ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সেরালি-১০ 

ভূতের খপ্পরে ডাকাত দল | বিএম বরকতউল্লাহ্

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮
ভূতের খপ্পরে ডাকাত দল | বিএম বরকতউল্লাহ্ প্রতীকী ছবি

[পূর্বপ্রকাশের পর]
এক রাতে সেরালির ঘরে ডাকাত পড়লো। ডাকাত দল সেরালি ও তার স্ত্রীকে খাটের পায়ার সঙ্গে এঁটে-সেঁটে বেঁধে সোনাদানা ও টাকার বস্তা নিয়ে উধাও হয়ে গেলো। সেরালি ও তার স্ত্রী কপাল চাপড়ে প্রলাপে-বিলাপে কেঁদে-কেটে শেষ।

‘আমার এতোগুলো জলজ্যান্ত ভয়ংকর সন্তান থাকতে আজ এই দশা? কইরে আমার সন্তানরা, তোরা কই? তাড়াতাড়ি আয়, দেখে যা, কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি যে পথের ভিখারি হয়ে গেলাম রে।

কই, তোরা কই?’

হুড়মুড়িয়ে চলে এলো তার আজব সন্তানেরা। তারা করজোড়ে বললো, প্রাণপ্রিয় মা ও বাবা, আপনাদের কী হয়েছে? এভাবে কান্নাকাটি করছেন কেন? খুলে বলুন।
সন্তানদের দেখে তাদের কান্নার জোর বেড়ে গেলো। কথা বলতে গিয়ে বলতে পারে না, কান্নার জোয়ারে কথা ভেসে যায়।

সন্তানেরা বাবা-মার শক্ত বান খুলে দিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, কী হয়েছে, এবার বলুন।  

তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো, ঘরে ডাকাত এসে আমাদের সবকিছু নিয়ে গেছে। আমরা কিছুই করতে পারলাম না। পথের ফকির হয়ে গেলাম। তোরা থাকতে আজ আমার এতো দুর্গতি? তোরা কোথায় ছিলি? 

সন্তানেরা বললো, আপনারা যদি আমাদের তখন ডাক দিয়ে নির্দেশ করতেন তাহলে দেখতেন, আমরা কী করি। আপনারা কি জানেন না যে, আমরা নির্দেশ ছাড়া কিছুই করতে পারি না! সে ক্ষমতা আমাদের নেই।  
সেরালি চোখ মুছে বললো, এখন বললে পারবি?
আলবত পারবো বাবা, আদেশ করুন।
যা, তোরা এখনই যা। আমাদের মালামালসহ ডাকাতদের ধরে নিয়ে আয়। যা।
সন্তানেরা কোনো জবাব না দিয়ে লাটিমের মতো ঘুরতে ঘুরতে উধাও হয়ে গেলো।

ডাকাত দল পাশের এক জঙ্গলে ঢুকে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে গোল হয়ে বসলো। তারা বস্তার মুখ খুলে সবার সামনে রাখলো। ওরেব্বাস! এতো সোনাদানা! এতো টাকা! ডাকাতসর্দার বললো, ‘বেটা সেরালি, তোর অদ্ভুত ছেলে-মেয়েরা দশজনের কাছ থেকে কামাই করবে, তুই জমাবি আর আমরা তোর জমানো টাকার বস্তা তুলে নিয়ে আসবো। তুই আর লীলাখেলা দেখাবি কী, সব লীলা তো আমাদের কাছে! আমাদের ধনী হতে আর কয় দিন? হোঃ হোঃ হোঃ হাঃ হাঃ হাঃ করে সবাই একচোট হেসে নিলো।  

ডাকাতসর্দার জগুরাম মনের আনন্দে তার দলের লোকদের মাঝে সোনাদানা ও টাকা বিতরণ করতে লাগলো। আনন্দ আর ধরে না।
সেরালির সন্তানেরা ডাকাতদলের সন্ধান পেয়ে গেলো। তারা পরামর্শ করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো।  

ডাকাতদলটি যে গাছটির তলায় বসে মালামাল ভাগ করছে, হঠাৎ সে গাছটি দোল খেতে লাগলো। ডাকাতেরা মনে করছে কোনো ঝোড়ো হাওয়া বইছে হয়তো।  
কিঁরেঁ জঁগুরাম, এঁত ট্যাঁকা আঁর সোঁনা দাঁনাঁ পাঁইলি কঁই? গাছের ওপরে বসে কে যেন ন্যাঁকো স্বরে বললো।

