বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘ডুমুরের ফুল’ অর্থাৎ অবাস্তব বস্তু। কিন্তু বাস্তবে ডুমুরেরও ফুল হয়।
আবার রূপকথায় অনেকে শুনেছেন অমাবস্যার রাতে ডুমুরের ফুল ধরে। অমাবস্যার রাতে কেউ সেই ফুল দেখতে পেলে কোটিপতি হয়ে যান বলে রূপকথায় কথিত আছে। তবে রূপ কথা নয়, বরং বাস্তবেই উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন ডুমুরের ফুল হয় এবং এই ফুলটি সাধারণ ফুলের থেকে বেশ ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমতার কারণে আমরা ডুমুরের ফুলকে মনে করি ডুমুরের ফল। ডুমুরের বিশেষ ধরনের এই ফুলকে হাইপ্যান্থেডিয়াম বলে। ডুমুরের পুষ্পবিন্যাসটি আবরণে ঢাকা থাকে। আবরণটি রসালো ত্বকে গঠিত। এ ধরনের পুষ্পবিন্যাসকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে সাইমোস পুষ্পবিন্যাস বলে। এর ভেতরটি পুরোটাই ফাঁপা থাকে। উপরের দিকে পুংপুষ্প এবং নিচের দিকে স্ত্রীপুষ্প থাকে। অর্থাৎ উভয় লিঙ্গ উদ্ভিদ।
ফুলের মধ্যভাগে একটি ছিদ্র পথ বিদ্যমান থাকে এবং ছিদ্রটি কতগুলো শল্কের ন্যয় ব্রাক্ট দ্বারা আবদ্ধ থাকে। তাই এর গঠন কাঠামোটা ফলের ন্যয় দেখা যায়। এ ধরনের ফুল যে শুধু ডুমুরে হয় তা নয়, বট, পাকুরসহ আরো অনেক উদ্ভিদেই বিদ্যমান। এই ফুল পরাগায়ণে কোন পতঙ্গ বা বাইরের কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। এই ফুলে পুংকেশর ও স্ত্রীকেশরের যুক্ত অবস্থার কারণে ফুলটি স্বপরাগী ফুল অর্থাৎ নিজেরাই পরাগায়নে অংশগ্রহণ করে থাকে। ফুলটির ব্যতিক্রমি এই গঠন কাঠামোর ভেতরেই নিষেকক্রিয়ার মাধ্যমে অসংখ্য ক্ষুদ্র বীজে পরিণত হয়। তাই আমাদের যে ধারণা ডুমুরের ফুল মানেই অবাস্তব বস্তু তা পুরোটাই ভিত্তিহীন। বরং ডুমুরের ফুল অবাস্তব নয়, ডুমুরেরও ফুল হয়।
লেখক: মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, তৃতীয় বর্ষ, আদর্শ মহাবিদ্যালয়, দিনাজপুর
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬
জেডএম/