ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

বরফের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা

আবু আফজাল সালেহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
বরফের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা

অ্যান্টার্কটিকার নাম তোমরা নিশ্চয় শুনেছো। বরফশীতল মহাদেশ এটি।

তোমরা জানো যে, পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশ রয়েছে। এটিও একটি মহাদেশ। বেশ কিছু দেশ নিয়ে মহাদেশ হয়। কিন্তু এ মহাদেশ এরকম নয়। এ মহাদেশের কোনো দেশ নেই। আবার স্থায়ী বাসিন্দাও নেই। এটার মালিকানাও কারো দখলে নেই! 

হ্যাঁ তাই। গরমকালে এখানে ৪ হাজারের মতো পর্যটক আসে এবং শীতকালে এক হাজারের নিচে নামে। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা নামে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে! ভাবা যায়! 

অ্যান্টার্কটিকার সুমেরুবৃত্তের প্রায় পুরোটা জুড়েই এই মহাদেশের বিস্তার, এর মানে হলো প্রায় সারা বছরই এই স্থানের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে থাকে। এমন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পৃথিবীর অন্য জায়গার তুলনায় এখানে বসবাস করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তাই এখানে মাত্র ৩শ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। আর প্রাণীদের মধ্যে পেঙ্গুইন, শিল জাতীয় আর পিলেতজিক নামক মাছ বাস করে এ ঠাণ্ডার মহাদেশে। এখানে রানী বলা হয় পেঙ্গুইনকে। আমরা বলি ‘কোটপরা ভদ্রলোক’। তোমাদের জন্য কৌতূহলী এক প্রাণী হচ্ছে পেঙ্গুইন।  

...মজার ব্যাপার হলো, সাঁতার কাটায় পেঙ্গুইনরা বেশ পটু। প্রতি ঘণ্টায় এরা প্রায় ৩০ মাইল পর্যন্ত সাঁতার কেটে যেতে পারে। আবার সাঁতারের পাশাপাশি এরা ভালো ড্রাইভও দিতে পারে। সাঁতারের সময় সামনের পা দু’টি ব্যবহার করে এবং পা দিয়ে দিক পরিবর্তন করে। একটানা ২০ মিনিট পানিতে ডুব দিয়ে থাকা এদের কাছে তেমন কঠিন কোনো কিছু নয়! 

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ মূলত কঠিন বরফের এলাকা। বরফের রাজত্ব প্রায় ৫৪ লাখ বর্গমাইলেরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এবং এ কারণে এ মহাদেশ হয়ে উঠেছে পৃথিবীর ৫ম বড় মহাদেশ। এখানে প্রায় ৩শটি হ্রদের সন্ধান পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে বিশুদ্ধ পানির অভাব ক্রমেই বাড়ছে। তোমরা জেনে রাখো- পৃথিবীর বিশুদ্ধ পানির শতকরা ৭০ শতাংশ এ মহাদেশেই জমা রয়েছে। এবং তার বেশিরভাগই জমাট। মানে বরফ। এখানে বরফের যে স্তর রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম পুরু স্তর হচ্ছে প্রায় এক কিলোমিটারের।

..এন্টার্কটিকার দক্ষিণে অনুসন্ধানকারী বিজ্ঞানীদলের রিপোর্ট অনুযায়ী এন্টার্কটিকার বিভিন্ন স্থানের বায়ু প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০০ মাইল পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। তাই বলা যায়, ঝড়ো বাতাসও এখানে বয়। এখানে একটা মিউজিয়াম আছে। যার নাম ‘পোর্ট লকারি মিউজিয়াম’। গবেষণার জন্যে এই মহাদেশে ৮০টি গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত যা পরিচালনা করে ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের গবেষক।

তোমরা অভিযাত্রিক ক্যাপ্টেন জেমস কুকের নাম শুনেছো। ইনি ছিলেন ইংরেজ। অ্যান্টার্কটিকা নামে যে একটি মহাদেশ আছে এটির প্রথম ধারণা দেন এই ব্রিটিশ পর্যটক। তিনি দু’বার (১৭ জানুয়ারি, ১৭৭৩ এবং ১৭৭৪ সালে) অ্যান্টার্কটিকা অতিক্রম করেন। তাই তাকে অ্যান্টার্কটিকার আবিষ্কারক বলা হয়। তার আগে কয়েকজন রাশিয়ান এ মহাদেশের কিছু কিছু অংশ শনাক্ত করেছিলেন বলে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানায়। তবে তারা পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি। বিস্তারিত ধারণা দেন জেমস কুক। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।  

গবেষকদের তথ্য মতে, এন্টার্কটিকার ৪৫ শতাংশ বরফ সেল (Ice Shell), ৩৮ শতাংশ বরফ দেয়াল (Ice Walls), ১৩ শতাংশ বরফ স্রোত (Ice Streams) এবং বাকি ৪ শতাংশ হলো শিলা (Rocks) দিয়ে গঠিত। কাজেই বোঝা যাচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা হলো বরফের আধার। মাঝে মধ্যে রয়েছে বরফ পাহাড় এবং আছে দুটো সাগর। এন্টার্কটিকা মহাদেশের মাঝে রয়েছে ‘ট্রান্সঅ্যান্টার্কটিক’ পর্বতশ্রেণি যা এ মহাদেশকে পূর্ব ও পশ্চিম অংশে ভাগ করেছে।

অ্যান্টার্কটিকা তার সাদা বরফে আবৃত করে রেখেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পর্বতমালা। যার নাম গ্যাম্বার্টসেভ। এটা প্রায় ৭৫০ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা প্রায় ৯ হাজার ফুট, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের প্রায় তিন ভাগের একভাগের সমান।

অ্যান্টার্কটিকায় যাওয়া দুরূহ ব্যাপার এবং কষ্টসাধ্য। কেউ যদি যেতে চান তাহলে থাকে প্রথমে নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে। সেখান থেকে প্লেন বা জাহাজে এখানে যাওয়া যাবে। নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি প্লেন সার্ভিস রয়েছে। ১৯৮০ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়া-অ্যান্টার্কটিকা প্লেন সার্ভিস আছে। যা  ‘কোয়ান্টাস’  নামে পরিচিত। এটা নিয়মিতই যাতায়াত করে বলে জানা যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
এএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।