ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৮৬)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৮৬) রহস্য দ্বীপ

[পূর্বপ্রকাশের পর]
​সে ভেতরের বড় গুহাটায় হামাগুঁড়ি দিয়ে ঢোকে। অন্যেরা উত্তেজিতভাবে তাকে সম্ভাষন জানায়। জিনিসটা পেলে, মাইক?

হুম, ভাগ্য ভালো, টুপিটা পকেট থেকে বের করে মাইক বলে। উইলো বাড়ির কাছেই পড়ে ছিল, তবে ঘন গাছের আড়ালে লুকানো বলে মনে হয় না ওখানে পড়ে থাকলে কেউ এটা দেখতে পেতো।

তারপরও খুঁজে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। না পেলে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা হতো। নৌকাটা এখন সৈকতে জ্যাক। আমি ওটাকে টেনে তোলার শব্দ শুনেছি। ওর ভেতর চারজন লোক আছে।  

আমি শুধু ভেতরের গুহা থেকে বাইরের গুহায় যাতায়াতের সুড়ঙ্গটা নিয়ে চিন্তায় আছি, জ্যাক বলে। ওটা পেয়ে গেলেই বুঝবো খেল খতম। কিছু পাথর আর কাঁকর পাওয়া গেলে ভালো হতো, তাহলে সুড়ঙ্গের মাঝামাঝি স্তূপ করে রাখা যেত, তাতে করে ওখান দিয়ে কেউ আসলে পথটা বন্ধ পাবে। এবং অনুমান করতে পারবে না পেছনে আরেকটা গুহা রয়েছে, যেখানে আমরা লুকিয়ে আছি!

খুব ভালো একটা বুদ্ধি জ্যাক, মাইক বলে। অন্যসব পথ নিয়ে না ভাবলেও চলবে। কারণ বড়রা কেউ ওখান দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারবে না। এসো, সবাই। পাথর, নুড়ি আর মাটির ঢেলা কুড়িয়ে নিয়ে এসো আর সুড়ঙ্গের মাঝামাঝি গিয়ে পথটা বন্ধ করে দাও।  

বাচ্চারা খুব খাটে এবং আধঘণ্টার আগেই পথটা পুরোপুরি আটকে ফেলা হয়। সম্ভবত কেউ ধারণাও করতে পারবে না ওখান দিয়ে একটা পথ ছিল। সময়মতো খুব সহজেই সবকিছু সরিয়ে নেয়া যাবে।  

আমি সরু মুখওয়ালা গুহায় হামাগুঁড়ি দিয়ে গিয়ে উঁকি মেরে দেখে আসছি কিছু শুনতে পাওয়া যায় কিনা, জ্যাক বলে। তাই সে হামাগুঁড়ি দিয়ে এগিয়ে গুহার সরু মুখের কাছে গিয়ে বসে শুনতে চেষ্টা করে।
 
লোকগুলো সত্যিই দ্বীপে এসে তল্লাশি শুরু করে দিয়েছে! জ্যাক তাদের চিৎকার স্পষ্ট শুনতে পায়।  
এখানে কেউ না কেউ থাকে! একজন চিৎকার করে বলে। দেখো ওখানে ওরা আগুন ধরিয়েছিল।  
বনভেজনকারী, সম্ভবত! অন্যজন বলে। এখানেও একটা ফাঁকা টিন পড়ে রয়েছে। আর একটা কার্টন। এ ধরনের টুকটাক জিনিস বেড়াতে আসারাই ফেলে রেখে যায়।

এই! এখানকার এই ঝরনাটা দেখো! অন্য একজন বলে। দেখে মনে হচ্ছে এখান দিয়ে কেউ নিয়মিত হেঁটে যায়।  
জ্যাক গর্জে ওঠে। সেখানে নিশ্চয়ই অসংখ্য পায়ের ছাপ নেই! 

ভালো, ওই বাচ্চাগুলো যদি এখানে থেকে থাকে তাহলে আমরা ওদের ঠিকই খুঁজে পাবো! চতুর্থজন বলে। যদিও খটকা লাগছে একা একা ওরা এখানে কী করে থাকছে, কেবল ওই ছেলেটা গ্রামের বাজার থেকে যা কিনে আনে তা ছাড়া তো এখানে আর কোনো খাবার নেই! 

