‘অক্ষরধাম’ অর্থ ‘ঈশ্বরের ঐশ্বরিক নিবাস’। বহতা যমুনার পাড়ে ৮৬ হাজার ৩৪২ বর্গফুট জায়গার ওপর স্থাপনাটি ভক্তদের কাছে পরিচিত ‘স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম’ বলে।
স্থপতিদের ধারণা মতে, নকশা-পরিসর অনুসারে এই মন্দিরের নির্মাণ শেষ হতে অন্তত ৩০ বছর লাগার কথা। অথচ শেষ হয়ে যায় ৬ গুণ কম সময়ে। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় স্থাপত্য রীতি মেনে পুরোপুরি বাস্তুশাস্ত্র, পঞ্চতন্ত্রের ওপর আধাত্মিকতা ও সংস্কৃতির মিশেলে গড়ে তোলা এ নয়নাভিরাম স্থাপনার দরজা দর্শক, ভক্ত ও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ২০০৫ সালের ৬ নভেম্বর।
অক্ষরধামে প্রবেশ করতে হয় ‘দশ দ্বার’ বা দশ দরজা দিয়ে। এই দ্বারের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতি ও মত-বর্ণের বৈচিত্র্য বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যেকোনো জায়গা থেকেই মঙ্গল ও কল্যাণকর চিন্তাকে গ্রহণ করে এই মন্দির। যার মাধ্যমে কার্যত সার্বজনীন প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও বৈশ্বিক শান্তির বার্তা দিয়ে থাকে ‘অক্ষরধাম’। প্রত্যেক দ্বারেই রয়েছে পানির ফোয়ারা। যে কারণে এখানে দাঁড়ালেই যেন এক প্রশান্তির বাতাস পরশ দিয়ে যায় শরীরে। দশ দ্বার পেরিয়ে ‘ভক্তি দ্বার’। অলঙ্কৃত পাথরে নির্মিত এই ভক্তি দ্বারে রয়েছে ভক্ত-ভগবানের নানা শৈল্পিক রূপ। যেখানে আছে অক্ষর-পুরুষোত্তম, লক্ষ্মী-নারায়ণ, সীতা-রাম, রাধা-কৃষ্ণ, পার্বতী-শিব, নর-নারায়ণসহ দেব-দেবীর স্থাপত্য। এই ভক্তি দ্বারেই রয়েছে ভিজিটর সেন্টার, যেখান থেকে ‘অক্ষরধাম’ মন্দির সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানা যায়।
এরপর আছে ‘ময়ুর দ্বার’। এই দ্বারে বিভিন্ন আকার ও নকশার ৮৬৯টি পাথুরে ময়ুরের স্থাপত্য সৌন্দর্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির আত্ম-শুদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে। দু’টি ময়ুর দ্বারের মাঝে বিশাল এক মার্বেলের ওপর রয়েছে স্বামীনারায়ণের পদচিহ্নের রেপ্লিকা। এটিকে স্বামীনারায়ণের দুনিয়ায় আবির্ভাবের নিদর্শন মনে করেন তার ভক্তরা।
প্রত্যেক দ্বারে গিয়েই বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়েছে ডেলিগেটদের। ডেলিগেটদের সঙ্গে যে ক’জন ভারতীয় আসেন, তারাও যেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, বাড়ির পাশে এই ‘আরশি নগর’ এতো নয়নাভিরাম হতে পারে।
অক্ষরধামের মূল আকর্ষণ ২৩৪টি খোদাইকৃত পিলারের ওপর স্থাপিত ১৪১ ফুট উঁচু, ৩৫৬ ফুট লম্বা ও ৩১৬ ফুট চওড়া অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির। অলঙ্কৃত ৯টি বিশাল গম্বুজের এই মন্দিরে রয়েছে ভারতবর্ষের ১০ হাজার বছরের সংস্কৃতি আর সনাতন ধর্মের ২০ হাজার দেব-দেবী ও সাধু-গুরুদের স্থাপত্য। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে ভগবান স্বামীনারায়ণের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের অঙ্কিত-অলঙ্কৃত চিত্র। প্রতিটি খোদাইকৃত পিলার, ছাদ ও গম্বুজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেব-দেবীদের বিভিন্ন রূপ এবং তাদের উদ্দেশে প্রার্থনার চিত্র।
