ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া (শেষ পর্ব) | আনিকা তাবাসসুম

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া (শেষ পর্ব) | আনিকা তাবাসসুম ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া

বাবা ছেলে একসঙ্গে খেতে বসেছে। খাবারের আইটেম তেমন বেশি না। ছোট টেংরা মাছের চচ্চড়ি, কলমি শাক ভাজি আর ডাল। মা হাতপাখা দিয়ে দু’জনকেই বাতাস করছিলেন। ডালের পাতিলটা ফুলমিয়ার দিকে বাড়িয়ে মা বললেন, একটু ডাইল দেই বাজান।’ ‘না মা, ডাইল লাগব না। আমার খাওয়া প্রায় শেষ।’ বলল ফুল মিয়া।

মায়ের দিকে তাকিয়ে ওর বাজানকে স্কুলের কথা বলার জন্য ইশারা করল ও। মা বেটার এই চোখাচোখির ব্যাপারটা নজরে পড়ল বাবার।

ফুলমিয়ার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘কি হইছে বাজান? তুমি কি কিছু কইবা? কিছু কিনা দিতে হইব?’ ‘না না কিছু কিনা দিতে হইব না। আমি কই কি, ফুল কাইতাছিল, ওরে স্কুলে ভর্তি করাইয়া দিতে। ’ বলল মা।

‘স্কুলে! কও কি! সে তো মেলা দূর! এতদূর ও ছোট মানুষ একা একা যাইব কেমন কইরা?’ ‘বাজান, একা একা কেন যামু? আমি তো কুলসুম আফার লগে যামু। আফা কইছে হেয় আমারে হের সাথে কইরা প্রত্যেক দিন লইয়া যাইব। আবার ছুটির পর আমরা একসঙ্গে বাড়িতে আসমু। ’ বলল ফুল মিয়া।

‘বুঝলাম কিন্তু স্কুলে ভর্তি করাইতে তো অনেক টেকা পয়সা লাগব। আমরা গরিব মানুষ। এত টেকা পামু কই?’ ‘কি যে কও বাজান কুলসুম আফা কইছে হের স্কুলে ভর্তি হইতে কোনো টেকা পয়সা লাগে নাই। আবার বই খাতাও দেয় পড়নের লাইগা। ’

‘হু দেখি কুলসুমের সাথে আলাপ কইরা। ’ বললেন বাবা। আজকাল এই চরের প্রায় সবাই স্কুলে যাওয়া ধরছে। ব্যাপারটা নজর এড়ায়নি ফুলমিয়ার বাবার। তা ছাড়া পোলারে শিক্ষিত বানাইলে তো ভালোই। আশপাশের সবাই তারে বেশ মান্য করবো চিন্তা করে মনে মনে রাজি হয়ে গেলেন ফুলমিয়ার বাবা।

আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। আজ ফুল মিয়া প্রথম স্কুলে যাবে। ওর বাবা ওকে কুলসুম আফার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। সকালে মোরগ ডাকার আগেই ঘুম ভেঙে গেছে ওর। ভোরের আলো ফোটার আগে বিছানা থেকে উঠলে আবার বাবা বকা দিতে পারেন। এই ভেবে আরও কিছুক্ষণ বিছানায় পড়ে রইল ফুল মিয়া।

মনে মনে নানা রকম কল্পনার বাসা বুনতে বুনতেই বেশ খানিকটা সকাল হয়ে গেলো। মা ডাকতেই ও তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো। হাত মুখ ধুয়ে উঠে আসতেই মা ওকে পান্তা ভাত খেতে দিলেন। তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে একটু যেন বিষম খেল ফুল মিয়া। ‘ও কি করস বাজান আস্তে আস্তে খা। নইলে যে গলায় বাজব। ’ বললেন মা।

আইচ্ছা মা, আমার খাওয়া প্রায় শেষ। ’ বলেই থালার পানিতে চুমুক দিল ও। গামছায় মুখ মুছতেই কুলসুম আপাকে দেখা গেল ওর বাড়ির আঙিনায়। ‘আফা তুমি একটু দাঁড়াও আমি জামা পাল্টাইয়া আসি। ’ বলল ফুল মিয়া।

কুলসুমের হাতটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে ফুল মিয়া। আর একটু এগোলেই খেয়া ঘাট। সঙ্গে ওর বাবা মাও হাঁটছে। তারাও ওর প্রথম দিনের স্কুলে যাওয়ার আনন্দটাকে উপভোগ করছে। ‘সাবধানে নায়ে উঠিস বাজান। কুলসুম ওরে শক্ত কইরা ধইরা রাখ। ’ বললেন বাবা। আস্তে আস্তে নৌকা চলতে শুরু করল। বাজান আর মাকে হাত নাড়তে দেখে ফুল মিয়াও হাত নাড়ল আর হাসতে থাকল। স্কুলে যাওয়ার আনন্দ যেন উপচে পড়ছে ওর চোখে মুখে।

***ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া (পর্ব-২) | আনিকা তাবাসসুম
***
ফুল মিয়ার স্কুলে যাওয়া | আনিকা তাবাসসুম


বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।