খালেদিয়া (কুয়েত) থেকে: মরেও শান্তি নেই! ‘গলাকাটা’ পাসপোর্টে কুয়েতে এসে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেও মরুভূমির দেশ কুয়েত থেকে বিদায় নিতে পারছেন না হতভাগ্য দুই বাংলাদেশি। একজনের তিন মাস, অন্যজনের লাশ দুই মাস ধরে হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকলেও মেলেনি দেশে ফেরার ছাড়পত্র!
সাত দিনের বেশি সময় প্রবাসীদের মরদেহ কুয়েতে রাখা যাবে না।
কীভাবে? ‘অন্যজনের আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) নিয়ে তারা এ দেশে এসেছিলেন। যদিও বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক ও স্পর্শকাতর। জালিয়াতির কারণে নিজেরাই ফেঁসে গেছেন নিজেদের জালে’- যোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।
এদের মধ্যে রিগ্গা এলাকার আদান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৬ অক্টোবর মারা যান নারায়ণগঞ্জের আরাফাত আলী (৪৪)। প্রথমে তার কোনো স্থানীয় পরিচয় (লোকাল আইডি) না থাকায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে লাশ নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মরদেহের আঙুলের ছাপ নিয়েও তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
পরে মৃত ব্যক্তির সহকর্মী আনোয়ার হোসেন তাকে আরাফাত আলী হিসেবে শনাক্ত করলেও সঠিক পরিচয় না থাকায় হাসপাতাল থেকে লাশ ছাড়িয়ে আনা যায়নি।
আনোয়ারের দেওয়া তথ্য মতে আরাফাত আলীর বাবার নাম সিরাজ উদ্দিন। তিনি নারায়ণগঞ্জের কুঁড়েরপাড় আলীর টেক গ্রামের বাসিন্দা।
অন্যদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ আগস্ট সাবা হাসপাতালে মারা যান মোহাম্মদ আলী পরিচয়ে ভর্তি হওয়া আনন্দ মন্ডল (৫৫)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইডি দেখে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ‘আলীর’ মৃত্যুর খবর জানালে কর্তৃপক্ষ বিস্মিত হয়। তারা জানায়, আলী বেঁচে আছে এবং কাজ করছেন।
পরে জানা যায়, মৃত ব্যক্তি আলীর আইডি চুরি করে তার পরিচয় দিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত আনন্দ মন্ডল নামটুকু ছাড়া তার আর কোনো তথ্যই জানা যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কল্যাণ সহকারী তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে আমরা এখানকার উজারা সাহার (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) সাথে কাজ করছি। একজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও অন্যজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি এখনো।
রাষ্ট্রদূত আসহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় দুটি মরদেহ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দূতাবাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তিনি জানান, পরিচয় সঠিক হলে সাত দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মরদেহ দেশে পাঠানো হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। প্রথমত জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তা যেমন বাংলাদেশের জন্যে দুঃখজনক তেমনি মরদেহ দেশে ফেরত না যাওয়ায় অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে তাদের পরিবার।
পরিচয় নিশ্চিত হলে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে দেরিতে হলেও লাশ দেশে পাঠানো সম্ভব। কিন্তু যার নাম ছাড়া অন্য কোনো পরিচয় মেলেনি, তার মরদেহ দেশে কোন ঠিকানায় কীভাবে পাঠানো সম্ভব?- যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
জেডআর/এমজেএফ/