ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রাসেল ও তার মুক্তিযোদ্ধা দাদু | আলমগীর কবির

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
রাসেল ও তার মুক্তিযোদ্ধা দাদু | আলমগীর কবির প্রতীকী ছবি

কী সুন্দর গ্রাম! এতো ফুল, এতো পাখি, এতো প্রজাপতি। ধানক্ষেতে চপল হাওয়ার ঢেউ!
দেখে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় রাসেল।
 

এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে ও দাদুবাড়িতে বেড়াতে এসেছে। সঙ্গে এসেছে তার বাবা-মা আর ছোট বোনটি।


চাচাতো ভাই আবীর সোহাগ বাবুর সঙ্গে সারাদিন হইচই করে কাটাচ্ছে সে। আহা, কী আনন্দ।

এরমধ্যে মজার মজার পরিকল্পনা করে ফেলেছে ওরা। ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হবে। আগামীকাল লাটাই-ঘুড়ি সংগ্রহের অভিযানে নামবে ওরা।

সকালে মারবেল খেলেছে, ডাংগুলি খেলেছে। এই খেলাগুলোর মাঝে এতো আনন্দ আছে রাসেল আগে জানতো না।
তারপরে নদীর কিনারে  হাঁটা পথ ধরে হেঁটে এসেছে এতোদূর।

প্রকৃতির শোভা দেখে বার বার মুগ্ধ হচ্ছে রাসেল। অনেকদিন পর গ্রামে এসে সে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
খানিক পরেই সন্ধ্যা নামবে।
চলো এবার বাসায় ফেরা যাক।
সোহাগ বললো রাসেলকে।
কাল আবার এখানে আসবো।
কী বলিস? রাসেল বললো।
না, কাল আবার অন্য জায়গায় যাবো আমরা। অন্য অনেক পরিকল্পনা আছে আমাদের।
তোর ভালো লাগবে।
ঠিক আছে চল। বাড়ি ফিরি এবার।
চল, যেতে যেতে তোকে বলছি সব।

বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যে পার হয়ে গেলো। বাড়িতেও এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রথম দিনেই রাসেলের দাদি পিঠা তৈরি করেছেন। নানা স্বাদের পিঠা। খাওয়া-দাওয়ার পরে বারান্দায় দাদি শীতল পাটি বিছিয়ে দিয়েছেন। ছোটরা দাদুকে ঘিরে বসেছে। দাদুর কাছে গল্প শোনা চাই। দাদু এতো এতো গল্প জানেন।
আবির বললো, দাদু গা ছমছম ভূতের গল্প বলো।  

বাবু বললো, না দাদু ভূতের গল্প না, রাজা-রানির গল্প বলো।  
আবীর বললো, ভীতু কোথাকার।  

সোহাগ বললো, আরে ও তো বয়সে সবার ছোট। ভূতের গল্পে ভয় পেতেই পারে। দাদু তুমি তো একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাও।
সবাই বলল, বেশ বেশ, তাই হোক। মুক্তিযুদ্ধের গল্প।

দাদু বলতে শুরু করেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দলে একজন কিশোর যোদ্ধা ছিল। তোমাদের বয়সী। আজ আমি তার গল্প শোনাবো। ছেলেটি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল। নাম সাদিক। সাদিকুল ইসলাম। তোমরা জানো যুদ্ধে আমার হাতে গুলি লেগেছিল। সমুখ যুদ্ধ ছিল সেদিন। হানাদারের দল আমাদের সঙ্গে পেরে উঠছিল না কিছুতেই। পিছু হটছিল ওরা।

হঠাৎ একটি গুলি আমার হাতে এসে লাগে। ভীষণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। সাদিক দেখতে পেয়েছিল। হানাদারদের গুলি করতে করতে আমাকে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে আসে। ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গিয়েছিল সে। আমার জ্ঞান ছিল না, পরে জেনেছিলাম সেটা।

রাসেল বললো, তিনি তো তাহলে খুব সাহসী ছিলেন।

দাদু বললেন, তা তো বটেই। আসলে হানাদার বাহিনী আমাদের সাহসের কাছেই হেরে গিয়েছিলো। যুদ্ধে সাহস খুবই মূল্যবান অস্ত্র।

আচ্ছা তোমরা কি সাদিককে দেখতে চাও। পাশের গ্রামে থাকে সে।

রাসেল বললো, সত্যি বলছো দাদু। আমরা সবাই একবাক্যে রাজি। আমারও খুব ভালো লাগবে।

দাদু  বললেন, ঠিক আছে তাহলে কাল তোমাদের নিয়ে যাবো।

পরেরদিন বিকেল বেলা দাদু নিয়ে গেলেন পাশের গ্রামে। তার মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুর বাড়ি।

ওনার বয়স হয়েছে। কিন্তু এখনও বেশ পরিশ্রম করেন। ছেলের মুদিখানা আছে, সেখানে বসেন। ফলের বাগান আছে, দেখাশোনা করেন। এভাবেই তিনি সময় কাটান।

মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি নামের তালিকায় দাদু ও দাদুর বন্ধুর নাম নেই। এটা জানতে পেরে খুব কষ্ট পেলো রাসেলরা।
সেদিন অনেক গল্প হলো। ভালো কাটলো সময়টা।

বাড়ি ফেরার পথে রাসেল একা একা ভাবছিলো। অর্থ, যশ, খ্যাতির জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তাই এখন তা পাওয়ার চেষ্টাও করেন না।

দু’জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ভালোবাসা, আদর, স্নেহ পেয়ে ওদের মন ভরে গেলো। এমন সূর্যসন্তান আছে বাংলা মায়ের! 

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।