ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রাজকন্যার প্রজাপতি বন্ধু | খোন্দকার শাহিদুল হক

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৭
রাজকন্যার প্রজাপতি বন্ধু | খোন্দকার শাহিদুল হক রাজকন্যার প্রজাপতি বন্ধু

রাজা জিনজির ও রানি তাদের একমাত্র রাজকন্যাকে নিয়ে সেই সকালে বেড়াতে বেরিয়েছেন। আজ যে রাজকন্যার ছুটির দিন! রাজকন্যার ছুটির দিন হলেই রাজা-রানি তাকে নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরতে বের হন। রাজকন্যা তাতে অনেক কিছু দেখতে পারে, জানতে পারে এবং শিখতেও পারে। 

আজ তারা ঘুরতে ঘুরতে এক সময় খুব সুন্দর একটা নদীঘেরা বনের কাছে গিয়ে পৌঁছালো। তখন তো প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।

কি সুন্দর বন! বনের উপর বৈকালের মিষ্টি রোদ এসে পড়েছে। বনে কত শত রংবেরঙের বিচিত্র ধরনের ফুল ফুটেছে! সে সব ফুল থেকে কী সুন্দর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে। আর নানান জাতের নানান রঙের হাজারও পাখি তো আছেই সেই বনে। তাদের কলধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছে বন।  

আহা! দেখলেই যেমন মনটা ভরে যায়, তেমনই তাদের হাজারও কণ্ঠের গান শুনলেও প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এমন বনাঞ্চল দেখে রাজকন্যা দারুণভাবে মুগ্ধ হলো।

ও মা, এ কী! এ বনে কী সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি গো! তারা মনের সুখে এ ফুলে সে ফুলে নেচে নেচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব সুন্দর তো! অপূর্ব! প্রজাপতি দেখে রাজকন্যা তন্বয় হয়ে গেলো। এতো সুন্দর সুন্দর প্রজাপতি সে আর আগে কক্ষনো দেখেনি। সে একটি প্রজাপতিকে ছুঁয়ে দেখতে গেলো। আর অমনি ওই প্রজাপতিটাও উড়ে এসে তার হাতে বসলো। রাজকন্যা তাকে পেয়ে খুশিতে যেন আটখানা! মনের আনন্দে বলে উঠলো, ‘বাহ! তুমি তো খুব সুন্দর! কী সুন্দর তোমার পাখা। এতো সুন্দর করে কে গো তোমার পাখায় রং লাগিয়ে দিয়েছে?

প্রজাপতিও রাজকন্যার মুখে প্রশংসা শুনে খুব খুশি হলো। রাজকন্যা খুব মিষ্টি মেয়ে। কী সুন্দর করে কথা বলে! কী সুন্দর মায়া তার চেহারায়! প্রজাপতিও যেন তাকে দেখে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলো! এবার প্রজাপতিটা তাকে বললো, ‘কেন, আমার আম্মু! তুমি তো জান না, আমার আম্মু খুব সুন্দর করে ছবি আঁকতে পারেন। দেখছই তো, তিনিই আমার ডানাতে এতো সুন্দর করে রং লাগিয়ে দিয়েছেন। আর জানো? আমাদের বনে একটা ছবি অঙ্কন শিক্ষার স্কুল রয়েছে। আমি সেখানে ছবি আঁকা শিখি। আমার আম্মু প্রতিদিন আমাকে সেখানে নিয়ে যান। আর ছুটির দিনে আমরাও এই বনে ঘুরে বেড়াতে আসি। আমি যখন আরও বড় হবো, তখন আমিও আমার আম্মুর মতো করে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকবো। ’

রাজকন্যা বললো, তুমিও খুব ভালো। আমিও তো ছবি আঁকি। আর আমার আম্মুও ছবি আঁকতে পারেন। তিনিই আমাকে খুব যত্ন করে ছবি আঁকা শিখান। আমিও তোমার মতো ছবি আঁকা শেখার জন্য অঙ্কন স্কুলে যাই।

তোমারও বুঝি অনেক বন্ধু আছে সেখানে? জানতে চাইলো প্রজাপতি।
হ্যাঁ গো, হ্যাঁ, আমারও অনেক বন্ধু। তারাও আমার মতো ছবি আঁকা শেখে। তারাও খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে। রাজকন্যা বললো তাকে।
তা হলে তোমার আঁকা ছবি আমাদের দেখাও না গো? আবদার করলো প্রজাপতিটি।

রাজকন্যা বললো, একটু দাঁড়াও বাপু, ছবিগুলো আবার আমার কাছে নেই। ওই যে আমার আব্বু আর আম্মু গাছের ছায়ায় বসে আছেন, ছবিগুলো তাদের কাছেই আছে। আমি এখনই নিয়ে আসছি।

প্রজাপতি রাজকন্যার হাত থেকে উড়ে একটা গাছের ডালে গিয়ে বসলো। আর রাজকন্যা তার আম্মুর কাছে ছবিগুলো আনার জন্য গেলো।

আম্মু, আমার আঁকা ছবিগুলো দাও না। ওই যে, ফুল গাছটার ডালে যে সুন্দর প্রজাপতিটা বসে আছে, সে কিনা আমার আঁকা ছবিগুলো দেখতে চাচ্ছে। বললো রাজকন্যা।

রাজা রানি তো হেসেই অস্থির। তাই নাকি? রানি বললেন, ঠিক আছে, ঠিক আছে। এই নাও তোমার আঁকা ছবি। তিনি ছবিগুলো রাজকন্যার হাতে দিলেন।

রাজকন্যা তার ছবিগুলো নিয়ে সেখানে গিয়ে তো আরও অবাক হয়ে গেলো! বাহ! এরই মধ্যে অনেক প্রজাপতি এসে ছবি দেখার জন্য ভিড় করেছে। রাজকন্যা খুব খুশি হয়ে তাদেরও স্বাগত জানালো। তারপর তার ছবিগুলো একটা একটা করে মেলে ধরে তাদের দেখাতে লাগলো। প্রজাপতিগুলো তার আঁকা ছবি দেখে খুব খুশি হয়ে এ ফুলে সে ফুলে উড়ে উড়ে আনন্দে নাচতে লাগলো।

তারপর ওই প্রজাপতিটা তাকে ডেকে বললো, সত্যিই তুমি খুব ভালো ছবি আঁকতে পারো! তোমার আঁকা ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে! যে ছবি আঁকে তার মন খুব ভালো আর কোমল হয়। তুমি কি তাহলে আমাদের বন্ধু হবে গো?

রাজকন্যা ঘাড় নেড়ে বললো, হ্যাঁ গো হ্যাঁ। আজ থেকে তোমরা সবাই আমার বন্ধু।

ichchheghuriবাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।