ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

খাঁচার পাখিটা | ফারিয়া এজাজ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮
খাঁচার পাখিটা | ফারিয়া এজাজ প্রতীকী ছবি

রুশোদের বাসায় আজ ওর সব বন্ধুদের দাওয়াত। হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছে পুরো বাড়ি। মনে হচ্ছে যেন খুশির ধুম পড়েছে। ক্লাস সিক্সের দশ থেকে বারোটা বাচ্চা টানা পরীক্ষার পর প্রথম ছুটির দিনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ডুবে থাকলে যা হয় আরকি! খেলাধুলায় দিব্যি মেতে আছে রুশো আর ওর বন্ধুরা। কখনো লুডু, কখনো জম্পেশ গল্প আর কখনো বা অযথা ছোটাছুটি করছে ওরা!

খেলার এক পর্যায়ে রুশোর মা এসে বললো, রুশো, তোমার বন্ধুদের পিপিংয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছো? রুশো বললো, না, নেইনি তো এখনো। পিপিংয়ের নাম শুনে তো সবাই উৎসুক হয়ে রুশোর কাছে জিজ্ঞেস করে করে মাথা খেয়ে ফেললো।

রুশো বললো, উফ্‌রে বাবা, যাচ্ছি তো! চলো সবাই আমার সাথে।

রুশো রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো আর ওর পিছু নিলো সব বন্ধুরা। বারান্দায় যেতেই সবার চোখেমুখে খুশির ঝলক! বারান্দার মেঝেতে রাখা মাঝারি একটি খাঁচা! আর সেই খাঁচার ভেতর একটি টিয়া পাখি। রুশো টিয়া পাখিটি দেখিয়ে বললো, এই যে আমার পিপিং। পিপিংও কিন্তু আমার বন্ধু। ওর সাথেও খুব খেলি আমি। রুশোর বন্ধুরা ততক্ষণে ওর কথা শোনার চাইতে পিপিংকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লো বেশি। রুশো কিছু খাবার এনে দিলো পিপিংকে দেয়ার জন্য। সবাই তো একেবারে লাইন ধরার মতো অবস্থা! কে আগে খাবার দিবে আর কে পরে!

সেই নিয়েই চলছিলো বন্ধুদের মধ্যে যুক্তি-তর্ক। হঠাৎ রুশোর এক বন্ধু পিপিং এর খাঁচায় এক অদ্ভুত জিনিস আবিষ্কার করলো! সাজিদ নামের রুশোর ওই বন্ধুটি বলে উঠলো, দেখো দেখো, খাঁচার দরজাটা তো খোলা। সাজিদের কথা শুনেই সবাই উপুড় হয়ে খাঁচার দরজার দিকে খুব উৎসাহ আর অবাক হয়ে তাকালো। তবে রুশো সাজিদের কথায় খুব বেশি একটা পাত্তা দিলো না। ভাবখানা এমন যে, এটা কোনো বিষয়ই না। সাজিদ বললো, পিপিংয়ের দরজা খোলা! ও তো উড়ে যাবে যেকোনো সময়ে! আর সব বন্ধুরা সেই কথায় সম্মতি দিয়ে রুশোর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। রুশো বললো, “কখনই যাবে না পিপিং। ওর দরজা গত বছর থেকেই খোলা। কয়েক বছর আগে ও একবার উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। ঠোঁট দিয়ে কামড়ে কামড়ে প্রায় খুলেই ফেলেছিলো দরজাটা।

 রুশো এই কথা বলতেই সবার মাঝে পরের বিষয়টি জানার উৎসাহ আরও বাড়তে লাগলো। রুশোর বান্ধবী তামরিন বললো, তারপরও খুলতে পারেনি দরজা? কীভাবে কী করলে তোমরা? রুশো বললো, এভাবে অনেকবার চেষ্টা করার পর ও নিজ থেকেই হয়তো বা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। তবে গতবছর থেকে খাঁচার দরজাটা এরকম খোলাই আছে। বাবা বলেছে যে, ও উড়ে যেতে চাইলে যাবে। আর আটকাবো না আমরা ওকে। কিন্তু ও তো যায় না। ওই যে তখন যাওয়ার চেষ্টা করেও যেতে পারেনি! তাই ও এখন আর চেষ্টা করে দেখার কথা ভাবেও না!

সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো রুশোর কথা। সাজিদ বললো, অথচ এভাবে বসে না থেকে চেষ্টা করতে থাকলেই কিন্তু একদিন ডানা মেলে আকাশে উড়তে পারতো পিপিং! তাই না? সাজিদের কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য সবাই চুপ হয়ে গেলো। পিপিংয়ের খাঁচা ঘিরে দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে কী যেন ভাবতে থাকলো ওরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।