ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

নবান্ন উৎসব | হাসনা হেনা 

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
নবান্ন উৎসব | হাসনা হেনা  প্রতীকী ছবি

হেমন্তের সোনাধানে মাঠ ভরে আছে। হিমি বাতাস ঢেউ তুলে নেচে বেড়ায় সোনালি ধানের শীষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে। ধানের ক্ষেতের ভেতর মহানন্দে ঘুরে বেড়ায় ইকরি চিকরি আর তাদের মা বাবা। ধান প্রায় পেকে উঠেছে। এখন কেবল অপেক্ষা দান কাটার। নতুন ধানের গন্ধে ম ম করছে চারপাশ। 

অপেক্ষার পালা শেষ হলো। মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম লেগে গেলো।

ইঁদুর পরিবারও আনন্দে আত্মহারা। বর্ষার শুরুর দিকেই জন্ম হয়েছে ইঁদুর ছানা ইকরি আর চিকরির। ক'মাসে পুঁচকে ইঁদুর ছানা ইকরি চিকরি বেশ বড় হয়ে উঠেছে। ক'দিন ধরে মা ইঁদুর আর বাবা ইঁদুর মিলে ইকরি চিকরিকে ছোট ছোট কাজ শেখাচ্ছেন। আত্মরক্ষার কৌশলও শিখছে তারা।

কৃষকরা কাঁস্তে হাতে খচখচ করে ধান কাটছে আর মনের আনন্দে গান গাইছে। পাশেই ধানক্ষেতের আলের মাঝ বরাবর গর্ত করে ইকরি চিকরির মা বাবা ওদের নিয়ে বসবাস করে। তাদের পাশেই আরেকটি গর্তে ইকরি চিকরির পিঁপড়ে বন্ধু তুলতুলিদের বাড়ি। ইকরি চিকরি নতুন ধানের মিষ্টি চাল কুট কুট করে খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। তাই মা বাবা তাদের গর্তে রেখে ধান আনতে বাইরে গেছে। ইকরি চিকরি গুঁটিসুটি মেরে গর্তে বসে আছে। হঠাৎ ইকরির কানে কৃষকদের কথা বলার শব্দ এলো।  

একজন কৃষক আরেকজন কৃষকের সঙ্গে নবান্ন উৎসব নিয়ে কথা বলছিলেন। ধান ঘরে তোলার পর কৃষকদের ঘরে ঘরে নাকি নবান্ন উৎসব হবে। মেয়ে, জামাইসহ আত্মীয়-স্বজন আর প্রতিবেশীদের দাওয়াত করবেন। ইকরি চিকরি বুঝতে পারছিলো না নবান্ন জিনিস টা আসলে কী? তাই মা ইঁদুর ঘরে ফিরতেই আগ্রহের স্বরে ইকরি চিকরি মাকে প্রশ্ন করে, মা নবান্ন কী? মা তো হেসেই কুটি কুটি। কিছুক্ষণ পর মা ইঁদুরের হাসি থামলো। মা ইঁদুর বললেন নবান্ন কী জানিস না বাপু। কৃষকদের নতুন ধান ঘরে তোলার পর যে উৎসব হয় সেটাই নবান্ন উৎসব। কৃষকদের ঘরে ঘরে এসময় নতুন ধানের চাল দিয়ে বিভিন্ন রকমের পিঠে, পায়েস, ক্ষীর রান্না করা হয়। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদেরও দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়।  

মায়ের কথা শেষ না হতেই চিকরি বললো- তাহলে আমাদের ঘরেও তো নতুন ধান তোলা হবে, আমাদের নবান্ন উৎসব হবে না। মা বললেন আমাদেরও নবান্ন উৎসব হবে। আগে ঘরে ধান তুলে নিই। চিকরি বললো, মা নবান্ন উৎসবে আমার পিঁপড়ে বন্ধু তুলতুলি ও তাঁর পরিবারের সবাইকে দাওয়াত করতে হবে কিন্তু। মা বললেন ঠিক আছে তাই হবে। চিকরি বললো তাহলে আমার পাখি বন্ধু  টুকটুকিকেও দাওয়াত করতে হবে। মা বললেন অবশ্যই দাওয়াত করবো।

কৃষকদের সঙ্গে সঙ্গে অগ্রহায়ণ মাসে ইঁদুর আর পিঁপড়েদেরও বেশ ব্যস্ত সময় কাটে। ওদের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়, সারা বছরের জন্য কিছু খাবার সঞ্চয় করে রাখার। ইকরি চিকরির  জীবনে এটাই প্রথম নবান্ন।  মা বাবার সঙ্গে ইকরি চিকরিও খাবার সংগ্রহ করবে এবার। সারাদিন কৃষকেরা দলবেঁধে ধানগাছ কেটে আঁটি বেঁধে সারি সারি মাঠজুড়ে বিছিয়ে রাখে । সন্ধ্যে নেমে এলেই তারা বাড়ি ফিরে যায়।  

রাতভর ইঁদুরেরা ধানগাছের আঁটিগুলোর নিচে কুট কুট করে মাটি কেটে কেটে ইয়া লম্বা সুড়ঙ্গ তৈরি করে। একদম তাদের থাকার জায়গা পর্যন্ত। তাদের থাকার ঘরের এক পাশেই তাদের সঞ্চিত খাদ্যগুলো একসঙ্গে জমা করে রাখে। গর্ত করা শেষ হলেই শুরু হয় ধানের শীষ থেকে ধান কেটে কেটে নিয়ে জমিয়ে রাখার কাজ। পুঁচকে ইঁদুর ইকরি চিকরিকে মা বাবা সব শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করে নিয়েছে এতোদিনে।  

কীভাবে গর্ত করতে হয়, কীভাবে গর্তের ভেতরে ধান নিয়ে নিয়ে জমিয়ে রাখতে হয়। ইকরি চিকরি সব শিখে নিয়েছে। নতুন ধানের মিষ্টি চাল কুট কুট করে ইকরি চিকরি খায় আর মনের আনন্দে লাফায়। মা বলেন সাবধানে থাকিস। বেশি লাফালাফি করতে গিয়ে কৃষকের হাতে ধরা পড়িস না যেন। কৃষকের হাতে ধরা পড়লে অকালে প্রাণ হারাবি বাপু।  

কৃষকদের ধান তোলা শেষ। মাঠে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে কিছু ধান। পাখিরা দল বেঁধে ধান কুড়িয়ে খেতে আসে। পিঁপড়েদের ও ইয়া লম্বা লম্বা লাইন লেগেছে সবার মুখে মুখে ধান। বেশি শীত পড়লে পিঁপড়েরাও বাইরে বের হতে পারে না। তাই তাদেরও খাদ্য সঞ্চয় করার এটাই উপযুক্ত সময়। সবার ঘরে ঘরেই নবান্ন উৎসব লেগেছে। ইকরি চিকরিদের ঘর ভরতি মেহমান। তুলতুলিদের পরিবার আর টুকটুকিদের পরিবারের সবাই এসেছে ইকরি চিকরিদের সঙ্গে নবান্ন উৎসবে যোগ দিতে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।