ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৯৩)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৮
রহস্য দ্বীপ (পর্ব-৯৩) রহস্য দ্বীপ

[পূর্বপ্রকাশের পর]
কিন্তু চেয়ার কোথায় পাবে? নোরা জিজ্ঞেস করে। চেয়ার ছাড়া তো আর টেবিলের পাশে গিয়ে বসতে পারবে না।
আমি টুল বানাচ্ছি, জ্যাক বলে আর তাই করে! পাহাড়ের ওপাশে ঝড়ে ভেঙে পড়া একটা গাছ খুঁজে পায় জ্যাক। করাত দিয়ে সে গাছের কাঁটা কাটে এবং প্রতিটি টুকরো দেখতে ঘন টুলের মতো হয়। কেবল একটুকরো গাছের কাণ্ড, তবে বসার জন্য খুবই ভালো আর মানানসই!

গুহাটিকে একটি বাড়ির উপযোগী করে তুলবার সময় দিনগুলো সুখেই কাটতে থাকে। জ্যাকের টেবিলের পাশে রাখা ছোট্ট টুলে বসে আরাম করে খাবার খেতে খুব মজা হয়।

গুহামুখে জ্বালিয়ে রাখা আগুনটা রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল থেকে ক্রমেই আরো উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠার দৃশ্য দেখতে দারুণ লাগে। গুহার পেছনের দিকে পাতা কম্বল বা খরগোশের চাদর দিয়ে ঢাকা নরম গুল্মের বিছানায় শুয়ে, নিবু নিবু আগুনের মাঝে জ্বলন্ত কয়েকখণ্ড কয়লার দিকে তাকিয়ে থাকতে কি যে ভালো লাগে।

পাহাড় ঘিরে ঝড়ো বাতাস হুঙ্কার ছাড়ার পর গুহার ভেতরটা খুব আরামদায়ক বলে মনে হয়। লণ্ঠনের আলো নিচের দিকটা আলোকিত করে রাখে, আর সেলাইয়ের সময় মাঝে মধ্যে পেগি অতিরিক্ত একটা মোমবাতি পাশে রাখে। ছেলেরা একটুকরো কাঠ চাঁছে, কিছু একটা কাটে, বা নোরার সঙ্গে খেলে। কখনও কখনও ওরা শব্দ করে পড়ে। একটু পরপর আগুনটা হল্কা ছেড়ে বেড়ে ওঠে, তখন গুহার ভেতরটা জ্বলন্ত আগুনের উজ্জ্বল আভায় ভরে ওঠে। দৃশ্যটা ভীষণ মজার।

সব সময় হাতে প্রচুর কাজ পড়ে থাকে। এখনও প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় ডেইজির দুধ দোয়াতে হয়। ঘাসে ছাওয়া একটা মাঠে চড়ে বেড়াতে পারায় তাকে খুব খুশি দেখায়, আর রাতে থাকার জন্য ছেলেরা তাকে ছোট একটা ছাউনি বানিয়ে দেয়। মুরগিদেরও খাবার দেওয়া ও দেখাশোনা করতে হয়। মুরগিরা এখন গুহার কাছে একটা উঠানে থাকে। এরা অঢেল ডিম না পাড়লেও জিনিসপত্রের প্রচুর মজুদের কারণে বাচ্চারা সেটা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না।  

আগের মতোই রান্না-বান্না, ধোয়া-মোছার কাজ করতে হয়। ঝরনা থেকে জলও আনতে যেতে হয়। জ্বালানি কাঠ খুঁজে এনে স্তূপ করে রাখতে হয়। পেগির পাইনের কোন খুঁজতে ভালো লাগে কারণ ওগুলো খুব সুন্দরভাবে জ্বলে আর চমৎকার একটা সুঘ্রাণ ছড়ায়।  

নভেম্বর পেরিয়ে যায়। কখনও কখনও আলো ঝলোমল সুন্দর দিন আসে, বাচ্চারা তখন রোদ পোহাবার জন্য পাহাড়ের ঢালে খোলা আকাশের নিচে গিয়ে বসতে পারে। আবার কখনও কখনও উত্তাল ঝড়ো হাওয়ার দিনে একটানা বৃষ্টি পড়ে আর আকাশে কালো ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের দৌড়াদৌড়ি দেখতে পাওয়া যায়। তারপর একদিন হ্রদ জুড়ে সাদা সাদা ঢেউ খেলা করতে শুরু করে।  

মাইক এবং জ্যাককে আবারও নৌকাটা তুলে এনে মেরামত করতে হবে। ঢেউ থেকে কোনো রকমে গা বাঁচিয়ে ওরা ওটাকে সৈকতে তুলে আনে।  

ডিসেম্বর চলে আসলে বাচ্চারা বড়দিন নিয়ে ভাবতে শুরু করে। দ্বীপে বড়দিন উদযাপন খুবই বিস্ময়কর হবে!
গুহাটাকে ক্রিসমাস-ট্রি দিয়ে সাজাতে হবে, জ্যাক বলে। দ্বীপে দু’টা আড়গুঁজি গাছ আছে, তার একটাতে লাল লাল জাম ঝুলছে। তবে এখনে কোনো মিস্লৌ গাছ নেই।

শুধু আমরা নিজেরা তাই বড়দিনটা খুব মজার হবে, পেগি বলে। জানিনা আমার ভালো লাগবে কিনা। আমি স্তবগীত শুনতে পছন্দ করি। আর সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্রে সাজানো দোকান-পাট দেখতে ভালোবাসি। মোজা, রঙিন পটকাসহ এই সময়টাতে আমি বড়দিনের এরকম আরো অনেক জিনিসের অপেক্ষায় থাকি।

আমাদের বাবা-মা তাদের বিমানে উড়ে চিরদিনের মতো হারিয়ে যাবার আগে আমরা তো তাদের সঙ্গেই বড়দিন পালন করতাম, নোরা জ্যাককে বলে। তখন খুব মজা হতো। আমার সবকিছু মনে আছে! 

আমি আশা করছি মাম্মি আর ড্যাডি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়নি, মাইক বলে। আমি তাদের খুব ভালোবাসি- তারা খুব হাসিখুশি আর সুখী ছিলেন।

বাচ্চা তিনটি তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার সময় বড় দিনে কী কী করত তারা তা বলার সময় জ্যাক সবকিছু খুব মন দিয়ে শুনে নেয়। তাকে সব সময়ই তার বুড়ো দাদার সঙ্গে থাকতে হয়েছে, আর বড়দিন নিয়ে এই লোকটি কখনই মাথা ঘামায়নি। জ্যাকের কাছে সবকিছু খুব বিস্ময়কর বলে মনে হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার সময় মাইক, নোরা, আর পেগি চমৎকার যেসব জিনিস পেতো এবং যে ধরনের আনন্দ-ফূর্তি করত তারা অবশ্যই সেসবের অভাব বোধ করবে!

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।