ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৭৯)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৮
রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৭৯) রহস্য দ্বীপ

[পূর্বপ্রকাশের পর]
না, এটা তো আমার নাম না, একেবারে নিষ্পাপ চোখে চেয়ে থেকে, জ্যাক বলে। কয়টা বাদাম কিনবেন পুলিশ ভাই?
না, পুলিশটা বলে। তারপর পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে, ওখানকার ছবির দিকে তাকায়। এই ছেলে, তুমি এদিকে এসো। মনে হচ্ছে তুমি পালাতক শিশুদের একজন-তোমাকে একটু ভালো মতো দেখতে দাও তো দেখি।

জ্যাক ফ্যাকাশে হয়ে আসে। পুলিশটার কাছে তার ছবি থেকে থাকলে সে ধরা পড়ে যাবে! ছেলেটা বিদুৎ গতিতে তার হাতের লাঠি দু’টি ছুড়ে ফেলে, তখনও তাতে বারো কি তেরোটা ঝুড়ি ঝুলছে।

তারপর হঠাৎ তীব্রগতিতে পাশেই জমায়েত হওয়া লোকের ভিড়ে ঢুকে পড়ে। সেই ভিড়ের অনেকগুলো হাত তাকে থামাতে চেষ্টা করে, কিন্তু খুব জোরাজুরি করায় তার জ্যাকেট ছিঁড়ে যায়, তবে তখন পালানো ছাড়া আর কোনো দিকেই তার খেয়াল ছিল না।

একটা বাগানের কোনা গলে সে ভেতরে ঢুকে পড়ে। দ্রুতবেগে ওখানকার কটেজের ভেতরে ঢুকে পেছনের বাগানে উঁকি দেয়। আশপাশে কেউ নেই- একপাশে ছোট্ট একটা মুরগির খোপ। জ্যাক তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয়। সে মুরগির খোপের দরজা খোলে। গলে ভেতরে গিয়ে সেখানকার খড়ের নিচে ঢুকে কোনোরকমে দমবন্ধ করে গুঁটিসুটি মেরে পড়ে থাকে। ভেতরে কোনো মুরগি ছিল না- ওরা বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যার মতন ঘোরাফেরা করছে।

জ্যাক চিৎকার আর দৌড়ঝাঁপের শব্দ শুনতে পায়। বুঝতে পারে লেকেরা তাকে খুঁজছে। সে গুঁটিসুটি মেরে আরও নিচে গিয়ে ঢোকে। ভাবে কটেজের বাগানে ঢুকবার সময় কেউ হয়তো তাকে দেখতে পায়নি।  

ছুটে আসা পা-গুলো অদৃশ্য হয়। চিৎকারও থেমে যায়। কেউই তাকে দেখতে পায়নি! জ্যাক বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে এবং তার হৃদপিণ্ডটা শব্দ করে লাফাতে শুরু করে। সে সত্যি সত্যিই ভড়কে গিয়েছিল।

সারাটা দিন সে সেই মুরগির খোঁয়াড়ের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকে। নড়বার সাহস পায় না। তার ক্ষুধা লাগে, তেষ্টা পায় এবং খুব বন্দি বন্দি লাগে। তবে এটা সে খুব ভালো করেই জানে বের হলে কেউ তাকে দেখে ফেলবে। রাত নামার আগপর্যন্ত তাকে এখানেই থাকতে হবে। মাইক কী মনে করছে তা ভেবে তার খুব অবাক লাগে। মেয়েরাও খুব দুঃশ্চিন্তা করবে।  

একটা মুরগি ভেতরে ঢোকে। বাসার বাকসে বসে একটা ডিম পাড়ে। তারপর চেঁচাতে চেঁচাতে আবারও বেরিয়ে যায়। আরেকটা ভেতরে ঢুকে এবং একটা ডিম পাড়ে। জ্যাক ভাবে সন্ধ্যা বেলায় ডিমের খোঁজে কেউ এলে তাকে দেখতে পাবে না!
কেউ একজন ডিমের জন্য আসে, তবে চায়ের পর আর মুরগির খোপটা খুবই অন্ধকার। দরজা খোলা হয় আর একটা মাথা ভেতরে ঢোকে। একটা হাত এগিয়ে এসে সবগুলো পেটি হাতড়ে দেখে। ডিমগুলো একে একে তুলে নিয়ে দরজাটা আবারও বন্ধ করে রাখা হয়! জ্যাককে দেখতে পায়নি! সে গুঁটিসুটি মেরে মুরগির বাসার পেটি থেকে দূরে খোপের অন্য পাশে চলে যায়!

মুরগির ঘরটার গন্ধ কিন্তু খুব ভালো নয়। ওর ভেতর মেঝেতে বসে থাকার সময় জ্যাকের সবকিছু অসহ্য লাগে। সে জানে দৌড়ে পালিয়ে এসে খুব ভালো কাজ করলেও পুলিশকে জানিয়ে দিয়ে এসেছে যে সেও বাড়ি পালানো শিশুদেরই একজন। এবং এবার পুরো এলাকাটা আবারও তন্ন তন্ন করে খোঁজা হবে। আর এবার সম্ভবত রহস্য দ্বীপও বাদ যাবে না।
তবে ছুটে পালিয়ে না এলে পুলিশ আমাকে ধরে ফেলতো, আর অন্যরা কোথায় আছে তা বলতে বাধ্য করতো, ছেলেটি ভাবে। মাইক যেখানে আমার জন্য নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছে কেবল সেখানে গেলেই নিরাপদে দ্বীপে ফিরে যাওয়া যাবে, তখন আমরা সবকিছু লুকাবার প্রস্তুতি নিতে পারবো।  

অন্ধকার ঘনিয়ে আসলে, আর মুরগিরা তার পাশে বাসার ভেতর বসে ঝিমাতে শুরু করলে, জ্যাক দরজা খুলে বাইরে আসে। দাঁড়িয়ে থেকে শব্দ শুনতে চেষ্টা করে। পাশের কটেজের রান্নাঘরের ভেতর কারও ইস্ত্রি করার দুম-দুম শব্দ ভেসে আসে।

চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।