ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজের অপসারণ দাবি আইনজীবীদের 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজের অপসারণ দাবি আইনজীবীদের 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আইনজীবী ও বিচারবিভাগীয় কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিজিএম আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

বুধবার (০৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই একের পর এক পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি করেন তারা।

এতে করে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সকাল ৯টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আদালতে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।  

এসময় তারা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারককে (জেলা জজ) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, বিচারককে প্রাণনাশের হুমকি, বিচারকাজে নগ্ন হস্তক্ষেপ, আদালতের কর্মচারীদের মারধর, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। সেই সঙ্গে তারা জেলা বিচারবিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন বুধবার থেকে আদালতের বিভিন্ন প্রবেশ দ্বারে তালা ঝুলিয়ে জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করে। এতে প্রচণ্ড শীতে জেলার দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচরাপ্রার্থীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হন।  

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে গত ১ জানুয়ারি থেকে ওই আদালত বর্জন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট বিচারকরা নিজেদের মধ্যে সভা করেন। ওই দিন নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে বুধবার সকালে বিচারবিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি শুরু করলে বিচারাঙ্গনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।  

একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত গেল ১ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিরোধ সৃষ্টি হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুসারে মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। এ ঘটনায় আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যেও বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। তারা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মঙ্গলবার বিচারবিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন সভা করে বুধবার থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে মানববন্ধন চলাকালে কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কাজী উজ্জ্বল ইসলাম বলেন, বিচার কাজে নগ্ন হস্তক্ষেপ, এজলাশে ঢুকে নথি ছিনিয়ে নেওয়া, কর্মচারীদের মারধর করার প্রতিবাদে কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আমরা এ মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করেছি।  

এদিকে সকালে শত শত আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে এসে বিচারবিভাগীয় কর্মচারীদের মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এসময় শত শত আইনজীবী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয় ব্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে জেলা জজ শারমিন নিগারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী তানভীর ভূঁইয়া বিচার বিভাগীয় কর্মচারী ইউনিয়নের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা আইনমন্ত্রী ও আইন সচিবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখনো কোনো কর্মসূচি দেইনি। পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হলে জেলা জজের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আদালত বর্জন করতে বাধ্য হব। তাদের অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। মূলত জাল স্ট্যাম্প, জালিয়াতির উৎস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেওয়ায় ঘুষখোর ও ঘুষখোরের মদদদাতা আদলতের নাজির মুমিনকে রক্ষায় এ কর্মসূজি পালন করছেন আদালতের কর্মচারীরা।  

তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবি করেন।  

এদিকে সন্ধ্যায় জেলা আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরি রুমে এক জরুরি সভা করে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ জেলা জজ শারমিন নিগার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল হকের অপসারণের দাবিতে তিনদিনের জন্য সব কোর্ট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।