ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সাত দিনের সফরে আসা বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমকে সোমবার (১ এপ্রিল) বিকেলে এমন অভাবনীয় উষ্ণ অভ্যর্থনাই দিলো হায়দ্রাবাদের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জহওরলাল নেহরু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনটিইউ)। বাংলাদেশ ও ভারতের যুবশ্রেণীর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিমের (এনএসএস) আওতায় আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’-এ দেওয়া হয় এই উষ্ণ অভ্যর্থনা।
দু’দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেএনটিইউ’র রেজিস্ট্রার ড. এন ইয়াদাইয়াহ। অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বেনুগোপাল রেড্ডি। সম্মানীয় অতিথির বক্তৃতা করেন ডেলিগেশন টিমের নেতৃত্বদাতা ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) নবনীতা চক্রবর্তী। স্বাগত বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এনএসএস প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. জি নরসিংহ। ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম নিয়ে ব্রিফ করেন তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের এনএসএস অফিসার অধ্যাপক ড. বিষ্ণু দেব।
আরও বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এসও (আইসি) নবীন রাওয়াত, হায়দ্রাবাদের ডিওয়াইসি-এনওয়াইকেএস আর ভেঙ্কটেশম, এনএসএস আরডি-হায়দ্রাবাদের আঞ্চলিক পরিচালক এম. রাম কৃষ্ণ। অতিথি মঞ্চে আরও ছিলেন কো-অর্ডিনেটর (মিডিয়া অ্যান্ড কালচার) কল্যাণ কান্তি দাশ। ডেলিগেশন টিমের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অভিষেক ভদ্র।
অতিথিদের বক্তৃতা পর্বের ফাঁকে এবং শেষে তাদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় এবং স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
বক্তারা বলেন, উপমহাদেশের লোকজন কেবল দেখতেই এক নন, তাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-আচারও প্রায় একই। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ডেলিগেশন টিমের এই ভারত ভ্রমণ উভয়পক্ষের মধ্যকার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনকে আরও টেকসই করবে, আরও স্থায়িত্ব দেবে। যা উভয়পক্ষের সুদীর্ঘ সমৃদ্ধির পথে যাত্রাকে করবে আরও সংহত।
বক্তৃতা পর্ব শেষে শুরু হয় আয়োজনের মূল আকর্ষণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। স্বাগতিকদের সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনা করেন এনএসএস প্র্রোগ্রাম অফিসার এবং কোরিওগ্রাফার এনএসএল প্রাবীণা। ডেলিগেশন টিমের সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা।
প্রথমেই অনুষ্ঠান মঞ্চে পরিবেশিত হয় ১১টি প্রধান ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল নাচের অন্যতম কুচিপুরি নৃত্য। মুগ্ধতায় ডোবানো এই পরিবেশনের পর মিলনায়তন মাতিয়ে তোলে চলতি বছর রাজ্য পর্যায়ে নৃত্য-প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছয় জনের লোকনৃত্য। এরপর গিটার হাতে সুর তোলেন হায়দ্রাবাদে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি দীপেন চক্রবর্তী। তিনি বাংলায় তিনটি গানের পাশাপাশি হিন্দি এবং তেলেঙ্গানার প্রধান ভাষা তেলুগুতেও একটি গান পরিবেশন করেন। এরপর ফটকে যে শিশুর দল স্বাগত জানিয়েছিল ডেলিগেশন টিমকে, তাদের ১৪ জন পরিবেশন করে নৃত্য। এই শিশুদের নৃত্য পরিবেশনের সময় হর্ষধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন।
স্বাগতিকদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর ডেলিগেশন টিমের হয়ে প্রথম মঞ্চে যান প্রকট চাকমা। নিজের জনগোষ্ঠীর একটি গানের সুর তিনি ফুটিয়ে তোলেন বাঁশিতে।
এরপর রবীন্দ্রসংগীতের সুর মিলনায়তনে ছড়িয়ে দেন সেজুঁতি বড়ুয়া, নুর ই রেজিয়া মম, বৈশাখী নাথ, বিথি পান্ডে ও নুসরাত জাহান প্রভা। তাদের পর মঞ্চে লালন সংগীত পরিবেশন করেন কোহিনুর আক্তার গোলাপী। কবিতা আবৃত্তি করেন সুজন সাহা।
সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার ও জামান সাইফ প্রথমে একক সংগীত পরিবেশনের পর প্রকট চাকমা ও সায়েদুল হককে সঙ্গে নিয়ে মাতিয়ে তোলেন মেলোডি পরিবেশনে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পর্বের পর আবারও স্বাগতিকরা দায়িত্ব নেয় মিলনায়তন মাতানোর। একের পর এক তেলুগু ও হিন্দি ভাষার গানে মিলনায়তনভর্তি দর্শক-শ্রোতা মেতে ওঠে নৃত্যোল্লাসে। তখন স্বাগতিক-অতিথি যেন মিলে যায় এক সুতোয়। কেউ একজন তখন বলছিলেন, একটি গোষ্ঠীকে আরেকটি গোষ্ঠীর নৈকট্যে আনার ক্ষেত্রে সংগীতের মতো কার্যকর কিছু হতে পারে না। অনুষ্ঠান শেষে যখন ডেলিগেটরা স্বাগতিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন যেন এই কথার ছাপ স্পষ্ট হচ্ছিল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপন হয়ে যাওয়া তেলেঙ্গানার শিশু-কিশোর-কিশোরী আর তরুণ-তরুণীদের মুখে।
আরো পড়ুন
কেক কেটে জাহানারার জন্মদিন উদযাপন করলো শতযুবা
নাম লেখা হয়ে গেলো বিল ক্লিনটনের সঙ্গে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩৮৪৩ ভারতীয় সেনার স্মৃতিরমিনারে
মোহনীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়গান
ভারতের সংসদে বাংলাদেশের শতযুবা
মেঘের রাজ্যে মাথা উঁচিয়ে হঠাৎ হিমালয়
নয়াদিল্লি পৌঁছেছে বাংলাদেশের শতযুবা
ভারতের পথে ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’
১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ ভারত যাচ্ছে বৃহস্পতিবার
ভারত যাচ্ছে আরও ‘১০০ বাংলাদেশি-বন্ধু
২৫শ বছরের ইতিহাসের জাদুঘরে বাজছে 'কারার ওই লৌহ কপাট'
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৯
এইচএ/এমএইচএম