ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

তরুর প্রদীপ (পর্ব-১) | ফারিয়া এজাজ 

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
তরুর প্রদীপ (পর্ব-১) | ফারিয়া এজাজ  প্রতীকী ছবি

জানালা দিয়ে নরম রোদ এসে মেঝেতে পড়ছে। ওপাশ থেকে মিষ্টি সুরে ডাকছে কোকিল। জানালায় দাঁড়িয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তরু। এরপর পেছন ফিরে এক নজরে দেখে নিলো পুরো রুমটা। একেবারে শান্ত একটা ছোট্ট রুমে টেবিলে বসে বইয়ের ভেতর যেন ডুবে আছে কতগুলো উৎসুক চোখ। নিজের ইচ্ছেটা যখন পূরণ হয়, তখন ঠিক কেমন লাগে তাই উপলব্ধি করছিলো তরু। 

এই ইচ্ছে পূরণের জন্য কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাকে! এই তো গত বছরেরই কথা, যখন সে তার গ্রামে এরকমই একটা লাইব্রেরি করার স্বপ্ন দেখেছিলো। এরকম একটা অজ-পাড়াগাঁয়ে যেখানে মানুষ দু’তিন বেলা পেট ভরে খেয়ে বাঁচতে পারাই যথেষ্ট মনে করে, সেখানে এরকম একটা লাইব্রেরি খোলাটা তার জন্য চাট্টিখানি কথা ছিল না।

এই স্বপ্নটা তার মধ্যে হুট করে জন্ম নেয়নি। ছোটবেলা থেকে দাদার কাছে গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছে সে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, গরু চরাতে গিয়ে গাছতলায় বসে, পাংশী নৌকা করে ফুপুর বাড়ি যাওয়ার পথে, আরও কত কত সময়ে যে সেই গল্পগুলো শুনেছে সে! দাদার মুখে গল্পগুলো শুনতে শুনতে সে যেন হারিয়ে যেতো সেসব গল্পের মাঝে। চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠতো সব ছবি, শিউরে উঠতো পুরো শরীর। তখন সে নিজেকে কল্পনা করতো ওই সময়েরই একজন হিসেবে। মনে মনে চিন্তা করতো যে, ওই সময়টাতে সে থাকলে ঠিক কী করতো?

সেও কি পারতো এতোটা সাহসী হতে, সব বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে? দাদার সেই সব গল্পগুলোই সে সযত্নে আগলে রেখেছে মনে-প্রাণে। আর সেই গল্পগুলো হলো বাংলাদেশের জন্মকথা নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। নিজের পাঠ্যবই ছাড়া তেমন কোনো বই তরুর পড়া হতো না। হাতে গোনা যে কয়টা পড়েছে তাও আবার পাশের বাড়ির শিল্পীর বড় বোন, মালা আপার কাছ থেকে নিয়ে। মালা আপা ঢাকায় পড়াশুনা করেন বিধায় সেখানকার বিভিন্ন লাইব্রেরির নানান রকম বই তার সংগ্রহে থাকে। মালা আপার কাছ থেকে তরু বেশ কয়েকবার গল্প শুনেছে যে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের লাইব্রেরিতে গিয়ে বইপ্রেমীরা কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বই নিয়ে বসে থাকে। এমনকি মালা আপার টাচ্‌স্ক্রিন ফোনে কতগুলো ছবি ছিল লাইব্রেরির।

সেগুলো দেখে তো তরুর চোখ একেবারে ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার অবস্থা হতো। তখন থেকেই মাথায় ঘুরছিলো তাঁর গ্রামেও এমন একটা ব্যবস্থা করার। যেখানে থাকবে শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সব বই। তরুর খুব খারাপ লাগতো যখন গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। ওদের দোষ দিয়েও অবশ্য কোনো লাভ ছিল না। কারণ বড়রাও যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন কিছু জানতো তাও তো না! এরকম করে চলতে দেওয়াটা তরু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলো না। কীসের তাড়নায় যেন হন্যে হয়ে ছুটছিলো ওর স্বপ্নের লাইব্রেরিটা গড়ে তোলার জন্য।  

তরুদের তিন রুমের বাসার একটি রুম খালিই পড়ে থাকে। আগে সেটা বড় ভাইজানের রুম ছিল। পরে গঞ্জে কাজের কারণে পরিবারসহ চলে যাওয়ায় রুমটা পড়েই থাকে। রাতের বেলা আব্বা মাছের আড়ত থেকে মাছ বিক্রি করে আসার পর আম্মা-আব্বা দু’জনকে খুব করে ধরেছিলো তরু। বড় ভাইজানের রুমটাতেই সে বানাতে চায় তাঁর সেই স্বপ্নের লাইব্রেরি। আম্মা-আব্বা কোনোমতেই তার সঙ্গে একমত হতে চাচ্ছিলেন না। বিশেষ করে তরুর আব্বা।  

চলবে....

ichবাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।