ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৮৮)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮
রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৮৮) রহস্য দ্বীপ

[পূর্বপ্রকাশের পর]
১৮. খোঁজাখুঁজির শেষ
বাচ্চারা এমনভাবে ভেতরের গুহায় বসে থাকে যেন সবাই ওরা একেকটা পাথরে পরিণত হয়েছে। এমনকি চোখের পাপড়ি পর্যন্ত ফেলে না। মনে হচ্ছিল ওরা কেউ বুঝি একেবারে নিঃশ্বাসও নিচ্ছে না! তবু সবার বুক ধুক ধুক করে কাঁপছিল! এমনভাবে পাজরের হাড় ধাক্কা খেতে থাকে যে জ্যাক ভাবে সবাই বুঝি শব্দটা শুনতে পাচ্ছে, এমনকি বাইরের অনুসন্ধানকারীরা পর্যন্ত।

বাচ্চারা শোনে, কেউ একজন সরু সুড়ঙ্গের ভেতর পথ হাতড়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আরো সামনে আসতে গেলে পথটা ঠেসে ধরায়, লোকটা যন্ত্রণায় বিড়বিড় করে একটানা গোঙাতে শুরু করে।

এভাবে বাচ্চারা যেখানে পাথর, নুড়ি আর মাটি স্তূপ করে সুড়ঙ্গটা বন্ধ করতে চেয়েছিল লোকটা সেখানে চলে আসে।

বলেছিলাম! লোকটা অন্যদের ডাকে, সুড়ঙ্গটা এখানে আলগা পাথরের একটা জয়গায় এসে থেমে গেছে। সরিয়ে কি আরো সামনে এগোবার চেষ্টা করবো- এগুলো ছাদ থেকে খসে পড়লো কিনা পাথরগুলো কি টেনে সরিয়ে দেখবো?

না, অপরজন চেঁচায়। তুমি যেতে না পারলে, বাচ্চারাও পারবে না! কাজটা বুনো রাজহাঁস খোঁজার মতো- এই গুহায় আমরা কখনই বাচ্চাগুলোকে খুঁজে পাবো না। ফিরে এসো, টম। লোকটা খুব কষ্টকরে পেছন ফিরে এবং আবারও চাপাচাপি করে পিছাতে শুরু করে আর সেই মুহূর্তে খুব ভয়ানক একটা ব্যাপার ঘটে!
ডেইজি ভীষণ জোরে একটা হাম্বা ডাক ছাড়ে! 

বাচ্চারা এমনটা আশা করেনি এবং প্রচণ্ড ভয়ে ওরা প্রায় নিজেদের চামড়ার ভেতর থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে যেতে নিয়েছিল। এরপর ওরা একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে, মনে হচ্ছিল ডেইজির ডাক শুনে বুঝি লোকটা তখনই ছুটে আসছে।  
চারদিকে পিনপতন নীরবতা। তারপর লোকেদের একজন বলে ওঠে, শব্দটা শুনলে?
অবশ্যই! অপরজন বলে। প্রকাণ্ড এই জগতের ভেতর ওটা আবার কি? 

আর যাই হোক, বাচ্চারা নয় এটা নিশ্চিত! একটা হাসি দিয়ে প্রথমজন বলে। আমি জীবনে কখনও শুনিনি একটা বাচ্চা ওমন করে চেঁচাচ্ছে! 
শব্দটা একটা গরুর ডাকের মতো, অন্য একজন বলে।  
একটা গরু! প্রথমজন চেঁচিয়ে ওঠে। এরপর কী বলবে? তুমি কি বলতে চাইছো, তোমার মনে হচ্ছে এই পাহাড়ের মাঝখানে একটা গরু এসে বাসা বেঁধেছে টম? 
অবশ্যই বাসা বাঁধতে পারে, হেসে টম বলে। তবে শব্দটা কিন্তু ওরকমই প্রবল ছিল! এসো দেখি আবারও কিছু শুনতে পাওয়া যায় কিনা।

চারদিকে আবারও পিনপতন নীরবতা, যেন লোকগুলো কিছু একটা শুনতে চেষ্টা করছে আর সেই মুহূর্তে ডেইজি একেবারে বাধ্য মেয়ের মতো ভয়ঙ্কর একটা ফাঁপা কাশি দেয়, সেটা শোকার্তের মতো বারবার গুহার দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।  
এটা আমার পছন্দ নয়, একটা পুরুষকণ্ঠ বলে। খুব অদ্ভুত স্বরে ডাকছে। চলো সূর্য ডোবার আগেই অন্ধকার এই গুহা থেকে বেরোতে হবে। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যেহেতু আমরা ওরকম শব্দ শুনেছি, তাই এসব গুহার ভেতরে কোনো বাচ্চা ছেলেপেলে থাকতে পারে না! কেন ওদের কি প্রাণের মায়া নেই!

জ্যাক আনন্দে নোরার হাতে চাপ দেয়। তাহলে দুষ্টু ডেইজি লোকগুলোকে ভড়কে দিয়েছে! দারুণ মজার একটা কৌতুক! বাচ্চারা আগের মতোই বসে, তবে এখন ওরা খুব খুশি কারণ ডেইজি ওতো জোরে একটা চিৎকার আর ভয়ানক একটা কাশি দিয়েছে।
বাইরের গুহায় হুড়াহুড়ির শব্দ পাওয়া যায় এবং তারপর এমন মনে হয় যে তারা সবাই আবারও বাইরে বেরিয়ে গেছে। চলো আরো একটু ঘুরে দেখা যাক আর দেখি আর কোনো গুহা রয়েছে কিনা, একজন বলে। দেখো, ওটাকে একটা গুহা বলেই মনে হচ্ছে! 
ওই গুহাতে আমরা আমাদের মুরগিগুলো রেখেছি! জ্যাক ফিসফিস করে বলে।  
ওটা দিয়ে আমাদের এই ভেতরের গুহায় আসার কোনো সুড়ঙ্গ পথ নেই। ইচ্ছে হলে ওটা ওরা সবাই মিলে ঘুরে দেখতে পারে।  

লোকগুলো ওটা দেখে, তবে খুব সাদামাটা মামুলি একটা গুহা এর বেশি কিছু নয় এবং ওর ভেতর কোনো সুড়ঙ্গ নেই, তারা খুব তাড়াতাড়ি ওর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর নিচের সরু মুখওয়ালা গুহাটা খুঁজে পায়। বাচ্চারা এটা পেরিয়ে ইচ্ছেমতো তাদের ভেতরের গুহায় যাতায়াত করে। কিন্তু জ্যাক যেমনটা বলেছিল, গুহামুখটা খুব ছোট হওয়ায় দু’একবার চেষ্ট করে লোকগুলো সেখানে ঢুকবার চিন্তাটা বাদ দেয়।  
খরগোশ ছাড়া এখান দিয়ে কেউ ভেতরে যেতে পারবে না, একটা পুরুষকণ্ঠ বলে।  
বাচ্চারা পারবে, অন্যজন বলে।  

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।