এরমধ্যে একেবারে ভেতরে রয়েছে দেবালয় বা গর্ভগৃহ। এই দেবালয়ের মাঝে সিংহাসনে উপবিষ্ট পঞ্চধাতুতে তৈরি স্বামী নারায়ণের ‘মূর্তি’। মূর্তির চারপাশে সোনার সূক্ষ্ম কাজ। স্বামীনারায়ণকে ঘিরে দু’পাশে প্রার্থনারত অবস্থায় রয়েছেন তার স্বর্গীয় শিষ্য গুনাতিনন্দ স্বামী, ভগতিজি মহারাজ, শাস্ত্রীজি মহারাজ, যোগীজি মহারাজ এবং প্রমুখ স্বামী মহারাজ। গর্ভগৃহের আশপাশে রয়েছে সীতা-রাম, রাধা-কৃষ্ণ, লক্ষ্মী-নারায়ণ ও শিব-পার্বতীর বিশেষ বেদী। এছাড়া মন্দিরের অবকাঠামোয় রয়েছে গজেন্দ্র পীঠ, নারায়ণ পীঠসহ বিভিন্ন অংশ। এসব অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সনাতন ধর্ম ও ভারতবর্ষের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি এবং মানুষসহ সৃষ্টির জীবন-সংগ্রামের বিভিন্ন গল্প।
এর বাইরে স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম কমপ্লেক্সে রয়েছে অভিষেক মণ্ডপ, যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ পূজা দিতে পারেন। আছে প্রদর্শনী হল, ওয়াটার শো, থিম্যাটিক গার্ডেনও। খাবার-দাবারের জন্য ফুড কোর্ট এবং কেনাকাটার জন্য আছে শপিং সেন্টারও।
এই বিশালতার কারণে ‘অক্ষরধাম’কে বিশ্বের সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দির হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। আকারের চেয়েও মন্দিরের নকশা ও কারুকাজ নিয়ে বিস্মিত খোদ নির্মাণে জড়িত স্বামীনারায়ণের ভক্তরা। এমনই একজন স্থপতি রুচি শুক্লা
তিনিই বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমকে ঘুরে ঘুরে অক্ষরধাম মন্দির দেখাচ্ছিলেন। স্বামীনারায়ণের ভক্ত এই স্বেচ্ছাসেবক স্থপতি বলেন, গুজরাটের গান্ধীনগরে প্রথম স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির হয়েছিল। নয়াদিল্লির এই অক্ষরধাম দ্বিতীয়, তৃতীয় অক্ষরধাম মন্দির হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। বিস্ময়কর স্থাপত্যের প্রাচীন মন্দিরগুলো দেখে আমরা বলে থাকি, ওই মন্দির নির্মাণ আমাদের অমুক প্রজন্ম দেখেছিল। এই অক্ষরধাম দেখে আমাদের পরের প্রজন্মগুলো বলতে পারবে, তাদের পূর্বসূরীরা কী বিস্ময় গড়ে গেছে এই যমুনার পাড়ে।
আরও পড়ুন
** রামোজি ফিল্ম সিটি: এক পাড়াতেই দেশ-বিদেশ
** সালার জং জাদুঘর যেন এক দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহশালা
** সান্ধ্যকালীন সাউন্ড-লাইট শো নিয়ে গেলো গোলকোন্ডা যুগে
** উত্তম-সুচিত্রা-শাহরুখ-ঐশ্বরিয়াদের সঙ্গে লাঞ্চ!
** থিয়েটারে ঢুকেই নায়িকা কানেতা, ‘ফিল্ম’ তৈরি ১৫ মিনিটে!
** উষ্ণ অভ্যর্থনা-বর্ণিল আয়োজনে শতযুবাকে আপন করলো জেএনটিইউ
** কেক কেটে জাহানারার জন্মদিন উদযাপন করলো শতযুবা
** নাম লেখা হয়ে গেলো বিল ক্লিনটনের সঙ্গে
** মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩৮৪৩ ভারতীয় সেনার স্মৃতিরমিনারে
** মোহনীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়গান
** ২৫শ বছরের ইতিহাসের জাদুঘরে বাজছে 'কারার ওই লৌহ কপাট'
** ভারতের সংসদে বাংলাদেশের শতযুবা
** মেঘের রাজ্যে মাথা উঁচিয়ে হঠাৎ হিমালয়
** নয়াদিল্লি পৌঁছেছে বাংলাদেশের শতযুবা
** ভারতের পথে ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’
** ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ ভারত যাচ্ছে বৃহস্পতিবার
** ভারত যাচ্ছে আরও ‘১০০ বাংলাদেশি-বন্ধু
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৯
এইচএ/