ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

বনবিড়ালের শাস্তি | বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
বনবিড়ালের শাস্তি | বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী বনবিড়ালের শাস্তি

এক বনের ধারে বাস করতো এক জেলে। সেই বনের পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে গিয়েছিল। জেলে সেই নদীতে মাছ ধরতো। আর কিছু মাছ বাড়িতে খাওয়ার জন্য রেখে বাকিগুলো বিক্রি করতো বাজারে। জেলে যে বাজারে মাছ বিক্রি করতে চলে যেতো, সেই ফাঁকে এক বনবিড়াল জেলের ঘরে ঢুকে খেয়ে যেতো রেখে তার যাওয়া মাছগুলো।

জেলে বাড়ি ফিরে দেখতো কে যেনো তার সব মাছ খেয়ে গেছে। জেলে শুধু ভাত খেতো আর চোরের ওপর রাগ করতো।

একদিন চোর ধরার জন্য জেলে মাছ বিক্রির নাম করে মিছিমিছি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। আর অন্যপথ দিয়ে বাড়ির পেছনে এসে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকলো। কিন্তু বনবিড়ালটা ছিল খুব সেয়ানা। সে পাশের একটা কেওড়া গাছে থাকতো, আর সেখান থেকে লুকিয়ে দেখতে পেলো, জেলে বাজারে না গিয়ে তাকে ধরার জন্য লুকিয়ে ঘরের পেছনে গোলপাতার ঝোপে বসে আছে।

তাই বনবিড়ালটা সেদিন আর মাছ চুরি করতে জেলের ঘরে ঢুকলো না। এদিকে চোর ধরতে না পেরে জেলের খুব চিন্তা হতে লাগলো, আর শুধু-ভাত খেয়ে খেয়ে শুকিয়ে যেতে লাগলো। তাই একদিন বনবিবির মাজারে গিয়ে দু’টাকার মানত করলো।

মানত করে ফেরার সময় পথে বনবিড়ালের সঙ্গে জেলের দেখা হলো। বনবিড়াল জিজ্ঞাসা করলো, ও জেলে ভাই, কোথায় গিয়েছিলে? জেলে উত্তর দিলো, আর বোলো না ভাই! কে যেন আমার মাছগুলো খেয়ে যায়, আমি ধরতে পারি না, তাই বনবিবির কাছে মানত করতে গিয়েছিলাম।  

বনবিড়াল তখন বললো, ও এই কথা! তোমার মাছগুলো বনবিবিই তো চুরি করে খেয়ে যায়! এক কাজ করো, তোমার বিক্রির মাছ থেকে কয়েকটা মাছ প্রতিদিন বনবিবির মাজারে দিয়ে এসো, দেখবে তখন বনবিবি আর তোমার ঘরের মাছ চুরি করবে না।

বোকা জেলে বনবিড়ালের কথামতো প্রতিদিন নিজের বিক্রির মাছ থেকে কয়েকটা মাছ বনবিবির মাজারে রেখে আসতো। আর বনবিড়াল মনের সুখে সেই মাছগুলোও চুরি করে খেতে লাগলো।

একদিন জেলে বনবিড়ালকে বললো, ভাই, তোমার কথামতো সবতো করলাম, কিন্তু চুরিতো বন্ধ হলো না। বনবিড়াল বললো, দুঃখ কোরো না, তুমি যে বনবিবিকে মাছ খেতে দিচ্ছ, তিনি তা এখনো টের পাননি, টের পেলে আর ঘরের মাছ চুরি হবে না।

এদিকে হয়েছে কী! বনবিড়াল বনবিবির মাজারে জেলের রাখা মাছ খেতে এসে একদিন দেখলো কোথাকার একটা বক এসে আগে থাকতে সব মাছ খেয়ে বসে আছে। লোভী বনবিড়ালের তাতে খুব রাগ হলো।  

চোরের ওপর বাটপারি; বলে সে রেগে মেগে বককে তাড়া করলো। আর বকটা প্রাণভয়ে দৌড়িয়ে সেই জেলের ঘরে পালালো। বনবিড়ালও বকটাকে ধরতে জেলের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো।

এদিকে জেলে বাজার থেকে বাড়ি এসে দেখলো তার ঘরের মধ্যে বক আর সেই বনবিড়াল খুব মারামারি করছে। জেলেকে দেখে বক দৌড়িয়ে জেলের কাছে এসে বললো, জেলে স্যার, জেলে স্যার, আমাকে বাঁচান, এই বনবিড়াল আপনাকে ধোঁকা দিয়ে আপনার সব মাছ চুরি করে খায়, আপনি যে মাছ বনবিবিকে খেতে দেওয়ার জন্য রেখে আসেন, তাও এই বনবিড়াল চুরি করে খায়, আমি ভাবলাম সব বনবিড়াল একা খাবে? তাই খিদের চোটে আজ কটা মাছ খেয়ে ফেলেছি আর অমনি বনবিড়ালটা আমাকে মারতে মারতে এখানে নিয়ে এসেছে।

একথা শুনে জেলে বনবিড়ালের সব ফন্দি বুঝে ফেললো। সে তখন ঝপ করে ঘরের দরজা আটকিয়ে খপ করে বনবিড়ালকে ধরে ফেললো। তারপর বনবিড়ালের নাক কেটে, কান কেটে, চুল কেটে বনের বাইরে বের করে দিলো।

ইচ্ছেঘুড়ি
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।