শুক্রবার (২৯ মার্চ) প্রাতঃরাশের পরই শতযুবার গাড়ি ছুটলো গন্তব্যে। আধঘণ্টার পথ চলতে চলতে গাড়ি থামলো সংসদ মার্গের সামনে সংসদের ফটকে।
অবিভক্ত ভারতবর্ষের সময়কার ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর ওপর আধুনিকায়নে যেন আভিজাত্যের পরিচয় দিচ্ছিলো এই সংসদ।
অতিথি হলে প্রাথমিক ব্রিফিং শেষে পার্লামেন্টের সামনে গিয়ে গ্রুপ ফটোবন্দি হন ডেলিগেটরা। এরপর তাদের দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নিয়ে যান রমেশ কুমার। লোকসভায় আসন নিয়ে ডেলিগেটরা তখন মুগ্ধ বিস্ময়ে প্রায় এক শতাব্দীর পুরোনো ভবন পরখ করে নিচ্ছিলেন। কয়েক স্তরে ইংরেজি ‘U’ বর্ণের মতো আসন পাতা্। ছাদ খানিকটা গম্বুজের মতো।
রমেশ কুমার শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন ডেলিগেটদের। তিনি জানান, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর এতো বড় রাষ্ট্র চালাতে কোনো আইন প্রণয়নে যেন কোনোরকম ত্রুটি না থেকে যায় সেজন্য ভারত দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট সংসদ চালিয়ে থাকে, যেন আইন প্রণয়নে ভারসাম্য থাকে। এরমধ্যে একটি হলো লোকসভা, এটা নিম্নকক্ষ; আরেকটি রাজ্যসভা, সেটা উচ্চকক্ষ। বর্তমানে লোকসভার মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪৫ জন। এর মধ্যে ৫৪৩ জন সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং দু’জন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন। আর রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা ২৫০। এরা রাজ্য বা অঞ্চলগুলোর বিধানসভার সদস্যদের ভোটে রাজ্যসভায় আসেন। ভারতে কোনো বিল আইনে পরিণত করতে সংসদের উভয়কক্ষে তা পাস হতে হয় এবং এরপর যায় রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য। যদি কখনো লোকসভা ও রাজ্যসভায়ও কোনো বিল নিয়ে মতৈক্য না হয়, তবে তা ওঠানো হয় সেন্ট্রাল হলে, এতে সংসদের যৌথ অধিবেশনও হয়ে থাকে। বিদেশি কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান এলে অতিথি হিসেবে ভারতের সংসদে ভাষণ দিলে এই হলেই দিয়ে থাকেন।
লোকসভার অবকাঠামোগত দিক দেখিয়ে রমেশ কুমার বলেন, তিন দিক থেকে পাতা আসনের সামনের চেয়ারে বসেন লোকসভার সভাপতি বা স্পিকার, তার সামনে ডেপুটি স্পিকার। ডান পাশে লোকসভার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর আসন এবং তার পাশেই সরকারি দলের আসন। আর স্পিকারের বাঁ পাশে বিরোধীদলীয় প্রধান ও তার দলের সদস্যদের আসন। সাধারণত জ্যেষ্ঠতার বিচারেই আসন নিয়ে থাকেন লোকসভার সদস্যরা। অন্যদিকে, রাজ্যসভায় পদাধিকারবলে সভাপতিত্ব করেন উপ-রাষ্ট্রপতি।
লোকসভা দেখার পর প্রায় একই কাঠামোর রাজ্যসভার আসনেও বসার সুযোগ পান বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা। সেখানে খানিকটা ব্রিফ শেষে তাদের সেন্ট্রাল হলে নিয়ে গিয়েও ব্রিফ করা হয়। এই হলের চারপাশে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীদের ছবি দেখা যায়।
সংসদ পরিদর্শন শেষে ফের অতিথি হলে আসেন ডেলিগেটরা। এখানে তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ভারতের ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এসএস আহলুওয়ালিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কল্পনা শর্মা।
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং আসনের লোকসভা সদস্য আহলুওয়ালিয়া শুরুটা ইংরেজিতে করলেও পরে বাংলায়ই মুগ্ধ করেন ডেলিগেটদের। প্রবীণ এই পার্লামেন্টারিয়ান মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ভারত অভিমুখে ছুটে যাওয়া লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে যে ভারতীয়রা এগিয়ে এসেছেন হৃদয়পেতে, তিনিও সেই মানুষদের কাতারে ছিলেন বলতেই গলা ধরে আসে আহলুওয়ালিয়ার।
সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় আহলুওয়ালিয়া ডেলিগেটদের উদ্দেশে বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেরই প্রায় অর্ধেকের মতো জনগোষ্ঠী যুবা। এই যুবারা দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে, তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে নিউ ইন্ডিয়া, অন্যদিকে সোনার বাংলা গড়তে কাজ করছে। সেজন্য দু’দেশের যুবশ্রেণীকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আর সেজন্য নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা আরও দৃঢ় করা জরুরি। এই সফর দু’দেশের যুবশ্রেণীর পরস্পরকে বুঝতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
অতিথি হলের আনুষ্ঠানিকতার পরও আহলুওয়ালিয়া আরও বেশ কিছুক্ষণ গল্পে মোহিত করে রাখেন ডেলিগেটদের।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের আগে এই বর্ষিয়ান নেতার সঙ্গে ফ্রেমবন্দি হয় বাংলাদেশের ১০০ তরুণ-তরুণী। এরপর তারা সংসদ জাদুঘর ও গ্রন্থাগার পরিদর্শনে পা বাড়ায়।
সাতদিনের ভারত সফরে গত ২৮ মার্চ নয়াদিল্লি এসেছে শতযুবার দলটি। ডেলিগেশন টিমটি নয়াদিল্লি ছাড়াও আগ্রা ও হায়দ্রাবাদ ভ্রমণ করবে। ভ্রমণ শেষে আগামী ৪ এপ্রিল দেশে ফিরবে শতযুবা।
মেঘের রাজ্যে মাথা উঁচিয়ে হঠাৎ হিমালয়
নয়াদিল্লি পৌঁছেছে বাংলাদেশের শতযুবা
ভারতের পথে ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’
১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ ভারত যাচ্ছে বৃহস্পতিবার
ভারত যাচ্ছে আরও ‘১০০ বাংলাদেশি-বন্ধু’
বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৯
এইচএ/