সুলাইবিয়া (কুয়েত) থেকে: কুয়েত সিটির বাইরে সুলাইবিয়ার বাজারে এলে মনে পড়ে যাবে ঢাকার কারওয়ানবাজারের কথা! ব্যস্ততায় ঠাসা। তবে বাজার অর্থে সেভাবে নেই কোনো হাঁক-ডাক।
দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে ফল। সব কিছুই ছিমছাম, পরিপাটি আর নান্দনিক সৌন্দর্যের বুননে ঠাসা এই বাজার।
এখানেই দেশটির কেন্দ্রীয় ফল ও সবজির মার্কেট। যাকে বলা হয় সেন্ট্রাল ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রুট মার্কেট, সুলাইবিয়া।
বিশাল এক্সিবিশন হলের মতো বাজারটি। বাইরে হাজার গাড়ির পার্কিং সুবিধা। এর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিশাল কনভেনশন সেন্টারের আদলে তৈরি এই মার্কেট ১৭টি জোনে বিভক্ত। প্রতিটি জোনে দোকান রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫টি।
ছবির মতো সাজানো, গোছানো আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। আর বাংলাদেশের কেউ গেলে মনে মনে গুণতে থাকবেন ঢাকার পাইকারি বাজারের সঙ্গে এ বাজারের পার্থক্যগুলো।
ফলাফলটা নিশ্চিতভাবেই আসবে বিশাল ব্যবধান।
হাঁক-ডাক ছাড়া আবার বাজার হয় নাকি? আসলে হয় এবং তা সুন্দরভাবেই হয়। সেটিই ক্ষণে ক্ষণে বলে যাবে সুলাইবিয়ার এই মার্কেট।
সুশৃঙ্খল পরিবেশ সর্বত্র। থরে থরে টাটকা ফল আর শাক সবজি সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। দু’টি দোকানের মাঝের দূরত্বটাও বেশ। যেখান দিয়ে একঙ্গে অনায়াসেই যেতে পারে ফর্ক লিফট কিংবা ২০ জনের বেশি মানুষ।
পাইকারি বা খুচরো সব ধরনের ফল কিংবা সবজি মিলবে এ বাজারে।
ফর্ক লিফটে করে খামার থেকে আসা টাটকা শাক-সবজি প্যাকেটজাত হয়ে নামছে এখানকার পাইকারি আড়তে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে দরদাম করে মাল তুলে নিচ্ছেন লরি বা পিক-আপে। সুশৃঙ্খল পরিবেশে এখানকার কাজ শেষে আবার তা নানা হাত ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে ভোক্তাদের হাতে।
অবাক করার বিষয়টি হলো, বিশাল এ মার্কেটে ঘুরে ফিরেই চোখে পড়বে বাংলাদেশিদের। বাজারে মিলবে বাংলাদেশে পরিচিত সব শাক-সবজি, ফলও। ভেতরে ঢুকলে তাই মনেই পড়বে দেশের আড়ৎগুলোর কথা।
নানা ফলের সমাহার সামনে নিয়ে বিক্রেতা হিসেবেও স্বদেশিদের দেখা মিলবে। তাদের দেখে তাই কৌতুহল থেকে প্রশ্ন উঠে আসবেই- ‘ভাই এটা কি ফল। ওটা কি ফল? কোন দেশে এই ফল হয়’?।
কর্তৃত্ব আর প্রভাবেও পিছিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ক্রেতা দেখলে ঠিকই আরবিতে আর নিজ দেশের মানুষকে দেখলে বাংলায় বলবেন- ‘কি ফল লাগবে’?
আর এর মাঝেই কত শত প্রশ্ন উঁকি দেয় মনের মাঝে, আনমনে। আমাদের বাংলাদেশিরা যেখানে এমন চমৎকার পরিবেশে ব্যবসা পরিচালনা করে সফলতা পেয়েছেন! সেখানকার এ পরিবেশ আর ধারণাটাই বা কেন কার্যকর করা হয় না স্বদেশে!
লক্ষীপুরের রামগতির মিজান দোকান পরিচালনা করেন এখানে। বাংলানিউজকে তিনি জানান, ভোর ছয়টায় মার্কেট খোলে। দিনভর বেচা-কেনা শেষে বন্ধ হয় রাত দশটায়।
চট্রগামের ফটিকছড়ির নুরুন্নবী বাংলানিউজকে বলেন, আমার দোকানে আবদালি কৃষি এলাকা থেকে টাটকা শাক-সবজি আসে। আবদালির ওই মরুর বুকেও ফসল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বহু বাংলাদেশি।
‘লাভ ভালোই। তবে মাঝে মাঝে ক্ষতিও হয়, যখন পণ্যের চাহিদা কমে যায়’- যোগ করেন নুরুন্নবি।
চাঁদপুরের শাহরাস্তির মানিক আলী কুয়েতি মালিকানাধীন একটি দোকানে কাজ করেন। এখানে গত দশ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মালিকের গাড়ি নিয়ে আমিই কখনো কখনো মাল কিনে আনি। আবার বেচা-বিক্রিও করি আমি।
তিনি জানান, তার দোকানের ফলের চালান আসে আরব দেশ ইয়েমেন থেকে।
কুমিল্লার বরুরার নুরুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, আপেল, নাশপাতি, আঙ্গুর, আনারস, কিউই ইত্যাদি ফল আসে তাদের দোকানে। বেচা-কেনাও ভালো।
আর এভাবেই বহু বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের বিশাল এক মাধ্যমে পরিণত হয়েছে সুলাইবিয়ার কেন্দ্রীয় ফল ও সবজির বাজার।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
জেডআর/এএসআর
** পরিবর্তনের দূত মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দিন
** কুয়েতে মানবতার ফেরিওয়ালারা!
** সততা আর নিষ্ঠা থাকলে ঠেকায় কে?
** মরুর বুকে বুকভরা নিঃশ্বাস
** শ্রমিকদের মাথার মুকুট আব্দুর রাজ্জাক
** আরব সাগর থেকে হিমেল বাতাসে ভর করে এলো ছন্দ
** মরুর কুয়েত সবুজ চাদরে ঢাকছেন নাফিস জাহান
** ফেব্রুয়ারিতেই খুলনার মারুফের জীবনে আসছে পূর্ণতা!
** কুয়েতে গুলশান!
** কুয়েতের অ্যাম্বাসেডর!
** জন্ম কুয়েতে, হৃদয় বাংলাদেশের
** সূর্য ওঠার আগেই ঘুম ভাঙে চট্টগ্রামের শাহজাহানের
** ধূসর মরুভূমিতে সবুজ স্বপ্ন!
** ফেসবুক বন্ধ, খুললো জুতা!
** লেট বিমান!