আমি ওপাশটা ভালো করে দেখে আসছি, প্রথমজন চেঁচায়। আমার সঙ্গে এসো, টম। তুমি এই পাহাড়ের এপাশ দিয়ে যাবে আর আমি ওপাশ দিয়ে- আর তখন পুচকে ভিক্ষুকগুলো আমাদের দেখে ভাগতে নিলে দু’জনের একজন ওদের ঠিকই ধরে ফেলতে পারবো!

জ্যাক মনে মনে খুশি হয়, সে গুহার ভেতর খুব নিরাপদেই আছে। সে যেখানে বসেছিল তার ঠিক পেছন থেকে ফিসফিস একটা শব্দ তার কানে আসে।

জ্যাক! আমরা অনেকগুলো গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। সবকিছু ঠিক আছে তো?
যতটা আশা করা যায়, মাইক জ্যাক বলে। ওরা আঁতিপাঁতি করে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে ঝরনা ঘিরে কয়েকটা পায়ের ছাপ ছাড়া আর কিছুই ওরা খুঁজে বের করতে পারেনি। আমি এখানে আরো কিছুক্ষণ বসছি দেখি আর কী কী শুনতে পাই।

তল্লাশি চলতে থাকে। কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। বাচ্চারা সবকিছু খুব ভালো মতোই সরিয়ে ফেলেছে।  
কিন্তু জ্যাক গুহার ভেতর বসে সৈকতের কাছ থেকে আসা একটা চিৎকার শুনতে পায়।  
কেবল এইটা দেখো! এটা দেখে কী বুঝতে পারছো? 

জ্যাক অবাক হয়ে ভাবে ব্যাটারা আবার খুঁজে কি বের করল। শিগগিরই সে তা জানতে পারে। লোকগুলো মুরগির উঠান ঢেকে রাখা লতা-গুল্ম সব লাথি মেরে সরিয়ে ফেলে এবং সদ্য ছড়িয়ে দেওয়া বালি দেখতে পায়!

জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছু একটা হয়েছে, লোকটা বলে। কিন্তু কি তা কে জানে! জানো, আমার মনে হচ্ছে বাচ্চারা এখনে কোথাও রয়েছে। এখন ওদের খুঁজে বের করার কাজটা আমাদের ওপরই নির্ভর করছে। পুচকে নচ্ছাড়গুলো দেখছি খুবই চালাক, এভাবে বাদবাকি সবচিহ্ন আগেভাগেই লুকিয়ে ফেলেছে! 

চলো তাহলে ঝোপ-জঙ্গলের ভেতরটা খুঁজে দেখা যাক। অন্য একজন বলে। ওরা ওখানে লুকিয়ে থাকতে পারে। ওটাই সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা।

তারপর জ্যাক শুনতে পায় লোকগুলো ফার্নের ঝোপের ভেতর ঢুকে সবগুলো ঝাড়ে লাঠি দিয়ে শক্ত করে গুঁতো মেরে পালিয়ে থাকা বাচ্চাদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা কাউকেই খুঁজে পায় না।  

দু’তিন ঘণ্টা বাদে জ্যাক হামাগুঁড়ি দিয়ে গুহার ভেতরে ফিরে এসে বাইরে যা যা ঘটেছে সবকিছু অন্যদের খুলে বলে। খুব করে লুকাবার চেষ্টা করার পরও তারা মুরগির উঠানটা বের করে ছেড়েছে, সবকিছু শুনে ভয়ে ওদের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।  

এসময় আমরা খেতাম, পেগি বলে। ধোঁয়া বেরুবে বলে এখানে আগুন ধরাতে পারবো না, তবে কালকের বানানো রুটির কয়েকটা রোল, কিছু বুনো স্ট্রবেরি আর পুডিং আছে। প্রচুর দুধও।

চলবে…

ইচ্ছেঘুড়িবাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।