!’

সঙ্গে সঙ্গে মামদো ভূত নীলকে তার মায়ের কাছে দিয়ে গেলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।