ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আমার লাটিম বন্ধু (পর্ব-১) | ফারিয়া এজাজ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৮
আমার লাটিম বন্ধু (পর্ব-১) | ফারিয়া এজাজ প্রতীকী ছবি

আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির নাম রাইয়ান। যদিও আমার স্কুলের প্রথম দিনগুলোতে ও আমার চোখে ছিল খুবই অদ্ভুত। আর ওর কাজ কারবার ছিল রহস্যে ঘেরা!

যেহেতু আমি স্কুলে নতুন ছিলাম, তাই টিফিনের সময় নিজের মতো একটি জায়গায় বসে খেতাম আর চারদিকে দেখাতাম কে কী করছে! আমার চোখ বেশিরভাগ সময় ওর দিকেই আটকে থাকতো। খুব অবাক হয়ে শুধু দেখতাম আর ভাবতাম কীভাবে সবার থেকে আলাদা হয়ে একা একা বসে লাটিম দিয়ে একভাবে এক নাগাড়ে খেলতো ছেলেটি।

তাও আবার প্রতিদিন একই জায়গায় বসে! 

দেখে মনে হতো যেন জায়গাটি ঠিক ওর জন্যই বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। ক্লাসের অন্য বাচ্চারাও নিজ থেকে এসে ওর সঙ্গে কথা বলতো না। আমরা ক্লাসে মোট পঁয়ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিলাম। কিন্তু সবাই মিলে খেলার সময় শুধু চৌত্রিশ জনই খেলতাম। কারণ রাইয়ান সব সময় বাদ পড়তো বা নিজ থেকেই খেলায় আসতো না। আমাদের ক্লাস টিচার খুব চেষ্টা করতেন যেন সবার সঙ্গে ও খেলতে আসে। কিন্তু একবারের বেশি বললে ও খুব বিরক্ত হতো। মনে হতো কেউ ওর ধ্যান নষ্ট করে দিচ্ছে, নিজের আলাদা জগৎটা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে ওকে।  

কী যে এতো চিন্তা করতো তা আমার বুঝেই আসতো না কখনো। বোঝার কথাও না। ক্লাস ফোরে পড়া বাচ্চা কতোটুকুইবা আর বুঝতে পারে! আমাদের ষান্মাসিক পরীক্ষার পর বাবা-মায়েদের ডাকা হয়েছিলো ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার অবস্থা সম্পর্কে জানানোর জন্য। সেদিন আমার পাশের সারিতে বসেছিলো রাইয়ান আর ওর আম্মু-আব্বু। আমি মা-বাবাকে রাইয়ানের কথা বললাম। মা বাবা কিছুক্ষণ ওকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলো। এরপর বাসায় যেতে যেতে আমাকে পুরো ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললো।  

সেদিন আমি জানতে পারলাম, রাইয়ানের অটিজম আছে। আর এটি কোনো সমস্যা নয়। বরং ও অন্য সবার থেকে আলাদা। এক কথায় বলতে হলে, ‘বিশেষ শিশু’। তাই ও সবার সঙ্গে কথা বলতে বা মিলেমিশে থাকার চেয়ে নিজের জগতেই থাকতে পছন্দ করতো। তবে ভালোবাসা দিয়ে খুব কাছে টেনে নেওয়া যায় ওদের। পরেরদিন ক্লাসে গিয়ে আমি নিজ থেকে রাইয়ানের সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। সেই লাটিম দিয়েই খেলছিলো ও! 

ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কী তোমার লাটিমটা দিয়ে একটু খেলতে পারি?’ কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না ও। আবারও জিজ্ঞেস করলাম। তবুও কোনো সাড়া-শব্দ নেই! ক্লাস শুরু হওয়ার আগে যখন ঘণ্টা পড়লো তখন ও খুব বিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে কান চেপে রাখলো। শব্দটা তেমন বিকট ছিল না, তবুও ওর খুব অসহ্য লাগছিলো। সেদিন টিফিনের সময় আমি ওর পাশে গিয়ে বসেছিলাম। নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, যেটা ও খাচ্ছে সেটা আমাকেও কী একটু দেয়া যায় কিনা।

কোনো উত্তর দিলো না ও। যখনই আমি সেখান থেকে উঠে যেতে ধরলাম, অমনি ও আমার দিকে ওর টিফিন বক্সটি এগিয়ে দিলো। খুব খুশি হয়ে গিয়েছিলাম আমি! এই বোধহয় শুরু হয়ে গেলো আমাদের বন্ধুত্বের পথচলা।

চলবে….

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।