কে? কে? এখানে কথা কয় কে? ডাকাতসর্দার জগু গর্জে উঠলো। আমাদের কাছে ট্যাকা চায় কে? ট্যাকা কি গাছের গোটা চাইলেই পাওয়া যায়? বহু কষ্টে কামাই করতে হয়।

একটু পরে একটা শিয়াল জগুর পাছায় খামছি মেরে দিলো ভোঁ দৌড়।
জগু লাফিয়ে উঠে কোঁচড় থেকে চাকু বের করে বললো, শিয়ালের কত সাহস দেখছস? এই যে, পাছায় খাবলা মেরেছে, দেখ!
ডাকাতদলের সবাই দেখে খলখলিয়ে হাসতে লাগলো।  

একটু পরে কোত্থেকে একটা গেলাকার জিনিস, দেখতে প্রায় ফুটবলের মতো, হরহর-গড়গড় করে এসে ডাকাতদের চারপাশে ঘুরতে লাগলো।  
ডাকাতেরা ঠিক বুঝতে পারছে না জিনিসটা যে কী! ওরা হাতে চাকু নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।  

বলটা ক্রমেই দ্রুত গতিতে ঘুরতে লাগলো এবং মাঝে মধ্যে ডাকাতদের পায়ের ফাঁক দিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিলো। ডাকাতেরা সহজে ভয় পাওয়ার নয়। তারা বলটাকে ধরার জন্য ওৎ পেতে রইলো। ডাকাতসর্দার প্রচণ্ড সাহসী লোক। সে বলটাকে লক্ষ্য করে এক লাফে গিয়ে বলটাকে জাপটে ধরলো। হায়! হায়! বল তো হাত থেকে সরানো যাচ্ছে না। আঠার মতো লেগে আছে। অন্য ডাকাতেরা সর্দারের কাছ থেকে বলটা টেনে যেই আলগা করতে গেলো, অমনি সবাই আটকে গেলো বলের কঠিন আঠায়।  

ডাকাতদলের সাত সদস্য পড়ে গেলো মহা ফ্যাসাদে। তারা বল থেকে হাত ছোটাবার জন্য শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে টানাটানি করতে করতে কাহিল হয়ে গেলো। বল থেকে কারও হাত ফসকাতে পারছে না। বলের আঠা আর ডাকাতের হাত-পায়ে মাখামাখি। ওরা হাঁপাতে হাঁপাতে মাটিতে বসে পড়লো। দেখে মনে হচ্ছে, দক্ষ পুলিশদল সাত ডাকাতকে একটা হ্যান্ডকাপে বেঁধে রেখেছে।

গাছ থেকে নেমে এলো অদ্ভুত এক লোক। ডাকাতেরা লোকটার বিকট চেহারা দেখে ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো।  

ডাকাতসর্দার লোকটাকে মিনতি করে বললো বাবা, আপনিই কি আমাদের কাছে ট্যাকা চেয়েছিলেন? আমরা বুঝতে পারিনি। নিন আপনি সব নিয়ে যান, দয়া করে আমাদের মুক্তি দিন।

লোকটি মোটা গলায় বললো, আমি পরের ট্যাকা নিই না। এই বলে সে বস্তাটা ধরে ডাকাতদের মাথায় তুলে দিয়ে বললো, যা, হাঁট। যার ট্যাকা তাকে বুঝিয়ে দিবি।
ডাকাতেরা ভয়ে টাকার বস্তাটা মাথায় নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
সেরালি স্ত্রীকে নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে ঘরে।  

সাত ডাকাত টাকার বস্তা নিয়ে সেরালির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
সেরালি ছোঁ মেরে টাকার বস্তাটা নিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে একটা বেন্দা টেনে বের করে আনলো। সে হাতবন্দি সাত ডাকাতকে লাফিয়ে লাফিয়ে পেটাতে লাগলো। বেন্দা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো কিন্তু সেরালির রাগ ভাঙলো না।  

গ্রাম ভেঙে লোকজন এসে সেরালির সন্তানদের কেরামতি আর শক্তি-সামর্থ্যের প্রশংসা করতে লাগলো। সকালে চলে এলো পুলিশ। সেরালি গর্ব নিয়ে পুলিশকে বললো, আপনারা তো সহজে চোর-ডাকাত ধরতে পারেন না। এই নেন, গোটা ডাকাতদল ধরে দিলাম। এবার আইন-আদালত করেন গিয়ে।  

আইন-আদালত হলো। সঙ্গে লোকমুখে রাষ্ট্র হয়ে গেলো সেরালির রহস্য ছেলেদের দুর্ধর্ষ ডাকাতদল পাকড়াও করার দুঃসাহসিক কাহিনী।  

চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।