ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সেরালি (শেষ পর্ব) | বিএম বরকতউল্লাহ্

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
সেরালি (শেষ পর্ব) | বিএম বরকতউল্লাহ্ প্রতীকী ছবি

[পূর্বপ্রকাশের পর]
ভূতেরা প্রতিদিন জন্ম দিচ্ছে রহস্যময় আজব ঘটনা।
ক’দিন বাদে ডাকাত পড়লো এই বাড়িতে। দুর্ধর্ষ ডাকাতদলটি গেট ও দরজা ভেঙেচুরে মূল ঘরে প্রবেশ করে মূল্যবান সবকিছু নিয়ে নিচ্ছে। বাড়িওয়ালা ভয়ে চিকন গলায় চিৎকার করে বলছে, হায় হায় দারোয়ান কই, দারোয়ান কই! আমার দারোয়ান কই!!!

ডাকাতেরা যা চায় তা দিয়ে দে। উপর থেকে কে যেন বললো।


বাড়িওয়ালা ডাকাতদের কথামতো সব কিছু দিয়ে দিলো।  
ডাকাতেরা টাকা-গহনা আর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নির্বিঘ্নে ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির মূল ফটকের সামনে গিয়ে একত্র হচ্ছে।  
বাড়িওয়ালা পাহারাদারের কোনো ভূমিকা না দেখে চিৎকার করে হায়মাতম করছে আর পাহারাদার ও বাটপার সেরালির চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছে।

ডাকাতদল মালামাল নিয়ে গেট পেরোবার সময় থমকে দাঁড়ালো। কে যেন পেছন দিক থেকে ওদের টেনে ধরেছে। তারা টর্চলাইটে কাউকে না দেখতে পেরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌড়ে রাস্তায় নেমে পড়লো। বাড়িওয়ালা যখন দেখলো যে, ডাকাতেরা রাস্তায় চলে গেছে, তখন সে ক্ষোভ-দুঃখ আর হতাশায় ভেঙে পড়লো।

কিন্তু না।

ডাকাতেরা মালামাল নিয়ে অপেক্ষমাণ একটি গাড়িতে তুলে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে ঠিক এমন সময় বাসার ছাদ থেকে একটা চিকন হাত এঁকে বেঁকে লম্বা হয়ে ডাকাতের গাড়িটা পেঁচিয়ে ধরলো। তারপর গাড়িটা সামনের দিকে না গিয়ে দ্রুত পেছনের দিকে আসতে শুরু করেছে। আসতে আসতে গাড়িটা সেই বাড়ির ভেতরে চলে এলো এবং পটাপট গেট বন্ধ হয়ে গেলো। ডাকাতেরা গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে ভূতের চিকন হাতটা তাদের সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে আছাড় মেরে বারান্দায় বসিয়ে রাখে।  

ডাকাতেরা হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িওয়ালাকে ডেকে বলছে, চাচাজান, আপনার মালামাল সব নিয়ে যান, আমরা আর বাঁচিনে, মহাবিপদে পড়ে গেছি। উহ্ আহ্ মরে গেলাম রে।

বাড়িওয়ালা তার স্ত্রীকে নিয়ে জানালার ডালা খুলে ডাকাতদের দূরাবস্থা দেখে আনন্দে খাটের ওপর ব্যাঙের মতো লাফালাফি করতে লাগলো।  

বাড়িওয়ালার ফোন পেয়ে পুলিশ এসে ডাকাতদের পাকড়াও করে থানায় নিয়ে গেলো।  

তিনি এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলেন এবং আঁতিপাঁতি করে খুঁজছেন পাহারাদারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য। কিন্তু ছাদে কাউকে দেখা গেলো না। ছাদের কোণে একটা বিড়াল দেখতে পেলেন। তিনি বিড়ালটাকে খাবলে ধরে কী যেন বলতে চাইলেন। কিন্তু বিড়ালটা ফ্যাঁচ করে একটা ভেংচি মেরে চলে গেলো নিচে। তিনি রাগ করলেন না, একটা হাসি দিয়ে বাসায় চলে গেলেন।

বাড়িওয়ালা পাহারাদারের রহস্যময় ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় এতই খুশি ও সন্তুষ্ট হয়েছেন যে, তিনি কীভাবে এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।  

বাড়িওয়ালা খুশিতে টগবগিয়ে স্ত্রীসহ গাড়ি নিয়ে ছুটে গেলেন সেরালির কাছে। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন, পোলট্রি মালিক চাওয়ার চেয়ে বেশি পাওয়ার আনন্দে দশ বারোটা তাগড়া মোরগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে সেরালির প্রশংসা করছে।  
 
বাড়িওয়ালা ব্যাগ থেকে এক তোড়া টাকা বের করে দৌড়ে গিয়ে সেরালিকে জাপটে ধরে অন্ধভাবে কোলাকুলি করতে লাগলেন। তারপর পোলট্রি মালিকের মুখে ‘মুরগি চোর’ জব্দ করার আজব কাহিনী শুনে তারা হাসি-কাশিতে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে গেলেন।  

সেরালির সুনাম-সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের ধনী ব্যক্তিরা এসে ভিড় করছেন সেরালির বাড়িতে। এরা চড়া মূল্যে ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে ভূত। এ ভূতেরা প্রতিদিন জন্ম দিয়ে চলেছে অসংখ্য রহস্যময় আজব ঘটনার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।