ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

রেসকোর্সে আত্মসমর্পণ করা রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
রেসকোর্সে আত্মসমর্পণ করা রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে টাঙ্গাইলের দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

দুই আসামির মধ্যে একজন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদর বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করেন।

১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন।

বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির কো-অর্ডিনেটর মো. সানাউল হক।

এটি তদন্ত সংস্থার ৮৭তম প্রতিবেদন।

এ মামলায় আসামিরা হলেন, টাঙ্গাইল গোপালপুর উপজেলার বেড়াডাকুরী গ্রামের সবুর মাস্টারের ছেলে রাজাকার কমান্ডার কোহিনুর ওরফে মনিরুজ্জামান কোহিনুর (৭০)।

অপরজন হলেন, গোপালপুর উপজেলার চাতুটিয়ার ছবর আলীর ছেলে রাজাকার আলমগীর ওরফে শা.আ.ম আলমগীর তালুকদার (৬৭)। রাজাকার আলমগীরের রাজনৈতিক পরিচয়ে বলা হয়েছে তিনি জামায়াতের সমর্থক।

এই দুই আসামি গত ৩ মার্চ থেকে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোহিনুর রাজাকার সম্পর্কে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া ও ভারতীয় তথা যৌথ বাহিনীর অভিযানে টাঙ্গাইল জেলা মুক্ত হয়। টাঙ্গাইল জেলা আলবদর কমান্ডার মনিরুজ্জামান কোহিনুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পশ্চাৎপসারণ করে ঢাকায় আশ্রয় নেন। ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদর বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সে খাঁন সেনাদের সঙ্গে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। শিমলা চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। এবং পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে তিনি জাপান যান। ২০০২ সালে একটি মহলের যোগসাজশে কৌশলে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে জানা যায় তিনি মুসলিম লীগের সমর্থক।

এই দুই আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে-

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৮ জুন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুসলিম উদ্দিন মিয়া ওরফে মুসলিম মাস্টারকে রাজাকার কোহিনুর এবং তার সহযোগী রাজাকারেরা নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ গুম করে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাজাকার কোহিনুর অন্যান্য রাজাকারসহ পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে মুসলিম মাস্টারের বাড়ি পুড়িয়ে দেন। একই দিন মুসলিম মাস্টারের শশুড়বাড়ি গিয়ে তার দুই মেয়েকে আর্মিদের হাতে তুলে দিতে বলেন। তাদের না পেয়ে ওই বাড়ি থেকে আবুল মনসু মোহাম্মদ মাজহারুল হাসান তালুকদার নামে একজনকে তুলে নিয়ে যান। ১১ ডিসেম্বর তাকে কাদেরিয়া বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার কোহিনুর ও আলমগীর হানাদার বাহিনীর সহায়তায় শাহীন হাওলাদার, শহীদ দুদু ফকির, শহীদ আমজাত ফকিরদের তাদের বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করেন এবং মোছা. সমলা বেগমকে উরুতে গুলি করে জখম করেন। এরপর তারা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে যাকে যেখানে পান গুলি করেন। মুক্তিযোদ্ধা মনে করে তারা ৪৫ নিরস্ত্র লোককে গুলি করে হত্যা করেন।

একদিন তারা মাহমুদপুর থেকে পানকাতা গ্রামের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৭জন গ্রামবাসিকে হত্যা করেন এবং ২ হাজার ৫৩০টি বাড়ির মালামাল লুট করে অগ্নিসংযোগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২
ইএস/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।